প্রিন্ট সংস্করণ
০০:০০, ১৬ আগস্ট, ২০২৫
পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমরা শয়তানের (ইবলিসের) পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।’ (সুরা বাকারা : ১৬৮)। যদিও ইবলিসকে চর্মচক্ষে দেখার কোনো প্রমাণ নেই, এমনকি অনেক নবী-রাসুলের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ ঘটলেও আসল রূপে নয়, তবুও সে মানুষের প্রধান শত্রু। প্রশ্ন জাগে, অদৃশ্য হয়েও কীভাবে সে প্রকাশ্য শত্রু?
ইমাম রাজি (রহ.)-এর মতে, ইবলিসের অভিশপ্ত হওয়ার পর সাতটি বিষয়ে তার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা এবং আল্লাহর কাছে করা অঙ্গীকারই তাকে প্রকাশ্য শত্রুতে পরিণত করেছে। সে বলেছিল, আল্লাহর অধিকাংশ বান্দাই অকৃতজ্ঞ হবে এবং সে তাদের জাহান্নামে নিয়ে যাবে। এই সাতটি প্রতিজ্ঞার মধ্যে চারটি বিষয় সুরা নিসার ১১৯ নম্বর আয়াতে বিবৃত হয়েছে। ইবলিস ঘোষণা করেছে, সে মানুষকে পথভ্রষ্ট করবে, মিথ্যা আশ্বাস দেবে, পশুর কান ছিদ্র করার আদেশ করবে এবং আল্লাহর সৃষ্টিকে পরিবর্তন করতে প্ররোচিত করবে।
অধিকাংশ মুফাসসিরদের মতে, ‘আল্লাহর সৃষ্টি পরিবর্তন’ এর অর্থ হলো আল্লাহ মানুষকে যে স্বাভাবিক অবয়বে সৃষ্টি করেছেন, বিকৃত সৌন্দর্যের নামে অথবা শয়তানের প্ররোচনায় সেই স্বাভাবিকতাকে বিনষ্ট করা। যেমন- অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পুরুষত্বহীন করা, নারীদের পরচুলা ব্যবহার করা অথবা পশুর কান ছিদ্র করা ইত্যাদি।
বর্তমান সময়ে এই সৃষ্টিগত বিকৃতির ভয়াবহ রূপ দেখা যায় ট্রান্সজেন্ডারের ধারণায়। গভীরভাবে চিন্তা করলে বোঝা যায়, এটি শয়তানের সুদূরপ্রসারী এজেন্ডারই বাস্তবায়ন।
মহান স্রষ্টা যেখানে ঘোষণা করেছেন, ‘মানুষকে আল্লাহ যেই স্বভাব-প্রকৃতির ওপর সৃষ্টি করছেন তার নির্ধারক একমাত্র আল্লাহ আর আল্লাহর সৃষ্টিতে (যেই স্বভাব-প্রকৃতি দিয়ে তিনি সৃষ্টি করেছেন) কোনো পরিবর্তন নেই।’ (সুরা রুম : ৩০)।
এই সৃষ্টিগত স্বভাব শুধু বাহ্যিক নয়, বরং অভ্যন্তরীণ মনস্তত্ত্বের ওপরও প্রযোজ্য। কোনো পুরুষের মধ্যে যেমন নারীসুলভ আচরণ স্বাভাবিক নয়, তেমনি কোনো নারীর মধ্যে পুরুষালি স্বভাবও স্বাভাবিক নয়।
মক্কার এক কাফের জামিল ইবনু মামার মিথ্যা দাবি করত যে তার বুকের ভেতরে দুটি হৃদয় রয়েছে, তাই সে নবি মুহাম্মাদ (সা.) থেকে অধিক জ্ঞানী। আল্লাহ তার এই মিথ্যাচার খণ্ডন করে বলেন, ‘আল্লাহ একজন ব্যক্তির বুকের মধ্যে দুটি হৃদয় সৃষ্টি করেননি।’ (সুরা আহজাব : ৪)।
একই যুক্তিতে, আল্লাহ যাকে পুরুষের অবয়বে সৃষ্টি করেছেন, তার মধ্যে নারীর চাহিদা থাকা স্বাভাবিক নয়। বিপরীতভাবে, নারীর মধ্যে পুরুষালি আকাঙ্ক্ষা বিকৃত রুচি ছাড়া আর কিছুই নয়। সৃষ্টিকুলের এই স্বাভাবিকতাকে পরিবর্তন করা আল্লাহর নীতির পরিপন্থি।
লেখক : আলেম ও মাদরাসা শিক্ষক