অনলাইন সংস্করণ
২১:০৮, ০৯ আগস্ট, ২০২৫
গাজীপুরে দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ পত্রিকার সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যার প্রতিবাদে এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে দেশব্যাপী সাংবাদিক সমাজ মানববন্ধন, বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সভা করেছে।
শনিবার (৯ আগস্ট) দেশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা ও প্রেসক্লাব চত্বরে এসব কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
পটিয়া প্রেসক্লাবের মানববন্ধন
শনিবার বিকেলে পটিয়া থানার মোড় চত্বরে পটিয়া প্রেস ক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিউল আলম মাস্টারের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম কাদের এর সঞ্চালনায় এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
এই মানববন্ধনে দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ইদ্রিস মিয়া বলেন, সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও হত্যাকাণ্ড শুধু ব্যক্তিকে নয়, পুরো গণমাধ্যম ও গণতন্ত্রকে আঘাত করে। দেশে মুক্ত সাংবাদিকতা টিকিয়ে রাখতে হলে সাংবাদিক সুরক্ষা আইন অবিলম্বে কার্যকর করতে হবে।
দক্ষিণ জেলা গনঅধিকার পরিষদের সভাপতি ডা. এমদাদুল হাসান বলেন, সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা প্রমাণ করে দেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আজ ভয়াবহভাবে সংকুচিত। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সাংবাদিকরা নিরাপদ না থাকলে জনগণের কণ্ঠস্বরও নিরাপদ থাকে না।
বক্তারা বলেন, সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন হত্যাকাণ্ড গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তার ওপর সরাসরি আঘাত। দেশে ধারাবাহিকভাবে সাংবাদিক নির্যাতন, মিথ্যা মামলা ও হয়রানির ঘটনা ঘটছে, যা গণতন্ত্রের জন্য গুরুতর হুমকি।
হাজীগঞ্জ প্রেসক্লাবের মানববন্ধন
চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ প্রেসক্লাবের আয়োজনে শনিবার বাদ যোহর হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদের মেইন গেটের সম্মুখে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভায় হাজীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি হাসান মাহমুদ এর সভাপতিত্বে এবং হাজীগঞ্জ সাংবাদিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি সাইফুল ইসলাম সিফাতের সঞ্চালনায় হাজীগঞ্জ প্রেসক্লাবের নেতৃবৃন্দ এবং স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকার সাংবাদিকবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
কক্সবাজারে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ
সাংবাদিক তুহিন হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে শনিবার দুপুর ১২টায় কক্সবাজার পৌরসভার সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজার (ক্র্যাক) এবং জেলার কর্মরত সাংবাদিকরা।
তারা একযোগে তুহিন হত্যার বিচারের দাবি জানিয়ে স্লোগান দেন— অস্ত্র দিয়ে কলম থামানো যাবে না এবং সত্যের জয় হবেই।
মানববন্ধনে সভাপতির বক্তব্যে সাংবাদিক জসিম উদ্দিন বলেন, প্রেস কাউন্সিল সাংবাদিকদের পাশে থাকে না। প্রেস কাউন্সিলের নামে ভণ্ডামিকে আমরা প্রশ্রয় দেব না। যে প্রেস কাউন্সিল সাংবাদিকের কোনো কাজে আসে না, সেই প্রেস কাউন্সিলের প্রতি ধিক্কার জানাই।
তিনি আরও বলেন, একজন সাংবাদিককে হত্যার পরও যদি রাষ্ট্র ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্রুত পদক্ষেপ না নেয়, তবে এটা গণতন্ত্রের জন্য ভয়ঙ্কর সংকেত। আমরা আজ ঐক্যবদ্ধ হয়েছি, এ হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
এসময় আরো অনেকেই বক্তব্য রাখেন। বক্তারা সাংবাদিক তুহিন হত্যার দ্রুত বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। পাশাপাশি সাংবাদিক সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, সাংবাদিকদের ওপর হামলা-মামলা বন্ধ এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিতে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ জোরদারের আহ্বান জানান।
সাতক্ষীরায় মানববন্ধন
সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের আয়োজনে শনিবার বেলা ১১টায় শহরের নিউ মার্কেট চত্বরে এ মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা বলেন, পুলিশের নিষ্ক্রিয়তায় আজকে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। পুলিশ জনগণের টাকায় বেতন নিচ্ছে অথচ সেবা দিতে পারছে না। জুলাই অভ্যুত্থানের পরে আমরা ভেবেছিলাম পুলিশের স্বভাব বদলাবে কিন্তু একটুও বদলায়নি। এখনো তারা ঘুষ খাচ্ছে, নানা অনিয়ম দুর্নীতি করছে।
বক্তারা এসময় গাজীপুরের সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনসহ সকল সাংবাদিক হত্যাকান্ডর বিচার দাবি করেন।
মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে জেলার বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
মৌলভীবাজার অনলাইন প্রেসক্লাবের প্রতিবাদ সভা
মৌলভীবাজার অনলাইন প্রেসক্লাবের উদ্যাগে চৌমোহনা চত্বরে সর্বস্থরের সাংবাদিকসহ নানা পেশার মানুষের অংশগ্রহণে প্রতিবাদ সভা শনিবার দুপুরে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মৌলভীবাজার অনলাইন প্রেসক্লাব এর সহ-সভাপতি জোসেপ আলী চৌধুরী (নয়া বঙ্গবাজার) এর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মশাহিদ আহমদ (আমাদের কন্ঠ) ও চিনু রঞ্জন তালুকদার (গণমুক্তি) এর যৌথ সঞ্চালনায় প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়।
সভায় বক্তারা বলেন, সারাদেশে সাংবাদিক খুন ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। গত ৭ আগষ্ট বৃহস্পতিবার এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করা হয় আসাদুজ্জামান তুহিনকে। অপরদিকে, অটোরিকশা চালকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের ভিডিও ধারণ করতে গিয়ে নগরীর সাহাপাড়া এলাকায় হামলার শিকার হন দৈনিক বাংলাদেশের আলো পত্রিকার রিপোর্টার আনোয়ার হোসেন। পাশেই পুলিশ সদস্যদের দেখা গেলেও তাৎক্ষণিকভাবে তারা এগিয়ে আসেনি। গুরুতর আহত অবস্থায় তিনি এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে যেমন প্রশ্ন উঠেছে, আবার গণমাধ্যমকর্মীদের নিরাপত্তা নিয়েও আতঙ্ক বিরাজ করছে।
বক্তারা মৌলভীবাজার শমসেরনগর রোডে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রুবেল হত্যার প্রতিবাদ জানান এবং আসামিকে গ্রেপ্তার করার দাবী জানান।
চাঁদপুরে মানববন্ধন
চাঁদপুরের সর্বস্তরের সাংবাদিকদের অংশগ্রহণে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। শনিবার বেলা ১১টায় চাঁদপুর প্রেসক্লাব প্রাঙ্গনে আয়োজিত মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন চাঁদপুর প্রেসক্লাব সভাপতি রহিম বাদশা।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গেলে সন্ত্রাসীরা নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করেন। আমরা এই হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও দ্রুত বিচার দাবী করছি। সম্প্রতি সময়ে মব সৃষ্টি করে সাংবাদিকদের পেশাগত কাজে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে। এই বিষয়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর আরো তৎপর হওয়া প্রয়োজন।
তারা আরো বলেন, সাংবাদিকরা সব সময় অন্যায়, অপরাধ, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজের বিরুদ্ধে লিখতে ও বলতে গিয়ে হত্যার এবং নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত একটি হত্যার বিচার দৃশ্যমান হয়নি। ইতোমধ্যে আলোচিত সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যাসহ অন্যান্য হত্যার বিচার না করায় সন্ত্রাসীরা এই ধরণের অপরাধ ঘটানোর সাহস দেখাচ্ছে।
রাজবাড়ীতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ
শনিবার বেলা সারে ১১টায় রাজবাড়ী প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে জেলায় কর্মরত সাংবাদিকদের ব্যানারে ঘণ্টাব্যাপী এ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধন শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, দেশে সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও হত্যাকাণ্ড ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে। সাংবাদিক নির্যাতন ও হত্যায় জড়িতদের আইনের আওতায় এনে দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান তারা।
গাইবান্ধা প্রেসক্লাবের মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে
গাইবান্ধার সাংবাদিকরা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, আর কোনো সাংবাদিক নিহত হওয়ার আগেই সারাদেশের সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ শক্তিতে দুর্বৃত্ত ও তাদের গডফাদারদের রুখে দেওয়া হবে। এ কারণে শুধু কলম বা ক্যামেরায় নয়, হাতে হাত রেখে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান তারা। গাইবান্ধার আইন-শৃঙ্খলার অবনতিতেও উদ্বেগ প্রকাশ করে সাংবাদিকরা।
গাইবান্ধা প্রেসক্লাবের আয়োজনে শনিবার দুপুরে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা এ কথা বলেন।
বক্তারা সাংবাদিক তুহিন হত্যাকাণ্ডের নিন্দা, প্রতিবাদ জানিয়ে অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ বিচার দাবি করেন। এছাড়াও বক্তারা সারাদেশে সাংবাদিক নির্যাতন বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে সাংবাদিকদের বিশেষ নিরাপত্তা প্রদান ও সাংবাদিক সুরক্ষা আইন প্রণয়নের জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান।
তাড়াইল উপজেলা প্রেসক্লাবের মানববন্ধন
শনিবার দুপুর ৩টায় তাড়াইল উপজেলা প্রেস ক্লাবের আয়োজনে উপজেলা পরিষদের সামনে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন, প্রেস ক্লাবের সভাপতি করেন মুকুট রঞ্জন দাস।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, সাংবাদিক তুহিনের হত্যা শুধু একজন সংবাদকর্মীর কণ্ঠরোধ নয়, এটি গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি। আমরা দ্রুত অপরাধীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানাচ্ছি। রাষ্ট্রের দায়িত্ব নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সাংবাদিকরা রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভের ভূমিকা পালন করেন। অপরাধের বিচার না হলে সমাজে নৈরাজ্য বৃদ্ধি পাবে।
বক্তারা আরও বলেন, যেখানে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নেই, সেখানে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন উঠবে। সাংবাদিক হত্যা গণতন্ত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার উপর আঘাত। বক্তারা অবিলম্বে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
নবীনগর প্রেসক্লাবের মানববন্ধন
শনিবার দুপুর ১টায় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন প্রেসক্লাব সভাপতি মোহাম্মদ হোসেন শান্তি এবং সঞ্চালনা করেন সাংবাদিক শাহনূর খান আলমগীর।
এসময় বক্তারা বলেন, তুহিন ছিলেন একজন সৎ ও সত্যনিষ্ঠ সংবাদকর্মী, যিনি দীর্ঘদিন নানা চাপ ও হুমকি উপেক্ষা করে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করেছেন। পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে, যা মুক্ত সাংবাদিকতার ওপর এক নির্মম আঘাত।
তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে আরও বলেন, তুহিন হত্যার বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হলে দেশব্যাপী সাংবাদিক সমাজ কঠোর আন্দোলনে নামবে। একইসঙ্গে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান তারা।
ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা প্রেসক্লাবের মানববন্ধন
শনিবার সকালে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা প্রেসক্লাবের আয়োজনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে প্রেসক্লাবের সাংবাদিক সদস্যরা ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অংশ নেন। বক্তারা তুহিন হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে দোষীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, সাংবাদিকরা রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। অথচ আজ সাংবাদিকদের কোন নিরাপত্তা নেই। চাঁদাবাজ, দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে যখনই সাংবাদিকরা সংবাদ প্রকাশ করেন তখনই সাংবাদিকদের হামলা-মামলা, হুমকি ও হত্যার শিকার হতে হয়। গত বৃহস্পতিবার গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তায় প্রকাশ্য দিবালোকে চাপাতি বাহিনী সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে যেভাবে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও জবাই করে হত্যা করেছে সেটি নতুন নয়।
এর আগে, আনোয়ার হোসেন নামে আরেক সাংবাদিককে পুলিশের সামনেই হাত-পা থেঁতলে দিয়েছে সন্ত্রাসী বাহিনী। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সারাদেশে সাংবাদিকদের উপর হামলা-মামলা, হুমকি ও হত্যার ঘটনায় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেন সাংবাদিকরা।
পীরগঞ্জে মানববন্ধন
শনিবার দুপুরে পীরগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন হয়।
এ সময় সাংবাদিকরা বলেন, দৈনিক প্রতিদিনের কাগজের গাজীপুরের স্টাফ রিপোর্টার আসাদুজ্জামান তুহিন পেশাগত দায়িত্ব পালন কালে সন্ত্রাসীদের হাতে নৃশংস হত্যাকান্ডের শিকার হয়। এ দায়িত্ব রাষ্ট্র এড়িয়ে যেতে পারে না। একই দিনে গাজীপুরে আরও এক সাংবাদিককে প্রকাশ্যে মারধর করে সন্ত্রাসীরা।
বক্তারা আরোও বলেন সারাদেশে সাংবাদিক হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনা যেভাবে বেড়ে চলছে, তা দেশের জন্য অশুভ সংকেত। সাংবাদিকরা দেশের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য ও দেশের মানুষের জন্য কাজ করেন। সাংবাদিক হত্যা ও সাংবাদিকদের উপর নির্যাতন অব্যাহত থাকলে থাকলে স্বাধীন মত প্রকাশ অসম্ভব হয়ে পড়বে। দেশের প্রকৃত গণতন্ত্র ব্যহত হবে, এসব ঘটনা স্বাধীন মত প্রকাশের ক্ষেত্রে বড় বাঁধা।
সভায় বক্তারা অবিলম্বে সাংবাদিক তুহিন হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত সকলের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দাবী জানান।
নোয়াখালীতে মানববন্ধন
শনিবার সকালে জেলার চৌমুহনী, কবিরহাট, মাইজদী ও সোনাইমুড়ীসহ বিভিন্নস্থানে পৃথকভাবে জেলা কর্মরত সাংবাদিক ও বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিকদের আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত নোয়াখালী টেলিভিশন সাংবাদিক ফোরাম ও মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি মানিক ভূঁইয়া।
বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের কবির হাট উপজেলার সভাপতি জহিরুল হক জহিরের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন নুর আলম বিপ্লব, আবদুল্লাহ সহ জেলা উপজেলার কর্মরত সাংবাদিকবৃন্দ।
মুন্সীগঞ্জে মানববন্ধন
শনিবার বেলা সাড়ে ১১ টায় শ্রীনগরের ডাকবাংলো মোড়ে এই মানববন্ধনে সাংবাদিকরা নির্মম হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ জানান।
মানববন্ধন থেকে বক্তারা সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের সভায় রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করবার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। সাংবাদিক তুহিন হত্যার বিচারের মাধ্যমে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপনের জন্য সাংবাদিকরা আহ্বান জানান সরকারের প্রতি।
এ সময়ে বক্তব্য রাখেন বিক্রমপুর টেলিভিশন জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও বিক্রমপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এম তরিকুল ইসলাম মাহবুব, শ্রীনগর উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. মোফাজ্জল হোসেনসহ সাংবাদিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
বক্তারা এ সময়ে তুহিনসহ সকল নির্যাতিত সাংবাদিকদের হত্যার প্রতিবাদ জানায়।
হোসেনপুরে মানববন্ধন
শনিবার সকালে হোসেনপুর উপজেলায় কর্মরত সাংবাদিকদের অংশগ্রহণে ঘন্টা ব্যাপী এ মানববন্ধন কর্মসূচী পালিত হয়।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, গাজীপুরের সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে যে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে তা অত্যন্ত বেদনাদদয়ক। এ ঘটনা স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য হুমকি স্বরূপ। আমরা এ হত্যাকান্ডসহ বিগত দিনে সকল সাংবাদিক হত্যার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। একই সঙ্গে দ্রুত সাংবাদিক তুহিন হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
বরগুনায় মানববন্ধন ও সমাবেশ
শনিবার বেলা ১১টায় বরগুনা প্রেসক্লাব চত্বরে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম বরগুনা জেলা শাখার সভাপতি জাহাঙ্গীর কবীর মৃধা। সঞ্চালনা করেন মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান তাপস।
বক্তারা বলেন, সারাদেশে প্রতিনিয়ত গণমাধ্যম কর্মীরা হত্যা, গুম, নির্যাতন, হামলা, মামলাসহ নানাধরনের নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন। নিপীড়ন প্রতিহত করতে হলে সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কোন বিকল্প নেই।
নেতৃবৃন্দ বলেন, সাংবাদিক নির্যাতনসহ সারাদেশের আইন শৃঙ্খলা ক্রমাগত অবনতির দিকে ধাবিত হচ্ছে। সাংবাদিকসসহ সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা চরম হুমকির মুখে। একটা সভ্য দেশে এ অবস্থা চলতে পারে না।
এসময় নেতৃবৃন্দ বর্তমান পরিস্থিতির দায়ভার নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেন।