ঢাকা শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

শালিখার বিভিন্ন এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

শালিখার বিভিন্ন এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

মাগুরার শালিখা উপজেলা মাগুরা সদরসহ ঝিনাইদহ জেলার কিছু এলাকায় অবিরাম বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পানিতে বিস্তীর্ণ ফসলি মাঠ, মাছের ঘের, রাস্তা ঘাঠ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থসেবাকেন্দ্র, বসতবাড়ি পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। বন্যার পানিতে বিস্তৃত ফসলের মাঠগুলো থৈ থৈ করছে। প্রতিদিন যোগ হচ্ছে ক্ষতির পরিমাণ। উপজেলার ৯৫ ভাগ আমন ধান রোপণের কাজ শেষ হয়ে গিয়েছিল। কিছু জমি বাকি থাকলেও বীজতলা তলিয়ে যাওয়ার কারণে আর রোপণ সম্ভব হবে না।

সরেজমিনে দেখা যায়- ঝিনাইদহ জেলার কালিগঞ্জ ও সদর উপজেলার বামোনাইল, শিকারপুর, মুনুড়িয়া দোহাকুলা, শালিখা উপজেলার ধনেশ্বরগাতি, তালখড়ি, মাগুরা সদর উপজেলার রাঘবদাইড়, মঘী ইউনিয়নের প্রায় ৩০টি গ্রাম পানিতে ভাসছে। রাস্তার উপর কোথাও কোথাও ২-৩ ফুট পানি উঠে গেছে। ফসলের আর তেমন কোনো চিহ্ন নেই। চারদিকে শুধুই থইথই পানি। মনে হচ্ছে যেন বিস্তীর্ণ ফসলি জমি যেন সাগরে পরিণত হয়েছে। গ্রামগুলো যেন দ্বীপ। একই সঙ্গে দেখা যায়, চটকাবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চতিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সেওজগাতি আদর্শ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, ধনেশ্বরগাতি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ধনেশ্বরগাতি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের চার পাশে পানি থৈথৈ করছে। পানি উঠে গেছে ধনেশ্বর গাতি ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র, কমিউনিটি ক্লিনিক।

এছাড়াও ধনেশ্বরগাতি, সেওজগাতি, চতিয়া, গোবিন্দ পুর, থৈপাড়া, টিওরখালী, দীঘলগ্রাম নুরপুর সাংদা গজদূর্বা, ভাটোয়াইল, ঝিনাইদহ জেলার মনুড়িয়া নাটোপাড়া, বরইরচারা গ্রামের শত শত ঘর বাড়িতে পানি উঠে গেছে। তালখড়ি গোবিন্দপুর সড়ক, টিওরখালী উজগ্রাম সড়ক ধনেশ্বরগাতি থৈপাড়া সড়ক, সিংড়া নারিকেল বাড়িয়া, মুনুড়িয়া টিকারী বাজার সড়কসহ অনেক সড়ক তলিয়ে চলাচলের অযোগ্য হয়ে গেছে। এ ব্যাপারে শতখালী ইউনিয়নের শতখালী গ্রামের সরদার পাড়ার কৃষক মকবুল হোসেন জানান, তিনি প্রায় সাড়ে ৭ বিঘা জমিতে আমন ধান চাষ করেছিলেন। কিন্তু বন্যার কবলে পড়ে তা তলিয়ে গেছে। ভাটোয়াইল গ্রামের জিল্লুর রহমান বলেন, বন্যার ক্ষতি পোষানোর কোনো সুযোগ নাই। বিশেয করে, চলাচলের জন্য রাস্তা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এক মাসের পরিশ্রমের পর ধান গাছ বড় হয়ে গেলেও এখন সবই পানির নিচে। শুধু ফসলই নয়, ক্ষতি হয়েছে মাছ চাষেও। শালিখা উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে প্রায় ২৭.৯ হেক্টর পুকুর ও মাছের ঘের পানিতে ভেসে গেছে।

তালখড়ি গ্রামের কৃষক ইসমাইল হোসেন বলেন, টানা বৃষ্টি এবং বন্যার পানিতে পুকুর, মাছের ঘের এবং ফসিল জমি সব শেষ। মনে হচ্ছে এ বছর না খেয়ে থাকতে হবে। আমাদের এখন আর কোনো ফসল নাই। নাঘসা গ্রামের মো. আতাউর রহমান বলেন, বন্যার পানি শতশত মাছের ঘের ভেসে গেছে। এতে মাছ চাষিদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ইউপি সদস্য কহিনুর রহমান ও নজরুল ইসলাম বলেন, শালিখার নাঘসা বুড়ার বিল ও সিংড়া থৈপাড়ার মাঠের ফসল তলিয়ে গেছে। কয়েকটি মাছের ঘের ভেসে গেছে। ফলে কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। শালিখা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হোসাইন শিকদার বলেন, বন্যায় চারিদিকে ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। মাছের ঘের ভেসে গেছে। কিন্তু সরকারিভাবে এখনও কোনো ত্রান বা সাহায্য সহযোগিতা আসেনি। শালিখা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবুল হাসনাত বলেন, উপজেলার প্রায় ২৫০ হেক্টর জমিতে আমন ধান, ১৬ হেক্টর জমিতে সবজি পানিতে তলিয়ে গেছে।

অনেক এলাকায় কৃষকরা বাঁধ নির্মাণ করে কিছু ফসল রক্ষার চেষ্টা করে যাচ্ছে। আমরা নিয়মিত খোঁজখবর রাখছি এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। তবে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ধনেশ্বরগাতি ও তালখড়ি ইউনিয়নের অধিকাংশ সচেতন মানুষ মনে করেন, অপরিকল্পিত ব্রিজ নির্মাণ ও নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে জল নিষ্কাশন মুখে ভেড়ি, পুকুর নির্মাণ এই বন্যার জন্য বেশি দায়ী। কারণ পানি প্রবাহে নানাভাবে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে কৃষকদের দাবি বারগংগা খালের উজগ্রাম, সেওজগাতি শ্মশানের নিকট নির্মিত তিনটি ব্রীজ কমপক্ষে চারগুণ বড় করে নির্মাণ করতে হবে। এছাড়া এবং দীঘলগ্রাম ও গোবিন্দপুর গ্রামের মাঝখানে একটি স্লুইজগেট স্থাপনের দাবি জানিয়েছে। এছাড়া খালের মুখের বেড়িবাঁধ অপসারণ করতে হবে। তা না হলে ভবিষ্যতে সমস্যা আরও প্রকট হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত