
পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্রের ঢেউ আর অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা দেশের অন্যতম প্রধান পর্যটনকেন্দ্র। বছরে লাখো দেশি বিদেশি পর্যটকের পদচারণায় মুখর থাকে এ সৈকত নগরী। কিন্তু দুর্ঘটনা, অসুস্থতা কিংবা আকস্মিক শারীরিক সমস্যায় পড়লে পর্যটক ও স্থানীয় মানুষদের একমাত্র ভরসা হওয়া উচিত ছিল কুয়াকাটা ২০ শয্যা হাসপাতাল। অথচ বাস্তবে সেই হাসপাতাল এখন চিকিৎসাহীন এক ফাঁকা ভবন মাত্র।
২০১০ সালে কুয়াকাটা ২০ শয্যা হাসপাতালের যাত্রা শুরু হয় একজন চিকিৎসককে দিয়ে। পরবর্তীতে ধাপে ধাপে নিয়োগ দেওয়া হয় ১৭ জনকে। নিয়ম অনুযায়ী এখানে থাকার কথা চারজন জুনিয়র কনসালটেন্ট, একজন আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ও একজন মেডিকেল অফিসারের। কিন্তু বর্তমানে এসব পদে কেউই দায়িত্বে নেই। জরুরি বিভাগ কোনোভাবে চলছে মাত্র একজন উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসারের ওপর ভর করে সেটিও খণ্ডকালীনভাবে। নিয়োগপ্রাপ্ত ১৭ জনের মধ্যে এখন ১২টি পদ পুরোপুরি শূন্য। যারা কর্মরত, তাদের অনেকে আছেন প্রেষণে কেউ কলাপাড়ায়, কেউ বা সিভিল সার্জন অফিসে। এ কারণে হাসপাতালের কার্যক্রম প্রায় অচল হয়ে পড়েছে।
কুয়াকাটার স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটকরা বলছেন, হাসপাতালে গেলে চিকিৎসা সেবার চেয়ে ফেরত আসতেই হয় বেশি। একজন রোগীর স্বজনের অভিমত, এখানে ডাক্তারই নেই। বাচ্চাকে জ্বরে নিয়ে এসেছিলাম, কিছু না দিয়ে বলল কলাপাড়া চলে যেতে। এত দূরে যাওয়া সম্ভব নয় সবসময়।
অন্যদিকে কর্তব্যরত এক নার্স জানান, রোগী আসে, কিন্তু চিকিৎসক না থাকায় আমরা কিছুই করতে পারি না। আমাদেরও খারাপ লাগে। শুরু থেকেই এ হাসপাতাল কখনওই পূর্ণ সক্ষমতায় চালু হয়নি। চিকিৎসক সংকট, অনিয়ম আর দায়সারা মনোভাবের কারণে হাসপাতালের কার্যক্রম গড়পড়তা পর্যায়ের বাইরে উঠতে পারেনি। সবশেষ এখানে কর্মরত ছিলেন মেডিকেল অফিসার মুমসাত সায়েম পুনম। গত ১৭ এপ্রিল তিনি প্রশিক্ষণে যান, কিন্তু আর ফেরেননি। সেই সময় থেকেই চিকিৎসকশূন্য অবস্থায় পড়ে আছে হাসপাতালটি।
এ বিষয়ে পটুয়াখালী সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ খালেদুর রহমান মিয়া বলেন, চিকিৎসক সংকট শুধু কুয়াকাটায় নয়, সারাদেশেই বিরাজমান। তবে পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটার মতো জায়গায় জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক পদায়ন অত্যন্ত প্রয়োজন। সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো প্রতিদিন লাখো মানুষ ছুটে আসে কুয়াকাটায়। কিন্তু দুর্ঘটনা বা অসুস্থতার ঘটনায় ভরসা করতে হয় ৮০-৮৫ কিলোমিটার দূরের পটুয়াখালী জেলা হাসপাতালে। দ্রুত চিকিৎসা না পেয়ে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ ফিরে যাচ্ছেন হতাশ হয়ে। জাতীয় পর্যায়ে কুয়াকাটার গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে। পর্যটন উন্নয়নে ব্যাপক অর্থ বিনিয়োগ করা হলেও স্বাস্থ্যসেবায় অবহেলা চোখে পড়ার মতো। স্থানীয়রা বলছেন, কুয়াকাটায় কার্যকর হাসপাতাল গড়ে না তুললে পর্যটন শিল্পের বিকাশ যেমন বাধাগ্রস্ত হবে, তেমনি ঝুঁকির মুখে পড়বে হাজারো মানুষের জীবন।