ঢাকা শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

তাড়াইলের পদ্মবিল ঘিরে পর্যটনের হাতছানি

তাড়াইলের পদ্মবিল ঘিরে পর্যটনের হাতছানি

কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলা সদরের অদূরে ছায়া সুনিবিড় ছবির মতো গ্রাম দড়িজাহাঙ্গীরপুর। এ গ্রাম সংলগ্ন বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে কাইনহা বিলের অবস্থান। বর্ষা ও শরৎকালে এ বিলের বুকজুড়ে দেখা দেয় পদ্মফুলের সমারোহ। বর্ষাকালে এ বিলের অধিকাংশ জমিতেই প্রাকৃতিকভাবে পদ্মফুল জন্মে। বর্ষা মৌসুমে এ বিলের চারদিকে শুধু পদ্ম আর পদ্ম। বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে গোলাপি রঙের পদ্ম। সঙ্গে রয়েছে সাদা পদ্ম। চোখ যত দূর যায় শুধু পদ্ম আর পদ্ম।

সরেজমিনে কাইনহা পদ্ম বিলে গিয়ে দেখা যায়, সৌন্দর্য পিপাসুদের বিলে নৌকায় ঘুরিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন শতাধিক পরিবার।

চোখ জুড়ানো সবুজ দিগন্ত বিল। সেখানে গাঢ় সবুজ পাতার মাঝে হালকা গোলাপি রঙের পদ্মফুলের উঁকি। কুঁড়িগুলো মাথা তুলেছে নতুন করে ফোটার আশায়। সবুজ পাতা আর গোলাপি পদ্মের মিলনমেলায় মনের আনন্দে নির্ভয়ে বিচরণ করছে পানকৌড়ি আর ডাহুক। ফুটন্ত পদ্মের মাথায় খেলা করছে প্রজাপতি আর ভ্রমরের দল। প্রকৃতির এমন প্রেমের আলিঙ্গনের নয়নাভিরাম অপরূপ দৃশ্যের দেখা মিলেছে উপজেলার তাড়াইল-সাচাইল সদর ইউনিয়নের দড়িজাহাঙ্গীরপুর গ্রামের কাইনহা বিলে। এখন অবশ্য সবার কাছে এটি পদ্মবিল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এলাকার প্রবীণরা বলেন, যতদূর মনে পড়ে, এই বিলে এমনই ফুল ফুটে এসেছে। আমরা ছোটবেলায় মাছ ধরতে যেতাম, এখন দেখি শহরের মানুষ ছবি তুলতে আসে।

স্থানীয়রা বলেন, পদ্মবিল ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে একটি ক্ষুদ্র জীববৈচিত্র্য। পানির নিচে দেশীয় প্রজাতির মাছ, পদ্মপাতার ওপর নানা পাখির বিচরণ, আর বিলের চারদিকে প্রাকৃতিক গাছপালা একে আরও জীবন্ত করে তুলেছে। বিশেষ করে বর্ষাকালে ধলাবক, পানকৌড়ি, শালিক, বাটের মতো পাখি এসে বসে পদ্মপাতায়।

তারা আরও বলেন, গত ৬-৭ বছর ধরে প্রচুর নারী-পুরুষ এই পদ্ম বিলে ফুল দেখতে আসেন। কাইনহা পদ্মবিলে সপরিবারে ঘুরতে আসা দর্শানার্থী সাগর মিয়া, রমীশ বর্মন, এহসানুল হক, মাহবুবুর রহমানসহ অনেকেই বলেন, মানুষের মুখে মুখে শুনতে পেয়ে পদ্মবিল দেখতে এসেছি। তবে পদ্ম ফুলের কাছে যেতে অনেক প্রতিকূলতা পোহাতে হইছে। কাছ থেকে পদ্ম ফুল দেখে খুব ভালো লাগছে। কয়েকটা পদ্মফুল নিয়ে যাচ্ছি বাড়ির অন্যসব লোকদের দেখানোর জন্য। পদ্মবিলে গিয়ে দেখা যায়, বিলপাড়ে রয়েছে অনেকগুলো ডিঙি নৌকা। এগুলো দিয়ে ফুলপ্রেমীদের বিলে ঘুরিয়ে আনা হয়। এক নৌকায় ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায় এক ঘণ্টা ঘুরে বেড়ানো যায়। স্থানীয় অনেকেই নৌকা চালিয়ে অর্থ উপার্জন করতে পারছেন। আবার অনেকে হেঁটে যতদূর সম্ভব বিলপাড়ে গিয়ে ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করছেন।

ডিঙি নৌকার মাঝি আফতাব মিয়া, আবুল কালাম, শহিদুল ইসলাম, ফরহাদ মিয়াসহ অনেকেই বলেন, একেকজন মাঝি দিনে পাঁচণ্ডছয়বার করে নৌকায় লোকজন নিয়ে বিলে যায়। দর্শনার্থীদের নৌকায় করে বিলের পদ্ম ফুল দেখিয়ে ভালো আয় হচ্ছে বলেও জানান তিনি। তাড়াইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ বিকাশ রায় বলেন, হালকা গোলাপি রঙের পদ্মফুলের সৌরভ ও সৌন্দর্য যেমন মানুষের মনকে আকর্ষণ করে তেমনি খাদ্য ও ঔষধিগুণে সমৃদ্ধ এ ফুল অনেক জনপ্রিয়। পদ্মফুল অনেকের কাছে আবার বিশুদ্ধতা ও পবিত্রতার প্রতীক হিসেবে গণ্য। তিনি আরও বলেন, পদ্ম ফুল সাধারণত সাদা, গোলাপি অথবা হালকা গোলাপি রংয়ের হয়। অনেকেই লাল শাপলা আর পদ্ম ফুলের মধ্যে মিল থাকার কারণে চিনতে ভুল করেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত