গাড়িতে বিফ বা গরুর মাংস বহন করা হচ্ছে, এ সন্দেহে ভারতের উত্তরপ্রদেশে চারজন মুসলিম যুবককে নির্মমভাবে পিটিয়ে জখম করেছে সেখানকার তথাকথিত গোরক্ষক বাহিনীর লোকজন। আহত চারজনের মধ্যে তিনজনের অবস্থাই অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার ২৪ মে সকালে, রাজ্যের আলিগড় জেলায়। আহত যুবকরাও ওই জেলার আটরাউলি শহরের বাসিন্দা। জেলা পুলিশ সূত্রে তাদের নাম আরবাজ, আকিল, কাদিম ও মুন্না খান বলে জানানো হয়েছে। এদিকে ওই যুবকদের ওপর অকথ্য নির্যাতনের একাধিক ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়েছে। যাতে দেখা যাচ্ছে, হামলাকারীরা তাদের জামাকাপড় খুলে নিয়ে প্রায় নগ্ন করে পেটাচ্ছে। মারধর করার সময় কাস্তে বা কাটারির মতো ধারালো অস্ত্রশস্ত্র, লাঠিসোঁটা, রড এবং ইটও ব্যবহার করা হয়েছে। আহত যুবকদের একজন আকিলের বাবা সালিম খান স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘ভিডিও দেখলেই বুঝবেন, কীভাবে ওদের মারা হয়েছে। আমার সেটা বর্ণনা করার ভাষা নেই।’ আকিল এখন আলিগড় হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে বলে জানান তিনি। হামলার ঘটনা যে ঘটেছে, তার সত্যতা নিশ্চিত করা হয়েছে আলিগড় পুলিশের পক্ষ থেকেও। তবে তারা এখনও কাউকে গ্রেপ্তার করেনি। গাড়িতে যে মাংস ছিল, তার নমুনা সংগ্রহ করে সেটি কীসের মাংস, তা পরীক্ষা করাসহ সব অভিযোগের তদন্ত করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছে।
গোরক্ষক বাহিনীর উৎপত্তি : বছর কয়েক আগেও বিশেষত উত্তর ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে এ গোরক্ষক বাহিনীগুলোর হামলা প্রায় নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। বিফ বহন করার অভিযোগে তাদের হাতে বহু মুসলিম পশু খামারি ও ব্যবসায়ী প্রাণ হারিয়েছেন। এ বাহিনীগুলোতে মূলত বজরং দল, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মতো বিভিন্ন হিন্দুত্ববাদী শক্তির সদস্যরাই থাকতেন। পুলিশ ও প্রশাসন এ মিলিশিয়াদের ঢালাও মদদ দিত বলেও বহু ক্ষেত্রে অভিযোগ উঠেছে। তবে সম্প্রতি তাদের কার্যকলাপে কিছুটা ভাটা পড়লেও আলিগড়ের ঘটনা বুঝিয়ে দিল, গোরক্ষকরা এখনও হারিয়ে যায়নি।
গোরক্ষার নামে চাঁদাবাজি নাকি বাফেলো : আলিগড় জেলার সমাজবাদী পার্টি নেতা মনোজ যাদব দাবি করেন, হিন্দুদের জন্য পবিত্র গোমাতা বা গরু রক্ষার নামে এসব গুন্ডাবাহিনী যা চালাচ্ছে, সেটা চাঁদাবাজি ছাড়া আর কিছুই নয়। তিনি জানান, রেজিস্টার্ড ফ্যাক্টরি থেকে বাফেলো বা মহিষের মাংস কিনে এ গরিব ব্যাপারীরা যখন ফেরেন, তখন স্বঘোষিত গোরক্ষকরা তাদের রাস্তা আটকে চাঁদা আদায় করে। এর সঙ্গে ধর্মরক্ষার কোনো সম্পর্ক নেই। সবটাই ভয় দেখিয়ে টাকা তোলার কৌশল। দিন পনেরো আগেও এ বাহিনীর লোকজন আরও কয়েকজন মুসলিম ব্যাপারীর গাড়ি আটকে টাকা দাবি করেছিল। পরে সেই গাড়ির মাংস পরীক্ষা করে কোনো বিফ পাওয়া যায়নি। প্রসঙ্গত উত্তরপ্রদেশে গরু কাটা ও মাংস বিক্রি করা বেআইনি হলেও মহিষ বা বাফেলোর মাংস বৈধভাবে কেনাবেচা করা যায়। রাজ্যজুড়ে বহু মিট প্রোসেসিং কারখানাই মহিষের মাংস দিয়ে ব্যবসা চালায়। ভারতের সুপরিচিত ফ্যাক্টচেকার ও অল্ট নিউজ সাইটের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ জুবায়েরও দাবি করেন, আলিগড়ের যে কারখানা থেকে মাংস কিনে ওই যুবকরা ফিরছিল, সেটি মহিষের মাংস বিক্রির জন্যই সরকারি লাইসেন্সপ্রাপ্ত। এক্স হ্যান্ডলে আল আম্মার ফ্রোজেন ফুডসের সনদ এবং ভারতের ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অথরিটির দেওয়া সার্টিফিকেট পোস্ট করে মুহাম্মদ জুবায়ের জানান, এ কারখানাটির বিফ বা গরুর মাংস বিক্রি করার রেকর্ড নেই। এটি সরকারের অনুমতিতেই শুধু মহিষের মাংস বেচে থাকে। শনিবার সকালে ওই কারখানা থেকে বেরোনো আকিলদের পিকআপ ট্রাকের গেট পাসটিও তিনি পোস্ট করেন। যাতে পরিষ্কার বাফেলো বোন ইন মিট (মহিষের মাংস আর হাড়) লেখা আছে। তাতে সই আছে গণপিটুনিতে আহত চার যুবকের অন্যতম কাদিমের।