চাঁপাইনবাবগঞ্জে উদ্বেগজনক হারে ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। গত এক মাসে মশাবাহিত এই রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮৩৯ জন। এদের মধ্যে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে ২১ জন এখনও চিকিৎসাধীন। অনেক রোগীর শরীরে দেখা দিচ্ছে নতুন উপসর্গও। এ বছর জেলায় জুন ও জুলাই এ ২ মাসেই ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। এখনও প্রতিদিনই হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন নতুন নতুন রোগী। ফলে জনমনে বাড়ছে আতঙ্ক। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জুনের ১২ তারিখ পর্যন্ত জেলায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন মোট ৫৩২ রোগী। এদিকে ১২ জুলাই পর্যন্ত জেলাজুড়ে মোট ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১,৩৭১ জনে। ফলে গত এক মাসে জেলায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েছে ৮৩৯ জন।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের ডেঙ্গু রিপোর্ট পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের জুন মাসের ১২ তারিখ পর্যন্ত অর্থাৎ প্রায় সাড়ে ১৭ মাসে জেলায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ৫৩২ রোগী। অন্যদিকে গেল এক মাসে জেলায় আড়াই গুণ পর্যন্ত ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা বেড়েছে। স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ডেঙ্গু সংক্রমণের শুরুটা ঈদুল আজহার আগেই। এরপর পরেই জুন মাসের শুরু থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার আরামবাগ, বালুবাগান, পিটিআই, মাদ্রাসাপাড়া ও মিস্ত্রিপাড়া মহল্লায় এই রোগের সংক্রমণ শুরু হয় উদ্বেগ জনকভাবে। এখন বর্তমানে জেলাজুড়ে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের খবর পাওয়া যাচ্ছে।
তারা আরও জানান, এবারের ডেঙ্গু সংক্রমণের শুরুর সময় ছিল ভিন্ন। সাধারণত বৃষ্টি বাড়লেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। আর তখনই ব্যাপকভাবে মশার বিস্তার ঘটে। এতে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও বাড়ে। কিন্তু এবার বৃষ্টি ছাড়াও ডেঙ্গু তার প্রভাব বিস্তার করছে। সচেতন নাগরিকরা মনে করেন, অসচেতনতা থেকেই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রায় ১৫ দিন থেকে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার মিস্ত্রিপাড়ার বাসিন্দা সাবিরা ইসলাম তামান্না। তিনি বলেন, আকস্মিকভাবে শরীরে জ্বর অনুভব করি। এরপরই প্রচণ্ড ব্যথা শুরু হয়। শারিরীক অবস্থা ক্রমশই অবনতি হলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হই। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে জানতে পারি আমরা ডেঙ্গু পজেটিভ। হঠাৎ করে ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টা আমার পরিবারের মাঝে এক ধরনের চাপা আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
শহরের বালুবাগান মহল্লার আরেক ডেঙ্গু রোগী সুমাইয়া খাতুন জানান, জ্বর হওয়ার পর শরীর কাঁপতে থাকে, তারপর বমি ও শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। ডাক্তাররা বলেছেন, ডেঙ্গু। আগে কখনও এমন হয়নি। এডিস মশাবাহিত রোগীদের জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে ‘ডেঙ্গু ওয়ার্ড’ চালু করা হয়েছে। এ রোগে আক্রান্তদের বিশেষ একঘরে রেখে স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. মাসুদ পারভেজ বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে এবার যখন প্রথম ডেঙ্গু শনাক্ত হয়, তখন বৃষ্টি ছিল না। তাপপ্রবাহ চলছিল। এরপরেই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকে। ড্রেনেজ ব্যবস্থা অপ্রতুল হওয়ায় এমনটা হতে পারে। এখানে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। যেসব রোগীদের অবস্থা উদ্বেজনক মনে হচ্ছে তাদের রামেক হাসপাতলে রেফার্ড করা হচ্ছে। ডেঙ্গু নিয়ে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের উদ্বেগ নিয়ে জানতে চাইলে সিভিল সার্জন ডা. একেএম শাহাব উদ্দিন বলেন, এ বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার পিটিআই, আরামবাগ, বালুবাগান, মিস্ত্রিপাড়াসহ আশপাশের মহল্লাগুলোয় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেশি। চলছে বর্ষা মৌসুম। এ সময় ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়েই। পরিস্থিতি যেন আরও অবনতি না হয় সে জন্য আমরা জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছি। বিভিন্ন জায়গায় ডেঙ্গু প্রতিরোধে আলোচনা করা হচ্ছে। পরিষ্কার-পরিছন্নতা অভিযান চালানো হচ্ছে। আশা করছি আগামিতে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা কমে আসবে।