মাছ ও বন্যপ্রাণীর প্রজনন মৌসুমে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত টানা তিন মাসের জন্য বনজীবী ও দর্শনার্থীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বন বিভাগ। এই সিদ্ধান্তের ফলে সুন্দরবনের অভ্যন্তরে কোলাহলমুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হবে, যা বন্যপ্রাণী ও জলজ প্রাণীর প্রজনন এবং বিচরণে সহায়ক হবে। বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, সুন্দরবনে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, মায়াবী হরিণ, বানর, কুমির, গুইসাপসহ ২৮৯ প্রজাতির স্থলজ প্রাণী, ২১৯ প্রজাতির জলজ প্রাণী, ২৯০ প্রজাতির পাখি এবং ৩৪৪ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। এর মধ্যে অনেক প্রজাতি বর্তমানে বিলুপ্তির হুমকিতে রয়েছে।
সুন্দরবনে দর্শনার্থীদের ভিড়, বনজীবীদের কর্মকাণ্ড ও চোরাকারবারিদের তৎপরতায় প্রাকৃতিক পরিবেশ বিঘ্নিত হওয়ায় প্রতিবছর এই মৌসুমে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে থাকে বন বিভাগ। তবে কেবল কাগজে-কলমে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে প্রকৃতি রক্ষা সম্ভব নয় বলে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিবেশকর্মীরা। শরণখোলা উপজেলার বাসিন্দা নাজমুল ইসলাম জানিয়েছেন, বৈধভাবে কেউ বনে প্রবেশ না করলেও অবৈধ চোরাকারবারিদের ঠেকানোই বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি মনে করেন, যদি এই প্রবেশ ঠেকানো যায়, তাহলে প্রকৃতি যেমন উপকৃত হবে, তেমনি বনজীবীরাও লাভবান হবেন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সদস্য মো. নূর আলম শেখ বলেন, নিষেধাজ্ঞার সময় কিছু অসাধু জেলে বন বিভাগের যোগসাজশে বনে প্রবেশ করে মাছ শিকার করে থাকে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড রোধে শুধু বন বিভাগ নয়, অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্কভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। তাঁর মতে, সুন্দরবন রক্ষার দায়িত্বে যারা আছেন, তাদের আরও আন্তরিক হয়ে কাজ করতে হবে।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. রেজাউল করীম চৌধুরী জানান, এই সময় সুন্দরবনের নদী-খালে থাকা অধিকাংশ মাছ ও জলজ প্রাণীর প্রজননকাল হওয়ায় টহল বাড়ানো হবে। তিনি মনে করেন, তিন মাসের এই নিষেধাজ্ঞা সফলভাবে কার্যকর হলে বনের প্রাণীকূল ও মৎস্যভাণ্ডার আরও সমৃদ্ধ হবে। উল্লেখ্য, ২০১৯ সাল থেকে প্রজনন মৌসুমে সুন্দরবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়ে আসছে। ২০২২ সালে তা ১ জুন থেকে কার্যকর করা হয়, এবং এই সময়ে কর্মহীন হয়ে পড়া জেলেদের জন্য মৎস্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়।