ঢাকা শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

দুমকিতে সূর্যমুখীর দিগন্ত ছোঁয়া হাসি

দুমকিতে সূর্যমুখীর দিগন্ত ছোঁয়া হাসি

দুমকি (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি

পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার মাঠে মাঠে এখন সূর্যমুখীর ঝলমলে হাসি। সবুজ পাতার ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে সোনালি ফুল। ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে পরিবেশ ও ফুল প্রেমীদের সূর্যমুখী ফুলের সাথে সেলফি তোলা। আর তাদের পদচারণায় মুখর গ্রামীণ জনপদের সূর্যমুখীর ক্ষেত খামার। তবে শুধু সৌন্দর্য‌্যই নয়, এই ফুল এখন কৃষকদের কাছে এক ভরসার নাম। আবার আগাম জাতের সূর্যমুখী পরিপক্ব হতে শুরু করেছে। যৌবন জোয়ারে নিজেকে বিলিয়ে দিতে ব্যস্ত যেন প্রকৃতির মাঝে।

ভোজ্যতেলের ক্রমবর্ধমান চাহিদা, কম খরচে চাষাবাদ ও অল্প সময়ে ফলন এই তিনটি মূল কারণে সূর্যমুখীর দিকে ঝুঁকছেন পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার কৃষকেরা। সূর্যমুখী বীজ থেকে যে তেল পাওয়া যায়, তা অত্যন্ত মানসম্পন্ন ও স্বাস্থ্যকর। এতে রয়েছে ভিটামিন-ই, ও মেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখতে সাহায্য করে, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং ত্বকের জন্যও উপকারী। রান্নার কাজে সহজে ব্যবহারযোগ্য এই তেল সহজপাচ্য হওয়ায় এখন ভোক্তাদের কাছেও চাহিদাসম্পন্ন হয়ে উঠেছে।

দুমকি উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে সূর্যমুখী চাষে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৪৫ হেক্টর। বাস্তবে চাষাবাদ হয়েছে তার বেশি জমিতে। উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে ছড়িয়ে ছিটিয়ে সূর্যমুখী চাষ হলেও শ্রীরামপুর ইউনিয়নের জামলা, কোহারজোড়, দক্ষিণ শ্রীরামপুর, উত্তর শ্রীরামপুর, রাজাখালী, চরবয়ড়ার জমিতে বেশি চাষাবাদ হয়েছে।

শ্রীরামপুর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের জামলা এলাকার কৃষক ধলু হাওলাদার বলেন, তিনি এ বছর ভোজ্যতেলের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে আমন ধান পরবর্তীতে ৭০ শতাংশের ২ প্লট জমিতে উপজেলার জামলা কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরামর্শক্রমে বারি সুর্যমূখী-২ জাতের সূর্যমুখী চাষ করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন বেশ ভালো হয়েছে।

কৃষক বাবুল খান, মনির হোসেন, হালিমা বেগম ও মানসুরা বেগম জানান, বরাবরের মতো এবারও হাইসান-৩৬ জাতের সূর্যমুখী চাষ করেছেন। গাছে বেশ ভালো ফুল ফুটেছে। তবে এ বছর বৃষ্টি না হওয়ায় ঠিকমতো পানি সেচ দেয়া হয়নি। সবকিছু ঠিক থাকলে নিজেদের চাহিদা পূরণ করে বিক্রি করা যাবে এবং এর শুকনো গাছ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করতে পারব। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে উন্নত জাতের বীজ ও সার এবং পরামর্শ অনুযায়ী পরিচর্যা করছি।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ইসমিতা আক্তার সোনিয়া 'আলোকিত বাংলাদেশ'কে বলেন, সূর্যমুখীর বীজ থেকে যে তেল হয় তা মানসম্পন্ন ও স্বাস্থ্যসম্মত। সূর্যমুখী থেকে ভোজ্যতেলের চাহিদা পূরণ, গো-খাদ্য হিসেবে খৈল এবং শুকনো গাছ জ্বালানি সহ নানা কাজে ব্যবহার করা যায়। ভোজ্যতেলের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে উপজেলার কৃষকদের উৎসাহিত করে যাচ্ছেন। চলতি মৌসুমে কৃষি প্রণোদনার আওতায় দুই শতাধিক কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে সূর্যমুখীর বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ নিয়মিত সূর্যমুখী চাষে প্রদর্শনী প্লট তদারকি ও করণীয় বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন।

তিনি আরও জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর কৃষকরা লাভবান হবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

দুমকিতে সূর্যমুখীর দিগন্ত ছোঁয়া হাসি
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত