মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার বাঘুটিয়া ইউনিয়নে যমুনা নদীর পানি বাড়ার সাথে সাথেই তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। নদীর আগ্রাসী স্রোতের মুখে নতুন করে ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে ১৫ থেকে ২০টি গ্রামের হাজার হাজার মানুষের বসতভিটা, বিস্তীর্ণ শস্যক্ষেত, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাইস্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদ ও স্থানীয় বাজারঘাট।
স্থানীয়দের সূত্রে জানা যায়, বাঘুটিয়া বাজার থেকে কাশিদয়রামপুর এবং ইসলামপুর ঘেড়াঘাট থেকে রাহাতপুর ঘোষবাড়ি খাল পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকায় ভাঙনের তীব্রতা ক্রমশ বাড়ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নদীর তীরবর্তী বাসাইল, মুন্সিকান্দি, রাহাতপুর গ্রামগুলোতে আতঙ্ক বিরাজ করছে। একের পর এক বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। চোখের সামনে স্বপ্নের ঘরবাড়ি, ফসলের ক্ষেত নদীতে ভেঙে যাওয়ার এমন অসহায় দৃশ্য বাকরুদ্ধ করে তুলেছে স্থানীয় বাসিন্দাদের।
বাড়ইপাড়া গ্রামের বাসিন্দা রিনা বেগম জানান, এর আগেও তার সাত থেকে আটবার বাড়ি ভেঙেছে। বর্তমানে তিনি এই গ্রামে আশ্রয় নিয়েছেন। সামান্য এই বসতভিটাটুকু ছাড়া তাদের আর কোন জমি নেই। কান্নারত কণ্ঠে তিনি বলেন, এটাও যদি ভেঙে যায়, তাহলে আমরা কোথায় গিয়ে দাঁড়াব? সরকার যদি নদীটা একটু বেঁধে দিত, তাহলে আমাদের আর কিছু চাওয়ার থাকত না।
মুন্সিকান্দি গ্রামের আব্দুল বাতেন মিয়া বলেন, পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে ভাঙনের তীব্রতা বাড়ছে। গত বছর কিছু জিও ব্যাগ ফেলা হলেও তা পর্যাপ্ত ছিল না। মুন্সিকান্দি থেকে আমার বাড়ি ভেঙে গেছে, এখন বাড়ইপাড়ায় আছি। এখানে স্কুল, মাদ্রাসা রয়েছে, সেগুলোও এখন ঝুঁকিপূর্ণ। আগুনে পুড়লে ভিটা তবুও থাকে, আমাদের তাও নেই। একদিকে অভাব, অন্যদিকে ভিটেমাটি হারানোর ভয় আমাদেরকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে।
একই গ্রামের আব্দুল হালিম শেখ ও মোতালেব খান বলেন, নদীর পাড়েই আমাদের বাড়ি। নদীতে স্রোত শুরু হয়েছে। এখনই যদি ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, আমরা একেবারে নিঃস্ব হয়ে যাব।
বাঘুটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম আমজাদ হোসেন বলেন, ইসলামপুর ঘোড়াঘাট থেকে রাহাতপুর ঘোষবাড়ি খাল এবং বাঘুটিয়া বাজার থেকে কাশিদয়রামপুর পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকা ভাঙনের চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। নদীর উভয় পাড়ের বেশ কয়েকটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উচ্চ বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, মসজিদ ও বাজার যেকোনো মুহূর্তে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে। এই এলাকার মানুষের জানমাল রক্ষায় জরুরি ভিত্তিতে ভাঙন প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমি কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড মানিকগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আক্তারুজ্জামান বলেন, ইতোমধ্যেই বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। ভাঙন শুরু হওয়ার আগেই জনগণের জন্য কিছু করা সম্ভব হবে বলে আশা করছি।