ঢাকা সোমবার, ১৯ মে ২০২৫, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ঘাস চাষে ঝুঁকছেন কৃষক ও খামারিরা

ঘাস চাষে ঝুঁকছেন কৃষক ও খামারিরা

যশোরের কেশবপুরে ঘাস চাষের আবাদে ব্যাপক লাভ জনক হওয়ায় আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের। এ ঘাস মাছ গরু ও ছাগলের খাদ্যর চাহিদা মিটিয়ে সংসারের খরচ যোগাতে কৃষক বাজারে নিয়ে বিক্রি করছে ঘাস। ঘাস চাষে লাভজনক হওয়ায় দিনে দিনে এ উপজেলার কৃষকরা এ ঘাস চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। কেশবপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত ২০২৩ -২০২৪ অর্থ বছরে কেশবপুর উপজেলার ৯০ জন কৃষক খামার মালিকদের মাঝে ৩০ বিঘা জমিতে চাষাবাদ করার জন্য হাইব্রিড পাচং জাতের ঘাসের কাটিং বিনামূল্যে বিতরণ করেন। এছাড়া ২৫ জন কৃষক খামার মালিকদের ১৫ বিঘা জমিতে চাষাবাদ করার জন্য হাইব্রিড পাচং জাতের ঘাসের কাটিং বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে বলে মজুত আছে। এদিকে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে পরামর্শ নিয়ে উপজেলার শত শত বিঘা জমিতে কৃষকরা বিভিন্ন জাতের এ ঘাস রোপণ করেছে। গরু ও ছাগল খামার মালিকসহ উপজেলার গরু ও ছাগল পালনকারীরা বলছেন গো খাদ্যের সংকট কাটিয়ে উঠার জন্য এ ঘাস চাষের পদ্ধতি বেছে নিয়েছেন তারা। উপজেলার বিভিন্ন মাঠে সরেজমিনে দেখা গেছে, মাঠের চারিদিকে ঘাসে ছেয়ে আছে জমির খেত। আবার অনেক কৃষক খেত থেকে ঘাস কেটে বাজারে নিয়ে বিক্রি করছে। কয়েকদিন পর এ সব কৃষকরা জমি থেকে পুরাদমে কাটা শুরু করবে ঘাস। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কৃষকরা তাদের মাঠের ঘাস কেটে বিক্রি করতে পারবেন। কৃষকরা জানান, ভালো রৌদ্র হওয়ায় ঘাসে ছেয়ে আছে মাঠের চারিদিক। কেশবপুর উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ১১টি ইউনিয়নে অধিকাংশ গ্রামে কৃষকরা গরু ও ছাগলের খাদ্য জগাতে ঘাসের আবাদ চাষ করেছে।

প্রতি বিঘা জমির ঘাস ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকার ঘাস বিক্রি হবে বলে কৃষকরা ধারণা করেছে। উপজেলার কেশবপুর পৌরসভা, ত্রিমোহিনী, সাগরদাঁড়ি, মজিদপুর, বিদ্যানন্দকাটি, মঙ্গলকোট, কেশবপুর সদর, পাঁজিয়া, সুফলাকাটি, গৌরিঘোনা, সাতবাড়িয়া, হাসানপুর ইউনিয়নসহ পরিতক্ত জমি ও বিভিন্ন সড়কে পাশে এ ঘাসের চাষ হচ্ছে। বাজারে ঘাস বিক্রি করতে আসা মেহের আলী, রফিকুল ইসলাম, অসিম দেবনাথ, আলমগীর হোসেন, ঝন্টু সানা জানান, তারা কৃষকদের নিকট থেকে প্রতি আটি ঘাস ১০ থেকে ১২ টাকা দরে ক্রয় করে ১৫ টাকা দরে আটি বিক্রিয় করা হয়। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের মানুষ মাছ, গরু ও ছাগলের খাদ্যের জন্য এ ঘাস ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছে। উপজেলার বাগদহা গ্রামের আবদুস সবুর, ঝন্টু, ইকবাল হোসেন, আবদুল জলিল, সাতবাড়িয়া গ্রামের আলা উদ্দিন, কাকিলাখালী গ্রামের কনক বিহারি দাস, প্রতাপপুর গ্রামের হারুনার রশীদ বুলবুল, ব্রাহ্মকাটি গ্রামের তরিকুল ইসলাম, রেজা গাজী, আবদুল মজিদ, আবদুস সোবহান, আনিসুর সরদার, রামচন্দ্রপুর গ্রামের আবদুল সরদার, আজিজুর রহমান, সুজাপুর গ্রামের খালেক সরদার, সাগরদাঁড়ি গ্রামের আবদুল মজিদ জানান, প্রতি বিঘা জমিতে ঘাস রোপণের সময় গৌবিসার, রাসায়নিক সার পানির সেচ, পরিচর্যা থেকে শুরু করে কাটা পর্যন্ত ২০ হাজার টাকা খরচ হয়।

এর পর প্রতিমাসে রাসায়নিক সার ব্যবহার করা লাগে। প্রতি বিঘা জমির ঘাস ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা বিক্রিয় করা যায়। ঘাস একবার রোপণ করলে ৩ বছর ধরে বিক্রি করা করতে পারে কৃষকরা। বিঘা প্রতি জমিতে ৪ হাজার আটি ঘাস হয়ে থাকে। পরের দুই বছরে বিঘা প্রতি জমিতে খরচ এসে দাঁড়ায় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। এ ঘাস রোপণের দুমাস পর বড় হয়ে থাকে। কৃষকরা আরো জানান, বাজারে খৈল, ভুসি, ফিড, তুসকরা, পালিশ, খুদ বিচলের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে ঘাস চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের।

এ ঘাস মাছ গরু ও ছাগলের খাদ্যর চাহিদা মিটিয়ে সংসারের খরচ জগাতে কৃষকরা বাজারে নিয়ে বিক্রি করছে ঘাস। গত বছরের তুলনায় এবছরে বৃষ্টির পানি কম থাকায় ঘাস চাষ ভালো হয়েছে। এ ব্যাপারে কেশবপুর উপজেলা প্রাণিসম্পাদ অফিসার ডা. অলোকেশ কুমার বলেন, ২০২৩ -২০২৪ অর্থ বছরে কেশবপুর উপজেলার ৯০ জন কৃষক খামার মালিকদের মাঝে ৩০ বিঘা জমিতে চাষাবাদ করার জন্য হাইব্রিড পাচং জাতের ঘাসের কাটিং বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া ২৫ জন কৃষক খামার মালিকদের ১৫ বিঘা জমিতে চাষাবাদ করার জন্য হাইব্রিড পাচং জাতের ঘাসের কাটিং বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে বলে মজুত আছে। কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে কৃষকরা তাদের মাঠের ঘাস সুন্দরভাবে কেটে গরু ও ছাগলের খাওয়ানোসহ বাজারে বিক্রি করতে পারবেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত