ঝুঁকিপূর্ণ ভবন যেন মৃত্যুফাঁদ। তাই ভবনের দরজা বন্ধ, খোলা আকাশকে ছাদ করে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। গাছতলায় বসে শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে সখীপুরের সুরিরচালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সামান্য বৃষ্টিতেই থেমে যায় পাঠদান। নতুন ভবনের অভাবে শিক্ষার মান ও শিক্ষার্থীদের আগ্রহ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। সরেজমিন দেখা যায়, বিদ্যালয়ে একটি পুরোনো পাকা ভবন ও মাত্র ১৪ হাত দৈর্ঘ্যরে একটি টিনের ঘর আছে। বিদ্যালয়টি ১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও পাকা ভবন নির্মিত হয় ১৯৯৩-৯৪ অর্থ বছরে। ওই ভবনটিতে একটি অফিস রুম ও তিনটি শ্রেণিকক্ষ। কয়েক বছর আগে ৭ লাখ টাকা বরাদ্ধ পেয়ে আংশিক সংস্কার করা হয়। অন্যদিকে গ্রামের মানুষের সহায়তায় টিনের ঘরটি নির্মাণ করেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। এখন ভবনের ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ায় সেটিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে ব্যবহার বন্ধ রাখা হয়েছে। কিন্তু শিশু শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মোট ছয়টি শ্রেণির পাঠদান সম্ভব হচ্ছেনা। ফলে টিনের ছোট ঘর ও গাছতলাই হয়ে উঠেছে ক্লাসরুম। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নরুল আলম বলেন, বিদ্যালয়ে বর্তমানে ছয়জন শিক্ষক ও ১২৩ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। অথচ শ্রেণিকক্ষ আছে মাত্র দুটি। বাদ্য হয়ে শিক্ষকরা বাইরে ক্লাস নিচ্ছেন। তবে এখন বর্ষামাস, বৃষ্টি নামলে আর ক্লাস নেওয়া সম্ভব হয়না।
তিনি আরও বলেন, আমরা এরইমধ্যে উপজেলা শিক্ষা অফিসে নতুন ভবনের চাহিদা জমা দিয়েছি। দ্রুত ভবন বরাদ্ধ না পেলে শিক্ষা কার্যক্রমে মারাত্মক ক্ষতি হবে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক নেতা ইব্রাহিম মিয়া বলেন, একটি বিদ্যালয়ের প্রাণ হলো পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ। সুরিরচালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষের সংকট শিক্ষার গুণগত মানের জন্য বড় বাধা। বাচ্চাদের মনোযোগ ধরে রাখা এমন পরিবেশে সম্ভব নয়। শিক্ষার উন্নয়নে দ্রুত নতুন ভবন তৈরি জরুরি। কয়েকদিন আগে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের শ্রেণিকক্ষে ক্লাস করতে গিয়ে ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী ইলমা ইসলাম আহত হয়। আহত ইলমা বলেন, দেয়াল, পিলার, ছাদ সবখানেই ফাটল। ছাদ থেকে সিমেন্টের খণ্ড আমার হাতের উপর পড়লে আমি অনেক ব্যাথা পাই। তারপর থেকে ওই কক্ষ আর ক্লাস নেয়না স্যাররা। একটা নতুন ভবন নির্মাণ হলে আমাদের ক্লাস করতে ভালো হতো। আনন্দের সঙ্গে পড়াশোনা করতাম।
শিক্ষার্থীদের একাধিক অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বৃষ্টির দিনে গাছতলায় ক্লাস কেবল দুর্ভোগ নয়, এটি শিশুদের শিক্ষার প্রতি অনাগ্রহ তৈরি করেছে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ভয় রয়েছে দুর্ঘটনারও। দ্রুত নতুন ভবন না পেলে বাচ্চাদের পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে যাবে।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার খোরশেদ আলম বলেন, বিদ্যালয়ের পরিস্থিতি সম্পর্কে আমরা অবগত। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ক্লাস নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছি। টিনের ঘরে একটি শ্রেণিকক্ষ ও ইউএনও মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলে পাশের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দুটি কক্ষে ক্লাস নেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। নতুন ভবন বরাদ্ধের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
উপজেলা এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুর রহমান বলেন, সারাদেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় উন্নয়ন প্রকল্প নামে একটি প্রকল্পের কাজ চলছে। ওই প্রকল্পের আওতায় এ উপজেলার ৬২টি ক বিদ্যালয়ের তালিকা করা হয়েছে। আশা করছি ওই প্রকল্পটি পাশ হলে ওই বিদ্যালয়টি নতুন ভবন পাবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল রনী বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশেই একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে, ওই মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দুটি কক্ষ ক্লাস নেওয়ার জন্য বরাদ্ধ দিয়েছি। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।