নওগাঁয় আগ্রহ বাড়ছে বিদেশি জাতের আম চাষ। দেখতে সুন্দর ও আর্কষণীয়, ফলন ভালো এবং স্বাদ ও গুনগত মান ভালো হওয়ায় ভালো দাম পেয়ে খুশি চাষিরা। এ জেলার মাটি ও আবহাওয়া বিদেশি জাতের আম চাষ উপযোগী হওয়ায় আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের। এতে দিন দিন বাগানের পরিমানও বৃদ্ধির পাশাপাশি ভোক্তাদের খাবারে আগ্রহ বাড়ছে। আগামীতে অর্থনীতিতে বড় পরিবর্তন আসবে এবং কৃষি খাত হয়ে উঠবে আরও লাভজনক। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে- জেলায় এ বছর ৩০ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে আম বাগান রয়েছে। যা থেকে প্রায় ৩ লাখ ৮৭ হাজার টনের বেশি আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরমধ্যে ১২০ হেক্টর বাগানে বিদেশি বিভিন্ন জাতের আম বাগান রয়েছে।
যা থেকে বছরে প্রায় দেড় হাজার টন আম উৎপাদন হয়। ৫ হাজার টাকা মন হিসেবে যার বাজারমূল্য প্রায় ১৮ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। বরেন্দ্র এলাকা হিসেবে পরিচিত জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা সাপাহার, পোরশা, নিয়ামতপুর ও পত্নীতলা উপজেলার আংশিক এলাকা। এসব উপজেলায় প্রধান অর্থকরি ফসল ছিল আমন ধান ও গম। পানি স্বল্পতার কারণে এক সময় এসব এলাকায় বৃষ্টি নির্ভর একটিমাত্র ফসল আমন ধানের ওপর নির্ভর করতে হতো। তবে গত একযুগের ব্যবধানে বরেন্দ্রের মাঠগুলো এখন সবুজে ছেয়ে গেছে।
ধানের আবাদ ছেড়ে চাষিরা এখন আম চাষে ঝুঁকছেন। এসব উপজেলায় সুস্বাদু ও সুমিষ্ট আম্রপালি, গোপালভোগ, ফজলি, খিরসাপাত, ল্যাংড়া, হিমসাগর, হাঁড়িভাঙা, আশ্বিনা, বারি-৪, গুটি এবং বিদেশি জাতের পালমার, মিয়াজাকি, চিয়াংমাই ও কিউজাইসহ অন্তত ৩০ জাতের আম চাষ হচ্ছে। এসব আম ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হয়। এমনকি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও বেশ সুনাম কুড়িয়েছে। জেলার সাপাহার উপজেলার বরেন্দ্র এগ্রো পার্কের উদ্যেক্তা সোহেল রানা। তার ৭৫ বিঘা জমিতে আম্রপালি, ল্যাংড়া ও বারি-৪ সহ বিদেশি জাতের আম রয়েছে।
তবে এর মধ্যে ২০১৮ সাল থেকে বাণিজ্যিকভাবে বিদেশি জাতের ৯ বিঘাতে জমিতে ব্যানান ম্যাংগো ও ২ বিঘাতে রেড পালমার, মিয়াজাকি, চিয়াংমাই ও কিউজাইসহ ৮ জাতের আম রয়েছে। থোকায় থোকায় ঝুলছে বাহারি রঙের আম। দেখতে যেমন আকর্ষণীয়, খেতেও সুস্বাদু। উদ্যেক্তা সোহেল রানা বলেন- বিভিন্ন দেশ থেকে এসব জাতের আমের কাটিং কলম সংগ্রহ করে সম্প্রসারণ করা হয়েছে। এরমধ্যে শুরু থেকেই ব্যানান ম্যাংগো বাগান রয়েছে। এ আম ৫ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা মন দরে বিক্রি হয়ে থাকে। দাম ভালো পাওয়ায় আগামীতে আরও বেশি জমিতে বাণিজ্যিকভাবে বিদেশি জাতের আম বাগান করা হবে বলে জানান এ উদ্যেক্তা। তার মতো অনেক কৃষক এখন বিদেশি জাতের আম চাষে ঝুঁকছেন। কৃষকদের মাঝেও দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে।
এর কারণ হচ্ছে- বারোমাসি বা স্বল্প সময়ে ফল দেয় এবং গাছে ফলন ভালো হয়। দেখতে সুন্দর ও আর্কষণীয় এবং স্বাদ ও গুনগত মান ভালো। এতে ভোক্তাদের মাঝে এসব আমের চাহিদা বেশি। ফলে বাজারমূল্যও তুলনামূলক বেশি পাওয়া যায়। এতে কৃষকরা কম সময়ে বেশি ফলন পায় এবং অধিক লাভবান হয়। বাজারমূল্য ও লাভের সম্ভাবনার কারণে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই অনেক কৃষক বিদেশি জাতের আম চাষে ঝুঁকছেন।
উপজেলার আশড়ন্দ্র বাজার গ্রামের আম চাষি লিটন হোসেন বলেন- গত ৩ বছর আগে ২৫ কাঠা জমিতে ব্যানানা ম্যাংগোর বাগান করেছিলাম। দাম ভালো পাওয়ায় সাড়ে ৩ বিঘা জমিতে বাগান করেছি। গত বছর ৫ হাজার টাকা মন বিক্রি করেছিলাম। এ বছরও ভালো দাম আছে। আরও দাম বাড়বে। ৭-৮ হাজার টাকা মন বিক্রি হয়। আরেক আম চাষি রাবিক হাসান বলেন- ব্যানানা ম্যাংগো, মিয়াজাকি ও কিউজাই আমের বেশ চাহিদা রয়েছে। এসব আমের বাগানও সম্প্রসারণ হচ্ছে।
রপ্তানি করে ভালো আয় করা হয়। আগামীতে বিদেশি জাতের আমের চাহিদা বাড়বে। নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, এরইমধ্যে এ জেলা আমের বাণিজ্যিক এলাকা হিসেবে পরিচিত পেয়েছে। এ জেলার মাটিতে দেশি আমের পাশাপাশি বিদেশি জাতের আম চাষ উপযোগী হওয়ায় কৃষকদের মাঝে বেশ আগ্রহ বাড়ছে। অনেক সৌখিন চাষি বিদেশি জাতের আম বাগান করছেন। তারা ভালো দাম পেয়ে কৃষকরা লাভবান হচ্ছে। কৃষকদের সার্বিক পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
