পঁচিশ বছর পেরুল, তালেবানের সঙ্গে ভারত সরকারের রাজনৈতিক যোগাযোগ শেষবার স্থাপিত হয়েছে। কাবুলে তখন ভারতের কোনো দূতাবাস পর্যন্ত ছিল না। তারপরও সে সময়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যশওয়ন্ত সিং তার আফগান কাউন্টারপার্ট মুল্লাহ ওয়াকিল আহমেদ মুত্তাওয়াকিলকে ফোন করতে বাধ্য হয়েছিলেন। কারণ ছিল ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি যাত্রীবোঝাই বিমান আইসি ৮১৪-কে ছিনতাই করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল কান্দাহার এয়ারপোর্টে। পণবন্দি সেই যাত্রীদের মুক্তি কোন শর্তে হতে পারে, তা নিয়ে ছিনতাইকারীদের সঙ্গে ভারতের আলোচনায় মধ্যস্থতা করেছিল তালেবান। সেই একটি বিশেষ সংকটের মুহূর্ত ছাড়া তালেবানের সঙ্গে কোনোরকম সম্পর্ক তৈরিতে ভারতের দিক থেকে তেমন আগ্রহ কখনোই ছিল না। এর অনেকগুলো কারণ রয়েছে।
নতুন সম্পর্কের সূচনা যেভাবে : ২০২১ সালের আগস্টে তালেবান যখন কাবুলের ক্ষমতায় ফিরে আসে, তখন ভারত সে দেশে তাদের সব দূতাবাস ও মিশনেই তালা ঝুলিয়ে দিতে বাধ্য হয়। আফগানিস্তানে ভারতের ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডও পুরোপুরি থমকে যায়। তবে বাস্তবতা হলো, এরপরও দু’পক্ষের মধ্যে টেকনিক্যাল ও কূটনৈতিক স্তরে একাধিকবার কথাবার্তা হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতেই ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দুবাইতে বৈঠকও করেছেন। কিন্তু সেই ১৯৯৯ সালের পর ভারত সরকারের কোনো মন্ত্রী তালেবান মন্ত্রীদের সঙ্গে প্রকাশ্যে যোগাযোগ করেছেন, এমন ঘটনা আর ঘটেনি। সেই নজিরও অবশেষে ভাঙল গত সপ্তাহের ১৫ মে ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষে যুদ্ধবিরতি ঘোষিত হওয়ার ঠিক পাঁচদিনের মাথায়। সেদিন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর তার এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করে জানালেন, ‘সন্ধ্যাবেলায় ভারপ্রাপ্ত আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির সঙ্গে খুব ভালো কথাবার্তা হলো।’ পহেলগামে সন্ত্রাসবাদী হামলায় তার নিন্দা জানানোকে ভারত যে গভীরভাবে সম্মান করে, সেটাও জানালেন জয়শঙ্কর। কোনো দেশের নাম না বলে এটাও উল্লেখ করলেন, ‘সম্প্রতি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন খবর ছড়িয়ে ভারত ও আফগানিস্তানের মধ্যে অবিশ্বাস তৈরি করার চেষ্টাকে আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী যেরকম দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন, তাকেও স্বাগত জানিয়েছি।’ এখানে তার অভিযোগের নিশানা যে ছিল পাকিস্তানের দিকে, তা বুঝতে অবশ্য কোনো অসুবিধা হয়নি। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই মুম্বাইতে আফগান কনস্যুলেটের পক্ষ থেকে টুইট করে জানানো হয়, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও কূটনৈতিক যোগাযোগকে কীভাবে এগিয়ে নেওয়া যায় এবং কীভাবে দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্যের প্রসার ঘটানো যায়, তা নিয়েও দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে আলোচনা ও মতবিনিময় হয়েছে।
প্রশ্নের বানে কল্পনা-জল্পনার পাহাড় : আফগান ব্যবসায়ী ও রোগীদের যাতে ভারত ভিসা দেয় এবং ভারতের জেলে আটক আফগানদের মুক্তি দিয়ে দেশে ফেরত পাঠায়, আলোচনার সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুত্তাকি সেই অনুরোধও জানান। কীভাবে দুই দেশ মিলে ইরানের চাবাহার বন্দরের উন্নয়নে কাজ করতে পারে, কথা হয় তা নিয়েও। যে দুটো দেশের মধ্যে একটা ব্যবহারিক কূটনৈতিক সম্পর্ক পর্যন্ত নেই, তাদের সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের প্রতিনিধিদের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক নানা বিষয় নিয়ে এরকম বিস্তরিত আলোচনা অত্যন্ত বিরল। সে কারণেই জয়শঙ্কর ও মুত্তাকির টেলিফোন আলাপ নিয়ে এতটা চর্চা হচ্ছে। কিন্তু কী সেই ফ্যাক্টর, যা দিল্লি ও কাবুলকে এভাবে কাছাকাছি আনল? দুই দেশ কি এরপর পূর্ণাঙ্গ কূটনৈতিক সম্পর্ক তৈরির পথে এগোবে? নিজেদের সম্পর্কের ভেতর পাকিস্তান ইস্যুটাই বা দুই দেশ কীভাবে সামলাবে? একটা অস্বস্তিকর প্রশ্ন, সমাজে নারীর অধিকার সঙ্কুচিত করার ব্যাপারে তালেবানের যে ট্র্যাক রেকর্ড, তাতেই বা ভারতের অবস্থান কী হবে? এখনও যে এসব প্রশ্নের উত্তর পুরোপুরি স্পষ্ট তা নয়; তবে কিছুটা আভাস অবশ্যই পাওয়া যাচ্ছে।
পাকিস্তানই কাছাকাছি এনেছে : ওয়াশিংটনভিত্তিক থিংকট্যাংক ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের সিনিয়র ফেলো তানভি মদান পরিষ্কার বলছেন, এই যে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা টেলিফোনে নিজেদের মধ্যে কথা বললেন, এর পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা যদি কারও থেকে থাকে, সেটি অবশ্যই পাকিস্তানের। পাকিস্তনের ম্যাসিভ অ্যাসিস্ট বা বিরাট সাহায্য ছাড়া এটা সম্ভবই ছিল না। আসলে শত্রুর শত্রুই বন্ধু। এ ভাবনা জিওপলিটিক্সের ক্ষেত্রেও সমানভাবেই প্রযোজ্য। পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে সম্পর্কের চরম অবনতিকেই যে ভারত কূটনৈতিকভাবে কাজে লাগাতে চাইছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।’ দিল্লিতে স্ট্র্যাটেজিক অ্যানালিস্ট অতুল আনেজা বলছেন, ‘তালেবান ১.০ যে পাকিস্তানের খুব ঘনিষ্ঠ ছিল এবং তাদের নেতারা কার্যত পাকিস্তানের হাতে গড়া ছিলেন, এটা সবাই জানেন। কিন্তু তালেবান ২.০-র সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক একেবারেই তলানিতে।’ বস্তুত পাকিস্তান বহুদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছে, আফগান তালেবানই আসলে ‘তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান’ বা টিটিপিকে মদদ দিয়ে আসছে। আফগানিস্তনের ভেতরে তালেবান নাকি তাদের জন্য বেশ কিছু পকেট বা মুক্তাঞ্চল পর্যন্ত বানিয়ে দিয়েছে। এ টিটিপি পাকিস্তানেও সরকারকে উচ্ছেদ করে ইসলামি শাসনতন্ত্র কায়েম করার কথা বলে।
যার জেরে গত বছরের ডিসেম্বরে আফগানিস্তানের ভেতরে বেশ কিছু এলাকায় পাকিস্তান আকাশপথে হামলা পর্যন্ত চালিয়েছে। পাকতিকা প্রদেশে এমন একটি হামলায় প্রায় ৫০জন নিহতও হয়েছেন। পাল্টা জবাব দিয়েছে তালেবানও। অতুল আনেজার মতে, ইসলামাবাদ ও কাবুলের মধ্যে এ ক্রমবর্ধমান দূরত্বকেই ভারত কাজে লাগাতে চাইছে। যাতে দিল্লিরও প্রভূত স্বার্থ আছে। পাকিস্তান খুব সরু একটা দেশ, ভারতের তুলনায় তো কিছুই নয়। পাকিস্তান চিরকাল আফগানিস্তানকে কাছে টানতে চেয়েছে। কারণ, তারা সঙ্গে থাকলে পাকিস্তানের এ স্ট্র্যাটেজিক ডেপথ (গভীরতা) বাড়ে। তাদের জন্য মধ্য এশিয়ার দরজাও খুলে যায়। আবার ঠিক সেই একই কারণে ভারতও চায় আফগানিস্তানকে পাকিস্তানের চেয়ে যতটা সম্ভব দূরে রাখতে।’ এ পটভূমিতে গত মাসে পহেলগাম হামলায় নিরীহ পর্যটকরা নিহত হওয়ার পর আফগানিস্তানের তালেবান শাসকরা যেভাবে তার নিন্দা করেছেন, তা যথারীতি দিল্লি ও কাবুলের মধ্যে যোগাযোগ ঝালিয়ে নেওয়ার একটা দারুণ সুযোগ এনে দিয়েছিল।
এস জয়শঙ্কর তা সঙ্গে সঙ্গে লুফেও নিয়েছেন। তা ছাড়া চীন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডর (সিপেক) এখন আফগানিস্তানের দিকেও ওয়াখান করিডরের মাধ্যমে সম্প্রসারিত করার চেষ্টা চলছে। এ খবরের দিকেও ভারত সতর্ক নজর রাখছে। ফলে আফগানিস্তানের সঙ্গে রাজনৈতিক যোগাযোগ স্থাপনের তাগিদ ভারতের দিক থেকেও যে ছিল, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু প্রকারান্তরে পাকিস্তানই (বা কাবুলের সঙ্গে তাদের এখনকার সাপে-নেউলে সম্পর্কই) আসলে সেটা সম্ভব করেছে বলে দিল্লিতে বহু পর্যবেক্ষকের বিশ্বাস।
কূটনৈতিক সম্পর্ক যতটা গভীর হওয়া সম্ভব : দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে ফোনে কথাবার্তা হলেও তা যে এখনও পুরোপুরি কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পথ প্রশস্ত করে দেবে বা ভারত কাবুলের তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেবে, সেটা অবশ্য অনেকেই মনে করছেন না। এ মুহূর্তে আফগানিস্তানে ভারতের কোনো দূতাবাস চালু নেই। শুধু ২০২২ সালে তারা কাবুলে একটি টেকনিক্যাল মিশন আংশিকভাবে শুরু করেছে। যার দায়িত্বে আছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা। অন্যদিকে দিল্লিতেও আফগান দূতাবাসের কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে বছর দেড়েকের ওপর হলো। রাশিয়া, চীন, তুরস্ক, ইরান বা উজবেকিস্তানের মতো অনেকে তাদের দেশে আফগান মিশনগুলোর অপারেশন তালেবানের হাতে তুলে দিলেও ভারত কিন্তু সেই দলে এখনও নাম লেখায়নি। তবে গত বছরের নভেম্বরে তালেবান যখন মুম্বাইতে তাদের কনস্যুলেটে ইকরামউদ্দিন কামিলকে ভারপ্রাপ্ত কনসাল হিসেবে নিয়োগ করে, ভারত তাতে কোনো আপত্তি জানায়নি। আবার তিনি প্রথামাফিক ভারতের রাষ্ট্রপতির কাছে এখনও তার পরিচয়পত্রও পেশ করেননি। ইকরামউদ্দিন কামিল ভারত সরকারের বৃত্তি নিয়েই তার স্নাতকোত্তর পড়াশোনা ও পিএইচডি ডিগ্রি করেছেন দিল্লির সাউথ এশিয়া ইউনিভার্সিটিতে।
ফলে এ আফগান কূটনীতিকের সঙ্গে ভারতের নীতিনির্ধারকদের অনেকের ব্যক্তিগত সম্পর্কও বেশ ভালো। মুম্বাইতে তার নিয়োগের ক্ষেত্রে এ ফ্যাক্টরও কাজ করে থাকতে পারে। তবে জিন্দাল স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের অধ্যাপক রাঘব শর্মা মনে করেন না, খুব শিগগিরই দিল্লি ও কাবুলে দুই দেশের রাষ্ট্রদূতদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা যাবে। আসলে ভারত দীর্ঘদিন ধরেই তালেবানের সঙ্গে এনগেজ করে আসছে। কিন্তু তার ব্যাপ্তিটা কত, সেটা নিয়ে মুখ খোলায় তাদের একটা প্রবল অনীহা বা দ্বিধা আছে। ফলে তালেবানের সঙ্গে কূটনৈতিক এনগেজমেন্টের ক্ষেত্রে ভারত এখনও মাঠের বাইরেই ঘোরাফেরা করছে। মার্কিন থিংকট্যাংক ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউটের একটি সাম্প্রতিক স্টাডিতেও বলা হয়েছে, কাতার, চীন, বা তুরস্কের মতো দেশগুলো তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে যেখানে বহুদূর এগিয়ে গেছে, এমনকি পাকিস্তানের নামও এ তালিকার পাঁচ নম্বরেই আছে, সেখানে ভারত কিন্তু ধারেকাছেও কোথাও নেই। আসলে আফগানিস্তানের সঙ্গে ভারত তাদের শত শত বছরের গভীর সাংস্কৃতিক সম্পর্কের কথা বারবার বললেও বাস্তবে সেটা আজকের দিনেও প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে খুব একটা কাজের কাজ কিছু হয়নি। এমন মন্তব্য রাঘব শর্মার।
ভিসা রেজিমে চিত্র পাল্টানোর শঙ্কা : আফগানিস্তানে ২০২১ সালের আগস্টে তালেবানের ক্ষমতা দখল, আর তার ঠিক তিন বছর পর বাংলাদেশে ২০২৪ সালের আগস্টে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর দুটো ক্ষেত্রেই ভারতের আচরণে একটা অদ্ভুত মিল ছিল। এ সাদৃশ্যটা আর কিছুই নয়, ওই দেশের নাগরিকদের জন্য ভারতের ভিসা বন্ধ করে দেওয়া। কয়েক বছর আগেও দলে দলে আফগান ব্যবসাপাতি, পড়াশোনা, ডাক্তার দেখানো এবং নানা কাজে নিয়মিত ভারতে আসতেন। একটা সময় দিল্লি ও কাবুলের মধ্যে রোজ তিন জোড়া ফ্লাইটও যাতায়াত করত। কিন্তু কাবুল-কান্দাহার-জালালাবাদ বা হীরাটে ভারতীয় দূতাবাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ভারতের কনস্যুলার পরিষেবাও বন্ধ হয়ে যায়। আফগানদের জন্য ভারতে আসাটা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়ে। বাংলাদেশে যেমন এখনও ভারত খুব জরুরি প্রয়োজন বা মেডিকেল কারণ ছাড়া ভিসাই দিচ্ছে না, ঠিক একইভাবে খুব কম আফগানই গত কয়েক বছরে ভারতে আসতে পেরেছেন। শুধু যাদের আগে থেকেই লং টার্ম ভিসা ছিল, তারা ছাড়া। কাবুলের তালেবান নেতৃত্ব এখন ভীষণভাবে চাইছে, ভারত আবার আগের মতো আফগানিস্তানে তাদের ভিসা কার্যক্রম চালু করুক।
গত সপ্তাহের টেলিফোন আলাপে আমির খান মুত্তাকি জয়শঙ্করকে সরাসরি সে অনুরোধও জানিয়েছেন। অন্তত আফগানিস্তানের ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থী ও চিকিৎসার জন্য ভারতে আসতে ইচ্ছুক রোগীদের ভিসা দেওয়ার ব্যবস্থা করা গেলে দুই দেশের মানুষে মানুষে সম্পর্ক আবার জোড়া লাগতে পারে বলে অনেক বিশ্লেষকেরই ধারণা। ঘটনাচক্রে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে টেলিফোন আলাপের পরদিন পাকিস্তানের আটারি সীমান্তে আটকে থাকা আফগানিস্তানের ১৬০টি পণ্যবাহী ট্রাককে বিশেষ অনুমতি দিয়ে ভারতে ঢুকতে দেওয়া হয়। এ ট্রাকগুলোতে ছিল পেস্ত-কিসমিস-আখরোটের মতো নানা শুকনো ফল। গত মাসে পহেলগাম হামলার পর থেকেই ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে আটারি-ওয়াগা সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছিল। ফলে আফগানিস্তান থেকে আসা এ ট্রাকগুলো আটকে পড়ে। এখন ভারত যদি এ সৌজন্যটা ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রেও দেখায়, তাহলে তালেবানের সঙ্গে আস্থার সম্পর্কটা অনেক সহজ হয়ে উঠতে পারে। বিগত দুই দশকে ভারত আফগানিস্তানের সামরিক বাহিনীর প্রশিক্ষণ, সে দেশের কর্মকর্তা ও ছাত্রছাত্রীদের স্কলারশিপ, এমনকি আফগানিস্তানের নতুন জাতীয় পার্লামেন্ট ভবন তৈরির কাজে কোটি কোটি ডলার খরচ করেছিল। তালেবান কর্মকর্তা ও মুখপাত্ররা তাদের একাধিক পোস্টে স্পষ্ট করে দিয়েছেন, সেসব প্রকল্প আপাতত মুলতবি থাকলেও ক্ষতি নেই। কিন্তু সাধারণ আফগান নাগরিকদের আবার ভিসা দেওয়া শুরু করে ভারতকেই এটা প্রমাণ করতে হবে, তারা দু’দেশের মধ্যে পিপল-টু-পিপল কনট্যাক্টে সত্যিই আগ্রহী। তবে ভারত সরকারের কর্মকর্তা ও নীতিনির্ধারকরা একান্ত আলোচনায় যুক্তি দিচ্ছেন, ভারতের বৃহত্তর ও সার্বিক স্বার্থ দেখতে গিয়েই তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরির চেষ্টা চলছে। কিন্তু এর মানে এই নয়, তাদের সব নীতিতেই দিল্লি চোখ বন্ধ করে সায় দিচ্ছে। তাদের কথায়, এ সম্পর্ক শুধু পারস্পরিক প্রয়োজনের তাগিদে।
লেখক : গবেষক ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশ্লেষক