ঢাকা রোববার, ১৫ জুন ২০২৫, ১ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

নাব্য কমে যাওয়ায় যমুনা নদী এখন ফসলের মাঠ

নাব্য কমে যাওয়ায় যমুনা নদী এখন ফসলের মাঠ

যমুনার বুক জুড়ে এখন ইরি বোরোসহ বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ করা হচ্ছে। নাব্য কমে যাওয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এতে খরচ কম লাভজনক মৌসুমি চাষাবাদ শুরু করছে কৃষকেরা। প্রতি বছরের ন্যায় এবারো ইরি বোরো ধান, বাদাম, সরিষা, ভুট্টা, কাউন, তিলসহ বিভিন্ন ফসল চাষাবাদে ঝুঁকে পড়েছে তারা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, কয়েক যুগ আগেও যমুনা নদীর তীব্রতা ছিল ভয়াবহ। আর সেই যমুনার ভয়াবহ ভাঙ্গনে বহু পরিবার নিঃস্ব হয়েছে এবং অনেক পরিবার এখনও মানবেতর জীবনযাপন করছে। বর্তমানে বিভিন্ন স্থানে এ ভাঙন কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। সেইসাথে কয়েক বছর ধরে যমুনার গতিপথ পরিবর্তনের কারণে নাব্য ক্রমশ কমে যাচ্ছে। এ কারণেই সৃষ্টি হয়েছে েযমুনার বুক জুড়ে চর আর চর এবং কমে যাচ্ছে যমুনার সৌন্দর্য ও আয়তন। বিশেষ করে সিরাজগঞ্জের যমুনার তীরবর্তী শাহজাদপুর, চৌহালী, বেলকুচি, কাজিপুর ও সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার চরাঞ্চল জুড়ে বিভিন্ন স্থানে আরো চর পরিণত হচ্ছে। এসব চর ও চরের তলদেশ জেগে ওঠা ঘিরে এখন চাষাবাদও শুরু হয়েছে। আর সেখানে গড়ে উঠেছে গরু মহিষের খামার এবং চর জুড়ে শোভা পাচ্ছে ইরি বোরোসহ বিভিন্ন ফসলের চাষ। এতে পাল্টে যাচ্ছে সিরাজগঞ্জের চরাঞ্চলের মানুষের অর্থনীতি।

এদিকে বিশিষ্টজনের মতে, যমুনা নদীর বুকে যমুনা সেতু নির্মিত হওয়ার পর থেকে এ নাব্যতা কমতে দেখা দিয়েছে। যমুনার বুক এখন ফসলে ভরা। জেগে উঠা ধু-ধু বালুচরে এখন উঠতি বোর ধানের দৃশ্য। এছাড়া চলতি বছরে জেগে উঠা চরে স্থানীয় বোরো, গম, মসুর, খেসারীসহ রবি শস্যগুলো আবাদ হয়েছে। সে সময় যমুনা নদীতে ইলিশ, চিংড়ি, বোয়াল, পাবদা প্রায় বিলুপ্তির পথে। এ যমুনায় বিভিন্ন প্রজাতের মাছ ধরে যারা জীবিকা নির্বাহ করত তারা অন্য পেশায় নিজেদেরকে নিয়োজিত করেছে। নৌকা যোগে অল্প সময়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াতের সুবিধা থেকে এখন পোহাতে হচ্ছে সীমাহীন দুর্ভোগ। চর ও ডুবোচর জনিত কারণেই এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। অনেক কৃষক ও জেলে বলছেন, প্রমত্তা যমুনা আজ হাহাকার বালু চর। এমনকি স্রোতের কারণে নৌকা বাইতেও সাহস পাইতাম না। সেখানে আজ নৌকার হালও ধরতে হয় না। এমনকি যে ঘাটে বড় বড় ফেরি বাঁধা থাকত সেখানে আজ গরু বাঁধা থাকে। যমুনার বুক জুড়ে এখন চাষ হয়ে থাকে বিভিন্ন ফসলের এবং সেই যমুনা নদীতে এখন মাছের আকাল। সবমিলে যমুনার বাহার ও সৌন্দর্যের দৃশ্য দিন দিন কমে যাচ্ছে।

কৃষিবিদরা বলছেন, যমুনার নাব্যতা কমে যাওয়ায় যমুনার বুক জুড়ে বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ হচ্ছে। এতে পাল্টে যাচ্ছে চরাঞ্চলের মানুষের অর্থনীতি। এসব চাষাবাদে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, বর্তমানে যমুনার গতিপথ পরিবর্তনের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অবশ্য গতিপথ ফেরাতে সম্প্রতি যমুনা নদীর বিভিন্ন চ্যানেলে ড্রেজিং কাজও করা হয়েছে। এ ড্রেজিংয়ে সে সময় যমুনার পথ চলাচলে কিছুটা সচল হয়েছিল। বর্তমানে নানাবিধ কারণে এ যমুনার নাব্যতা ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। তবে যমুনার চ্যানেলগুলোতে ড্রেজিং করলে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে আসতে পারে বলে তারা উল্লেখ করেন।

যমুনা নদী,নাব্য
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত