ঢাকা শনিবার, ২৪ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

দুধ দিয়ে গোসল করে অনলাইন জুয়া ছাড়ার ঘোষণা, ভিডিও ভাইরাল

দুধ দিয়ে গোসল করে অনলাইন জুয়া ছাড়ার ঘোষণা, ভিডিও ভাইরাল

প্রথমে কাপড়চোপড় এবং পরে পুরাতন মোটরসাইকেলের প্রায় ২১ বছরের ব্যবসা কুষ্টিয়ার কুমারখালীর যুবক সাগর হোসেনের। ব্যবসায়ের টাকা দিয়ে তিলেতিলে গড়েছেন পাকা প্রাচীরে ঘেরা টিনশেডের বিলাসবহুল আধাপাকা বাড়ি। চলতেন দামি মোটরসাইকেলে। সবমিলিয়ে প্রায় ৩৬ লাখ টাকার সম্পত্তির মালিক ছিলেন সাগর। তবে এসব এখন তার কাছে শুধুই স্মৃতি। একবছরের মাথায় অনলাইন জুয়ায় সর্বস্ব হারিয়ে পথের ফকির তিনি। এমন সর্বনাশা জুয়া আর খেলবেন না বলে সবার সামনে দুধ দিয়ে গোসল করেছেন তিনি। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় কুমারখালী উপজেলার পান্টি ইউনিয়নের পান্টি গোলাবাড়ি বাজারে ঘটে এ গোসলের ঘটনা। সাগর হোসেন ওই এলাকার মো. চাঁদ আলীর ছেলে। পরে রাতে সেই গোসলের এক মিনিট ৫৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিও স্যোসাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক ভাইরাল হয়।

ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, স্থানীয় কয়েকজন প্লাসটিকের মগ ও কোমল পানির কাটা বোতল দিয়ে সাগরের মাথায় দুধ ঢালছেন। উৎসুক জনতা ভিড় করেছেন। কেউ কেউ মোবাইলে তা ভিডিও ধারণ করছেন। আর সাগর বলছেন, ‘প্রিয় ভাই ও বন্ধুরা। আমার ছিল বিলাসিতার জীবন। পান্টি একটা মোটরসাইকেলের শোরুম ছিল। আমি খুব সখ করে একটা বাড়ি করেছিলাম। এই মোবাইলে খেলা করে আমার শোরুম চলে গেছে, বাড়ি চলে গেছে। আমার এ দৃশ্য দেখে আপনারা শিক্ষা নেন। কেউ জুয়ো খেলবেন না। অসৎ পথে কেউ বড়লোক হতি পারে না।’

ভিডিওতে আরও বলতে শোনা যায়, দেহ শরীর সব নষ্ট করে ফেলেছি। আত্মহত্যার পথ বেছে নিছিলাম। তিনটা মেয়ে সন্তান আছে। সেজন্য আর কোনোদিন এই জুয়া খেলব না, খেলব না, খেলব না। মোবাইলের জুয়ায় আমি কোনোদিন খেলব না। রাতে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পান্টি গোলাবাড়ি বাজারের পাশেই সাগরের বিক্রি হওয়া আধাপাকা বাড়ি। পাকা প্রাচীরে ঘেরা বাড়িটিতে লোহার কেচি গেট। বাড়ির ভিতরে ও প্রাচীরে জ্বলছে বাহারি রঙের আলো। ভিতরের কক্ষ গুলো সাজানো ও পরিপাটি। খাট ও আসবাবপত্র গুলো নেই। উৎসুক জনতা বাড়িতেও ভিড় করেছেন।

এ সময় আলাপকালে সাগর হোসেন বলেন, মাত্র পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছি। প্রথমে কাপড়চোপড়ের ব্যবসা ছিল। পরে পুরাতন মোটরসাইকেলের শোরুম দিছিলাম। আল্লাহর রহমতে ভালই চলছিল। মাসে প্রায় ৪০ থেকে ৭০ হাজার টাকা আয় হতো। প্রায় ২১ বছর ধরে সৎ পথে আয় করে বাড়ি, গাড়ি সব করেছিলাম। কিন্তু মাত্র এক বছরে অনলাইন জুয়া ‘ওয়ান এক্স বেট ‘ও’ গ্লোরি ক্যাসিনো’ খেলে সর্বশান্ত হয়েছি। ২১ লাখ টাকায় বাড়ি এবং ১৫ লাখ টাকার শোরুম বিক্রি করেও দেনা শোধ করতে পারিনি। তার ভাষ্য, ব্যবসা বন্ধ করে ধারদেনা ও সুদে টাকা নিয়ে জুয়া খেলতাম। পরে সবকিছু বিক্রি করে দিয়েও এখনও সাড়ে ৩ লাখ টাকা দেনা। গত বৃহস্পতিবার আত্মহত্যার পথ বেঁচে নিয়েছিলেন। পরে স্থানীয়রা টের পেয়ে দুধ দিয়ে গোসলের আয়োজন করে। এখন কিভাবে চলবেন তা জানেন না তিনি। তিনি আরও বলেন, পান্টি এলাকার শত শত মানুষ এই জুয়া খেলেন। আর কেউ যেন লোভে পড়ে সর্বশান্ত না হন। সেজন্য তিনি মানসম্মান ত্যাগ করে জনসম্মুখে দুধ দিয়ে গোসল সেরেছেন। তার ভাষ্য, জুয়ায় তিনি একদিনে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা পেয়েছেন। আর খোয়া দিয়েছেন প্রায় তিন লাখ টাকা। যাওয়ার জায়গা নেই।

ক্রেতা মানবিক কারণে এখনও বিক্রিত বাড়িতেই থাকতে দিয়েছেন বলে জানালেন সাগরের স্ত্রী কনা খাতুন। তিনি বলেন, অনলাইন জুয়ায় আমার বাড়ি, গাড়ি, গহনা, আসবাবপত্র, সম্পদ সব চলে গেছে। আর কেউ কারো সঙ্গে যেন এমন না হয়। সেজন্য আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তার। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম মিকাইল ইসলাম বলেন, দুধ দিয়ে গোসল করানোর খবর পেয়েছি। তবে সঠিক কারণ জানা যায়নি। অনলাইন জুয়ার বিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত