ঢাকা সোমবার, ১৯ মে ২০২৫, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

বিপিএইচ পোকার আক্রমণে দিশাহারা কৃষক

বিপিএইচ পোকার আক্রমণে দিশাহারা কৃষক

শেরপুরের নকলা উপজেলার প্রতিটি এলাকায় বোরো ধান পাকতে শুরু করেছে। মাঠে মাঠে দোল খাচ্ছে ধানের সোনালি শীষ। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কৃষকের গোলা ভরে যাবে সোনালি ফসলে। সোনালি ধানের শীষে রঙিন স্বপ্ন দেখছেন কৃষক। কিন্তু কৃষকের এই হাসি মলিন হতে বসেছে ব্রাউন প্লান্ট হুপার (বিপিএইচ) নামক পোকা যা কৃষকের ভাষায় কারেন্ট পোকার আক্রমণে।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় সব বোরো ধানের খেতে বিপিএইচ পোকা তথা কারেন্ট পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। এর প্রাদুর্ভাব খেত থেকে খেতে খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে দিশাহারা হয়ে পড়ছেন কৃষক। কৃষকের ক্ষতি কমাতে মাঠে ময়দানে কাজ করছেন মাঠপর্যায়ে কর্মরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, কারেন্ট পোকার আক্রমণ এখন পর্যন্ত সহনীয় পর্যায়ে আছে। বিষয়টি নিয়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষক-কৃষানিদের নিয়ে সচেতনতামূলক বিভিন্ন কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। পোকার আক্রমণ থেকে ধানের খেতকে রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় ওষুধ ব্যবহার করার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।

ভূরদী খন্দকার পাড়া এলাকার বর্গাচাষি আজাহার আলী বলেন, চলতি মৌসুমে ২ একর জমিতে ধান চাষ করেছি। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক জমিতে কারেন্ট পোকা ধরেছে। কীটনাশক দিয়েছি, কিন্তু তেমনটা কাজ হচ্ছে না। এই পোকা ধান গাছের গোড়ায় আক্রমণ করে। তাতে ধানের শীষ ও গাছ সম্পূর্ণ সোনালি বর্ণ ধারণ করে। কোনো একসময় ধান গাছ শুকিয়ে যায়। ফলে ফলন অর্ধেকে নেমে আসে। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে মাঠে ঘুরে কৃষকদের এ রোগ থেকে মুক্তির জন্য পরামর্শ সেবাসহ বিভিন্ন চিকিৎসা দিচ্ছেন।

ভূরদী কৃষিপণ্য উৎপাদক কল্যাণ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আলহাজ মো. ছাইদুল হক বলেন, দূর থেকে আক্রান্ত ধানখেত দেখলে মনে হচ্ছে পেকে গেছে। কিন্তু বাস্তবে তা নয়। আক্রান্ত গাছের ধানের ভেতরে দানা নেই। এ নিয়ে আমরা এখন বিপাকে আছি। এতো খরচ করে ফসল ফলাইলাম, ফলনও ভালো হয়েছিল। কারেন্ট পোকা শেষ মুহূর্তে আক্রমণ করায় কৃষকের মাথায় বাজ পড়েছে।

কবুতরমারী এলাকার কৃষক মোস্তফা হোসেন বলেন, আমার খেতে বিপিএইচ (কারেন্ট) পোকার আক্রমণ হয়েছে। কারেন্ট পোকা মনে হয় এক ধরনের ছোঁয়াচে পোকা। এক জমিতে আক্রমণ করলে অন্য জমিতে খুবদ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। তাই এলাকার সব কৃষক এখন ফসল ঘরে তোলা নিয়ে মহাচিন্তায় পড়ে গেছে। বাউশা কবুতরমারী ব্লকে কর্মরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আশরাফুল আলম জানান, প্রতি ১০ লিটার পানিতে ৫ গ্রাম সাবা নামক ওষুধ মিশিয়ে ৫ শতাংশ জমিতে স্প্রে করে দিলে উপকার পাওয়া যায়। খেত বিলিদিয়ে আক্রান্ত ধান গাছের গোড়ায় স্প্রে করতে হয়। এছাড়া যেসব খেতের ধান গাছের গোড়ায় আলো-বাতাস প্রবেশ করতে পারে না, সেসব খেতে বিলিদিয়ে ধান গাছের গোড়ায় স্প্রে করতে হবে। সকালের দিকে স্প্রে করলে সুফল বেশি পাওয়া যায়।

ভূরদী ব্লকে কর্মরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ূন কবীর জানান, যেখানে সূর্যের আলো বাতাস প্রবেশ করতে না পারে সেখানে ব্রাউন প্লান্ট হুপার (বিপিএইচ) বা কারেন্ট পোকার আক্রমণ বেশি হয়। এই পোকা সূর্যের আলো তথা তাপ সহ্য করতে পারে না। তাই ধান রোপণের সময় কৃষি বিভাগের পরামর্শ মোতাবেক গাছের সাড়ি ও গোছার মধ্যে প্রয়োজনীয় ফাঁকা রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শাহরিয়ার মোরসালিন মেহেদী জানান, উপজেলায় ব্রাউন প্লান্ট হুপার (বিপিএইচ) বা কারেন্ট পোকার আক্রমণ ছিল না। হঠাৎ করেই বিভিন্ন এলাকায় এই পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত