উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিভিন্ন এনজিও সংস্থায় কর্মরত ১২৫০ স্থানীয় হোষ্ট টিচারদেরকে কোন ঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ একযোগে গণ ছাটাইয়ের প্রতিবাদে বিক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে স্থানীয়রা।
শনিবার (৩১ মে) সারা দিন উখিয়া শহীদ মিনার চত্বরে অন্যায়ভাবে চাকুরিচ্যুত করার প্রতিবাদে ও পুনরায় চাকরি পুনর্বহাল দাবিতে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে বক্তারা। দাবি পূরণ না হলে আইএনজিও এবং স্থানীয় এনজিও'র কোন গাড়ি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঢুকতে দেওয়া হবে না।
বিক্ষোভকারী শিক্ষকরা জানান, ব্র্যাক, কোডেক, ফ্রেন্ডশিপ, মুক্তি, ব্রাক, কোস্ট ফাউন্ডেশন ও জেসিএফসহ বিভিন্ন এনজিও সংস্থা রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য পরিচালিত স্কুলগুলোতে স্থানীয় ও রোহিঙ্গা উভয় সম্প্রদায়ের শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছিল। তবে হঠাৎ করে ‘অর্থ সংকটের’ কারণ দেখিয়ে শুধু স্থানীয় ১২৫০ জন শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করা হয়, তবে সকল রোহিঙ্গা শিক্ষকরা বহাল থাকবে। অভিযোগ রয়েছে, আরও প্রায় ৩ হাজার শিক্ষককে ছাঁটাইয়ের প্রস্তুতি চলছে।
এদিকে চাকরিচ্যুতের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চাকরি পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। অন্যথায় রবিবার থেকে উখিয়া থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাজ পরিচালনাকারী কোনও এনজিও ও আন্তর্জাতিক সংস্থার গাড়ি প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
ভুক্তভোগী শিক্ষক মোহাম্মদ শামীম হোসেন বলেন, ‘রোহিঙ্গা শিক্ষকরা যদি কাজ করতে পারে, তাহলে আমরা কেন পারব না? অথচ শুধু আমাদেরই চাকরিচ্যুত করা হলো। এ বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্ত আমরা মেনে নেব না।’
উখিয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সরওয়ার জাহান চৌধুরি বলেন, ‘তহবিল সংকট থাকলে স্থানীয়দের বাদ দিয়ে রোহিঙ্গাদের জন্য শিক্ষা কার্যক্রম চালানো যৌক্তিক নয়। বরং শিক্ষা প্রকল্পই বন্ধ করে দেওয়া উচিত।
উখিয়া উপজেলা কৃষক দলের সদস্য সচিব সাদমান জামী চৌধুরি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ফান্ড সংকট যুক্তি দেখিয়ে স্থানীয় হোষ্ট টিচারদেরকে চাকুরিচ্যুত করা অন্যায় ও অমানবিক। স্থানীয়দের ন্যায্য অধিকার আদায়ে আন্দোলন গড়ে তুলা হবে।
তরুণ আইনবিদ ব্যারিস্টার সাফাত ফারদিন রামীম, তার ভেরিফাই ফেসবুকে লিখেছেন, হোস্ট এরিয়া উখিয়া-টেকনাফ মগের মুল্লুক নয় , যে যখন যা খুশি সিদ্ধান্ত নেবেন। হোস্ট কমিউনিটির ৪০০০ টিচারদের অন্যায়ভাবে অপসারণের চেষ্টা করা হলে আমরা ছাড় দেব না। সব কিছুতে ফান্ড থাকে হোস্ট কমিউনিটির বেলায় শুধু ফান্ড থাকে না এবং ফান্ড সংকট দেখা দেয় , এই খেলা বন্ধ করতে হবে।
পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানান, হোস্ট কমিউনিটির শিক্ষকদের চাকরিচ্যুত করা হবে, অপরদিকে রোহিঙ্গা শিক্ষকরা চাকরিতে বহাল থাকবে সেটা হবে না। ফান্ড সংকট দেখা দিলে তো সকলের জন্য একই নিয়ম হওয়ার কথা। রোহিঙ্গা শিক্ষকরা কি বেতন ছাড়া চাকরি করে নাকি?
এ বিষয়ে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ কামরুল হোসেন চৌধুরী বলেন, ইউনিসেফের অর্থায়নে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন এনজিও ক্যাম্পে শিক্ষা প্রকল্প বাস্তবায়ন করে আসছে। কিন্তু অর্থ সংকটের কারণে শিক্ষা প্রকল্পটি বন্ধ করার প্রক্রিয়া চলছে। এ বিষয়টি ইউনিসেফ চিঠি যোগে সরকারকে অবহিত করেছেন। আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত প্রকল্প চালানোর অর্থ তাদের রয়েছে বলে চিঠিতে বলা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে কিছু সংখ্যক শিক্ষক চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। এর প্রতিবাদে যারা আন্দোলন করছে তারা ইতিমধ্যে তার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদেরকে বিষয়টি বিস্তারিত জানানোও হয়েছে।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) মিজানুর রহমান বলেন, অর্থ সংকটের কারণে শিক্ষা প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে শিক্ষকদের চাকরিচ্যুত করা হচ্ছে।