
সুন্দরবনে হরিণ নিধন, বিষ দিয়ে চিংড়ি শিকার, বনের গহিনে টোংঘরে আগুনে চিংড়ি শুকানো, অবাধে কাঁকড়া আহরণে অসাধু চক্রের দৌরাত্ম দিন দিন বেড়ে চলেছে। বন বিভাগ, কোস্টগার্ড, পুলিশের নজরদারি এড়িয়ে চোরাকারবারীরা প্রতিনিয়ত পাচার করছে বিষ দিয়ে শিকার করা চিংড়ি, হরিণের মাংস ও কাঁকড়া। মাছের প্রজনন মৌসুমের সময়কাল হিসেবে জুন, জুলাই, আগস্ট তিন মাস সুন্দরবনে প্রবেশে সরকারি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। নিষেধাজ্ঞা না মেনে শত শত জেলে বনের খাল ও ভারানীতে কট বিষ প্রয়োগ করে নিষিদ্ধ ভেষালি জালে মাছ শিকার করে ফায়দা লুটে নিচ্ছে।
সূত্র জানায়, পশ্চিম সুন্দরবনের মার্কি, হড্ডা, গেড়া চালকি, হংসরাজ, ভোমরখালি অভয়ারণ্যের খাল ও ভারানী, নীলকমল অভয়ারণ্যের ছিচখালি, বুন্দ, কেওড়াসুতিসহ অন্যান্য খাল, মোরগখালি, চেরাগখালি, দোবেকী, পুস্পকাটি, নোটাবেকি অভয়ারণ্যের নদীখালে জেলেরা চিংড়ি শিকার করছে। সম্প্রতি ভোমরখালি অভয়ারণ্যে অভিযান চালিয়ে খুলনা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক মো. শামীম রেজা ইঞ্জিন চালিত ট্রলারসহ ৮৫০ কেজি চিংড়ি আটক করে কয়রা চৌকি আদালতে সোপর্দ করে। আদালতের বিজ্ঞ বিচারকের নির্দেশে সমুদয় চিংড়ি পুঁতে বিনষ্ট করা হয়। এদিকে, কোস্টগার্ড ও নৌ বাহিনীর সদস্যরা কয়রা সদর ও চরামুখার খালেরগোড়ায় পৃথক অভিযানে ৮০০ কেজি কাঁকড়া আটক করে শাকবাড়িয়া নদীতে অবুমুক্ত করে।
জোড়শিং, হরিহরপুর ফুলতলা, চরামুখা খালের গোড়া ৪, ৫, ৬নং কয়রা, কাশিরহাট, মঠবাড়ি, তেতুলতলা, মহেশ্বরীপুর, খোড়লকাটি, শেখেরকোনা, হড্ডা হোগলা স্লুইজ গেটের রাস্তা, ভাগবাসহ অন্যান্য রুট দিয়ে প্রতিদিন পাচার হচ্ছে অবৈধভাবে শিকার করা সুন্দরবনের চিংড়ি, কাঁকড়া ও হরিণের মাংস। বনাঞ্চল সংলগ্ন হওয়ায় চোরাকারবারীরা রাতে বান্ডিল বান্ডিল বরফ ও রিপকট বিষ নৌকায় তুলে সহসা বনের ভেতরে ঢুকে পড়ছে অসাধু জেলেরা। গত ২৫ জুুলাই সন্ধ্যার পর সুন্দরবন সংলগ্ন ৬নং কয়রা বেড়িবাঁধের পাশে শাকবাড়িয়া নদীর চরে নৌকায় ১৫ বান্ডিল বরফ নিয়ে কয়েকজন জেলে বনের ভেতরে ঢোকার প্রস্তুতিকালে বন বিভাগের লোকজন হাতেনাতে তাদেরকে ধরে ফেলে। এ সময় চোরাকারবারীরা বৈঠা ও লাঠিসোটা নিয়ে অতর্কিত হামলা চালিয়ে শাকবাড়িয়া বন টহল ফাঁড়ির ওসি শাহীনুর রহমান, সঙ্গীয় বনরক্ষী ও দুইজন সিপিজি সদস্যদের আহত করে।
এ ঘটনার ৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত কয়েকজনের আসামি করে বন বিভাগ কয়রা চৌকি আদালতে মামলা করেছে। এছাড়া ৪নং কয়রার পল্লী মঙ্গল, দেউলিয়া বাজারসহ কয়রা সদরের রাস্তাঘাটে গভীর রাত ও ভোররাতে তরুণদের আনাগোনা বেড়ে গেছে। অবৈধভাবে শিকার করা চিংড়ি, হরিণের মাংস ভ্যান, নসিমন ও মোটরসাইকেলে পরিবহনের সময় এ সব তরুণেরা কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে ধাওয়া দিয়ে চিংড়ি ও হরিণের মাংস কেড়ে নিয়ে ভাগবাটোয়ারা করে নিচ্ছে। উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় সুন্দরবনে হরিণ নিধন, বিষ প্রয়োগে চিংড়ি শিকার রোধ, বনদস্যু দমনে করণীয় উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন- উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল্লাহ আল বাকী, থানা অফিসার ইনচার্জ ইমদাদুল হক, বন কর্মকর্তা নাসিরউদ্দিনসহ কমিটির সদস্যরা।