বিকালের পড়ন্ত রোদে পটুয়াখালীর শহিদ মিনার মাঠ। আশপাশের সবুজ মাঠে শিশুদের দৌড়ঝাঁপ, বড়দের হাঁটাহাঁটি আর মুখরোচক খাবারের দোকানে ভিড়। তার মধ্যেই চোখে পড়ে এক তরুণ, নিজ হাতে ভাজছেন পুরি, আর মুখে হাসি নিয়ে ক্রেতাদের পরিবেশন করছেন গরম গরম খেতা পুরি।
এই তরুণের নাম শফিকুল ইসলাম। পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার সুবিদখালী গ্রামের ছেলে শফিকুল। বর্তমানে পড়াশোনা করছেন পটুয়াখালী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইলেকট্রিকেল বিভাগের সপ্তম পর্বে।
শুধু ক্লাস আর পরীক্ষার চাপে নিজেকে আটকে না রেখে, ছয় মাস আগে তিনি নেমে পড়েন ছোটখাটো ব্যবসার চিন্তায়। কারণ, নিজের পড়াশোনার খরচ বহন করতে চান নিজেই। সেই ভাবনা থেকেই জন্ম নেয় ‘খেতা পুরি’।
ব্যবসা শুরু করার ভাবনাটা এসেছিল শহিদ মিনার মাঠের প্রতিদিনের ভিড় দেখে। হাজারো নারী-পুরুষ, শিশু, কিশোর-কিশোরী প্রতিদিন বিকালে এখানে ঘুরতে আসেন। খাবারপ্রেমী এই জনসমাগম দেখে শফিকুল ভাবলেন- কেননা, এখানে একটি ফুডকার্ট চালু করা যায়? ঢাকায় একবার ব্যক্তিগত কাজে গিয়ে পুরান ঢাকায় দেখেন ভিন্নধর্মী এক পুরি বিক্রি হচ্ছে- নাম ‘খেতা পুরি’। নামটা শুনেই তার মনে ধরে যায়। পটুয়াখালী ফিরে এসে ঠিক করেন, তার ফুডকার্টের নামও রাখবেন ‘খেতা পুরি’। ব্যাস, শুরু হয়ে যায় যাত্রা।
প্রথমদিকে কিছুটা দুশ্চিন্তা ছিল। নিজে হাতে পুরি বানানো, কাঁচামাল আনা, ভাড়ার জায়গায় বসা সবমিলিয়ে শুরুটা সহজ ছিল না। প্রায় ৭০-৮০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে ফুডকার্টটি দাঁড় করান তিনি। শুরু থেকেই ভালো সাড়া পান। তার হাতের পুরির স্বাদ, ঝাল-মিষ্টির মিশেল, আর দামণ্ডসবই ক্রেতাদের মন জয় করে নেয়।এই মুহূর্তে প্রতিদিন তিনি বিক্রি করছেন প্রায় ৬ থেকে ৭ হাজার টাকার খেতা পুরি। খরচ বাদ দিয়ে থাকছে প্রায় ৩ থেকে ৩,৫০০ টাকা লাভ। এ অর্থ দিয়ে নিজের পড়াশোনার খরচ চালাচ্ছেন, এমনকি পরিবারকেও সাহায্য করছেন নিয়মিত।
শফিকুল বলেন, আমি চাইছিলাম নিজের খরচ নিজেই চালাতে। এখন ছোট হলেও একটা কিছু করে খুশি আমি। পরিবারকেও সাহায্য করতে পারছি, সেটাই সবচেয়ে আনন্দের। খেতা পুরির ভিন্নতা এবং মানের কারণে ক্রেতারাও বারবার ফিরে আসছেন। শুধু সুবিদখালী নয়, পাশের এলাকা থেকেও অনেকেই আসেন শফিকুলের দোকানে।
স্থানীয় শান্তা নামের এক ক্রেতা বলেন, এখানের পুরি যেমন খেতে মজার, তেমনি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। দামও কম। তাই আমরা প্রায়ই আসি।
এই ব্যবসা থেকে উপার্জন করে শফিকুল এখন স্বপ্ন দেখছেন আরও বড় কিছুর। ভবিষ্যতে পটুয়াখালী শহরের আরও কয়েকটি জায়গায় ‘খেতা পুরি’ শাখা খোলার ইচ্ছা তার। একদিন চাই, আমার ফুড ব্র্যান্ড ‘খেতা পুরি’ পুরো জেলাজুড়ে জনপ্রিয় হোক- এমনটাই বললেন তিনি।
শফিকুলের গল্প শুধু একজন উদ্যোক্তার গল্প নয়, এটি একজন তরুণের আত্মবিশ্বাস, পরিশ্রম আর স্বপ্ন দেখার গল্প। যখন অনেক শিক্ষার্থী শুধুই সরকারি চাকরির পেছনে ছুটছে, তখন শফিকুল নিজেই নিজের রাস্তা তৈরি করেছেন। এমন তরুণদেরই দেশ গড়ার অগ্রদূত বলা যায়। সমাজে এমন কজন তরুণ শিক্ষার্থী আছেন, যারা মাসে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা আয় করছেন? যদি ইচ্ছা আর সাহস থাকে, তবে স্বপ্ন কখনোই বড় হয়ে দাঁড়ায় না- শফিকুল ইসলাম যেন সেই জীবন্ত উদাহরণ।