
বর্ষাকালে মাচা পদ্ধতিতে সবজি চাষ করে অর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন ঈশ্বরদীর চাষিরা। মাচা ব্যবহারের কারণে সবজির লতা ও ফল মাটিতে লেগে থাকে না। ফলে রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হয়। মাচায় চাষ করার কারণে ফসল পরিষ্কার থাকে এবং সহজে সংগ্রহ করা যায়। মাচায় সবজি আবাদ বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় আর্ধিকভাবে লাভবান হচ্ছে চাষিরা।
মাচায় সবজির আবাদ বলতে সাধারণত, লাউ, চিচিঙ্গা, করল্লা, জিঙ্গে, কুমড়া, শসা, বরবটি, সিম ইত্যাদি সবজি লতানো গাছের জন্য মাচা তৈরি করে চাষ করা হয়। এই পদ্ধতিতে, গাছের লতা উপরে উঠে যায়। ফলে ফলন বাড়ে, পোকামাকড়ের আক্রমণ কমে এবং জায়গা সাশ্রয় হয়। মাচা পদ্ধতিতে সবজি চাষ করলে ফলন সাধারণত বেশি ও বাজারে ভালো দাম পাওয়া যায়। গতকাল সোমবার সরেজমিনে ঈশ্বরদীর সবজি আবাদের এলাকাগুলো ঘুরে দেখা গেছে, ঈশ্বরদী উপজেলার মুলাডুলি, লক্ষ্মীকুন্ডা, সাহাপুর, সলিমপুর, ইউনিয়নের গ্রামগুলিতে মাচায় বেশি সবজি দেখা গেছে। এছাড়াও এসব গ্রামের বিভিন্ন মাঠে স্বল্প পরিসরে মাচায় সবজি চাষ হচ্ছে।
সাহাপুর ইউনিয়নের আওতা পাড়া গ্রামের চাষি শফিকুল ইসলাম জানান, মাচায় সবজি চাষ করলে ফসলের রোগবালাই কম হয় এবং এসব ফসলের বাজারে ভালো দাম পাওয়া যায়। উপজেলার আওতা পাড়া গ্রামের কৃষক অলিউল্লাহ জানান, আধুনিক কৃষি সম্প্রসারণ প্রযুক্তির নিরাপদ উচ্চ মূল্যের ফসল চাষ প্রযুক্তি সম্প্রসারণের আওতায় ২৫ শতক জমিতে পায়েল জাতের করলার আবাদ মাচা দিয়ে করে লাভবান হয়েছেন। পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাজারে করলা বিক্রি করে অর্থ উপার্জন হয়েছে। উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়নের ভাড়ইমাড়ী গ্রামের কৃষক ইমরান হোসেন খান সাগর জানান, মাচায় সবজি চাষ করে লাভবান হয়েছেন।
স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই পদ্ধতিতে সবজি চাষে ব্যাপক লাভবান হওয়া যায়। স্বাভাবিক পদ্ধতির থেকে দ্বিগুণ সবজি উৎপাদন হয় মাচা পদ্ধতিতে। এই পদ্ধতিতে সবজি নষ্ট হয় কম। তুলনামূলকভাবে কীটনাশকও কম ব্যবহার করলে হয়। এই পদ্ধতিতে প্রারম্ভিক খরচটা একটু বেশি। তবে একবার মাচা তৈরি করলে ঐ একই মাচা প্রায় ৫ থেকে ৭ বছর কাজে লাগানো যায়। প্রতি বছর শুধু একটু মেরামত করতে হয়।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় সবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৬৬০ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যেই অর্জিত হয়েছে ২৫৫০ সেক্টর। উপজেলায় বর্ষাকালীন সময়ে মাচায় আবাদ হয়েছে ধুন্বল ৩০ হেক্টর, কাকরোল ২৫ হেক্টর, ঝিঙ্গা ১১০ হেক্টর, সিম ৮৯০ হেক্টর জমিতে মাচা তৈরির মাচা তৈরি করে সবজির আবাদ হয়েছে। মাচায় সবজি চাষ করলে পোকামাকড়ের আক্রমণ ও রোগবালাই কম হয়। মাচা তৈরির জন্য সাধারণত বাঁশ, বাঁশের কনচি, কাঠ বা লোহার পাইপ ও নেট জাল ব্যবহার করা হয়। সবজি চাষে বিভিন্ন প্রকার মাচা তৈরি করা হয়।
ফসলের ধরনের উপর মাচা তৈরির উচ্চতা নির্ভর করে। কিছু সবজির জন্য ৫-৬ ফুট উচ্চতার মাচা তৈরি করা হয়। আবার কিছু সবজির জন্য ঝুলন্ত মাচা তৈরি করা হয়। মাচা তৈরির পর সবজির লতা মাচার উপর ছড়িয়ে দেওয়া হয়। গতকাল সোমবার বিকালে উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ আব্দুল মমিন জানান, পানির মধ্যে মাচায় সবজি চাষ পদ্ধতি একটি উদ্ভাবনী ও টেকসই কৃষি পদ্ধতি। মাচায় বিশেষ পদ্ধতিতে সবজির আবাদ, যেখানে সবজির লতানো ও ঊর্ধ্বমুখী বৈশিষ্ট্য ব্যবহার করে মাচা তৈরি করে সবজি চাষ করা হয়।
এই পদ্ধতিতে সাধারণত লাউ, কুমড়া, পটল, শসা, সিম, বরবটি, ঝিঙা ইত্যাদি সবজি চাষ করা হয়। মাচায় সবজি চাষ একটি লাভজনক এবং পরিবেশ-বান্ধব কৃষি পদ্ধতি। এটি কৃষকদের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে এবং নিরাপদ সবজি উৎপাদনে সহায়তা করে। মাচায় সবজি চাষ করলে বৃষ্টির সময় গাছের ক্ষতি হয় না এবং প্রচুর পরিমাণে ফল পাওয়া যায়। অল্প পরিশ্রমে মাচায় সবজি চাষ লাভজনক হওয়ায় ঈশ্বরদীর কৃষকরা আর্থিকভাবে সাবলম্বি হচ্ছে। পাশাপাশি মাচায় সবজি চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বলেও জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।