বছরের পর বছর সংস্কার না হওয়ায় দিন দিন সৌন্দর্য ও জৌলুস হারাতে বসেছে প্রায় চারশ’ বছরের পুরোনো মুঘল আমলে নির্মিত প্রাচীন প্রত্নতাত্বিক নির্দশন কুষ্টিয়ার ‘ঝাউদিয়া শাহী মসজিদ’। অপূর্ব কারুকার্যময় ঐতিহাসিক নিদর্শন এ মসজিদ দেখতে প্রায় প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে শত শত দর্শনার্থী ছুটে আসেন। প্রতি শুক্রবারে এখানে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ ধর্মীয় মনবাসনা পূরণের উদ্দেশ্যে আসেন। এজন্য প্রতি শুক্রবারে এখানে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক মেলার আয়োজন করা হয়।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, মসজিদটি কুষ্টিয়া শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়া জেলার মধ্যবর্তী স্থান ঝাউদিয়া গ্রামে অবস্থিত। নির্মাণকালের সঠিক ইতিহাস জানা না থাকলেও মসজিদটি ঘিরে মানুষের ব্যাপক আগ্রহ আছে। ইতিহাস ঘেঁটে এবং স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মুঘল আমলে স¤্রাট শাহজাহানের রাজত্বকালে জমিদার ইরাকের শাহ সুফি আদানী ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে এ অঞ্চলে আসেন। প্রায় চারশ’ বছর আগে ঝাউদিয়া গ্রামে তিনিই নির্মাণ করেন মসজিদটি। জনশ্রুতি আছে, অলৌকিকভাবে একরাতেই মসজিদটি দৃশ্যমান হয়।
মুঘল শিল্পকলার অপূর্ব নিদর্শন মসজিদটি। দেওয়ালজুড়ে নিপুণ আল্পনা, চোখ ধাঁধানো কারুকার্যময় অপূর্ব শিল্পের ছোঁয়া আর পাথরের খোদাই বলে দেয় এটি মুঘল আমলের স্থাপত্য নিদর্শন। সুদৃশ্য পাঁচটি গম্বুজ আছে ঝাউদিয়া শাহী মসজিদে। চারকোণায় আছে চারটি নান্দনিক মিনার। প্রবেশ দরজায়ও দুটি মিনার আছে। এটি অপূর্ব শৈল্পিক কারুকার্য সম্বলিত স্থাপনা, যা সহজেই দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে।
ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে ১৯৬৯ সালে মসজিদটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত করা হয়। মসজিদ দেখতে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে শত শত দর্শনার্থী ছুটে আসেন। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় এর সৌন্দর্য ও জৌলুস হারাতে বসেছে। এছাড়া ঝাউদিয়া গ্রামে দর্শনার্থীদের থাকার জন্য ভালো মানের হোটেল বা আবাসন সুবিধা না থাকায় নানা বিড়ম্বনা পোহাতে হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন কোনো সংস্কার না হওয়ায় মসজিদটির এখন বেহাল দশা। দেখলে মনে হয় জরাজীর্ণ অবস্থা। তাছাড়া তিন কাতারের বেশি নামাজ পড়ার জায়গা নেই। অথচ মসজিদের সামনে-পেছনে অনেক জায়গা আছে। নতুন করে রংসহ মসজিদটির দ্রুত সংস্কারের দাবি জানান তারা। কুষ্টিয়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পার্থ প্রতীম শীল মসজিদটি সংস্কার না হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, এ ধরনের ঐতিহাসিক নিদর্শন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত। তাই এর সংস্কার বা দেখভাল স্থানীয়ভাবে করা সম্ভব নয়। যে কারণে প্রয়োজনীয় সংস্কার করা যাচ্ছে না।