ঢাকা শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ফেনীতে ঠোঁয়াস সবজি চাষে আগ্রহ বাড়ছে

ফেনীতে ঠোঁয়াস সবজি চাষে আগ্রহ বাড়ছে

ঠোঁয়াস অপ্রচলিত জলজ সবজি। এটি বাংলাদেশের একটি বিলুপ্তপ্রায় সবজি। সবজি হিসেবে মাছের সঙ্গে কিংবা ভেজে, কখনও কখনও ভর্তা হিসেবে খাওয়া যায়। স্বাদ কিছুটা শাপলার কাণ্ডের মতো। শাপলার মতোই কুটে বেছে নিতে হয়। ডাটা শাকের মতো বললেও চলে। তারপর ধুয়ে মাছ বা ডাল দিয়ে রান্না অথবা শাপলার মতো ভাজি করে খেতে অনেক স্বাদ। সবক্ষেত্রে এটি অতুলনীয়। এছাড়াও এটি আঁশ সমৃদ্ধ হওয়ায় ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী। বাজারে চাহিদা থাকায় এবং স্বল্প পুঁজিতে চাষের সুবিধা থাকায় দিনদিন কৃষকের আগ্রহ বাড়ছে ঠোঁয়াস চাষের প্রতি। ঠোঁয়াস বর্ষাকালে পাওয়া যায় বেশি। যে সময় মাঠে তেমন সবজি থাকে না, সে সময় পারিবারিক খাদ্যের সবজির যোগান দিয়ে থাকে ঠোঁয়াস।

ফেনী অঞ্চলে ঠোঁয়াস সবজি বয়োবৃদ্ধ সবার কাছে পরিচিত। ষাট ও সত্তরের দশকে এই অঞ্চলের কম বেশি সব মজা পুকুরে ঠোঁয়াস চাষ হতো। বর্ষা মৌসুমের আগেই এই সবজি লাগানোর আদর্শ সময় বলে কৃষি কর্মকর্তা চানান। ডোবা, জলাশয়, পুকুরের পাড় সংলগ্ন কিনারায়, পরিত্যক্ত নিচু জমিতে লাগানো যায়। ফেনীর সোনাগাজী, দাগনভূঞা, সদরের কিছু অংশ ও ফুলগাজীতে জমি, পুকুর, খাল-বিলের পানিতে এর বাণিজ্যিক চাষ হয়।

ফেনীর প্রায় এলাকায় অগভীর জলাশয় বা মজে যাওয়া পুকুরে ঠোঁয়াস চাষ করা হয়। এটি পানির ওপর ভাসে। ২-৩ মাসে ফসল ঘরে তোলা হয়। লাভ অধিক। কোনো প্রকার সার, কিটনাশক ছাড়াই চাষ করা যায় ও পরিচর্যার মাধ্যমে উৎপাদন বাড়ানো যায়। ঠোঁয়াস গাছ এর গীটসহ কাণ্ড বা সাকার একবার কাদামাটিতে লাগিয়ে দিলেই হয়। এটি পানি শুকিয়ে গেলেও মাসের পর মাস মাটিতে বাঁচে। পর্যাপ্ত পরিমান পানি পেলে এই সবজি দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এ সবজি চাষের জন্য বিশেষ কোনো পরিশ্রম নেই।

ঠোঁয়াস ফেনীর গ্রামীণ হাটবাজারে বেশি পাওয়া যায়। এছাড়া কিছু কিছু এলাকায় শহরের বাজারেও ঠোঁয়াস পাওয়া যায়। ফেনী শহরের বড়বাজারে (কাঁচা বাজার) কয়েকটি দোকানে ঠোয়াস পাওয়া যায়। ১২-১৪ ইঞ্চি লম্বা ২০-২২টি ডাটা নিয়েই একটি আটি। আটি প্রতি ৪০ থেকে ৫০ টাকা করে বাজারে বিক্রি হয়। দামে কম ও সুস্বাদু হওয়ায় মানুষ এই সবজিতে অতি আগ্রহী। ফেনী সদর উপজেলার কালিদহ ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের মৃত মৌলভী আমির হোসেনের পুত্র মোহাম্মদ হানিফ। একসময় নোয়াখালীতে ব্রিক ফিল্ডের চাকরি করতেন। পরে অসুস্থ হয়ে পড়লে তার ওপেন হার্ট সার্জারি হয়। তিনি সুস্থ হয়ে ২০০০ সাল থেকেই বাড়ির সামনে ১৬ শতাংশের মজা পুকুরে ঠোঁয়াস চাষ শুরু করেন। তিনি বলেন, সামান্য ঘাস, আগাছা পরিষ্কার করা হলেই ঠোঁয়াস মোটা এবং তাজা হয়। তিনি প্রতিদিনই ঠোঁয়াস তুলে পরিষ্কার করে বাজারে নিয়ে বিক্রি করেন এতে তার আয়ও ভালো হয়। আয় থেকে চলছে তার পরিবার। সন্তানদের পড়ালেখাসহ সবকিছু। তিনি আরও বলেন, যারা বেকার রয়েছেন, তারা তাদের বাড়ির সম্মুখে বা পার্শ্ববর্তী মজা পুকুরে বা জলাশয় ঠোঁয়াস চাষ করলে পরিবারের সবজির চাহিদা পূরণ হবে, লাভও হবে।

ফেনী শহরতলীর বিরলী বাজারের সবজি ব্যবসায়ী নুর নবী বাড়ি সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের বিরলী গ্রামে। বাড়ির সামনে ২৫ ডিসিমেলের একটি জলাশয়ে ঠোঁয়াস চাষ করেন। নিজে পানি থেকে তুলে পরিষ্কার করে বাজারে এনে অন্যান্য সবজির সঙ্গে বিক্রি করেন। এতে পুঁজি ছাড়া তার ভালো লাভ হয়।

ফেনীর বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রেজাউল গনি পলাশ বলেন, আমি প্রায়শ : বাজারে এই অপ্রচলিত সবজিটা খুঁজি। কখনও পাই, কখনও পাই না। যখনই পাই, যত দামি হোক আমি এটা কিনে বাসায় নিয়ে যাই এবং পরিবারসহ সবজি হিসেবে ভাতের সঙ্গে খেয়ে থাকি।

চন্দ্রপুর এলাকার গৃহিণী ফারিয়া আক্তার ও নাসিমা আক্তার দুইজনেই ঠোঁয়াসের নিয়মিত ক্রেতা। আমরা প্রতিনিয়তই বাজার থেকে ঠোঁয়াস পরিবারের জন্য নিয়ে রান্না করে থাকি। এটি দামেও কম পাশাপাশি রন্ধন-প্রণালীও সহজ এবং খেতেও সুস্বাদু।ফেনী সদর উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবু তৈয়ব বলেন, ঠোঁয়াস একটি অপ্রচলিত বিলুপ্তপ্রায় সবজি। এটি চাষে তেমন পরিশ্রম হয় না ।বিশেষ করে বর্ষাকালে এটি উৎপাদন হয়। যখন মাঠে অন্যান্য সবজি থাকে না, তখন এই সবজিটি সাপোর্ট দিয়ে থাকে। এটি রন্ধন প্রণালীও সহজ । আশ সমৃদ্ধ হওয়ায় ঠোঁয়াস ডায়াবেটিস রোগীর জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটা যদি সর্বত্র ছড়িয়ে দেয়া যায় তাহলে মানুষের বেশ উপকার হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত