ঢাকা রোববার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

মিশ্র ফল বাগানে ফিরছে সচ্ছলতা

মিশ্র ফল বাগানে ফিরছে সচ্ছলতা

কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার ৯নং মাইজখার ইউনিয়নের আওড়াল গ্রাম। সবুজে মোড়া এই গ্রামের এক কোণে গেলে চোখে পড়বে এক অসাধারণ দৃশ্য। ২০০২ সালে রফিকুল ইসলাম কালা মিয়া নিজ উদ্যোগে বাড়ির পাশে পতিত জমিতে এই ফলের বাগান গড়ে তোলেন। তিনি দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে নাম করা বিখ্যাত বিখ্যাত নার্সারি থেকে এসব দেশি-বিদেশি ফলের ছাড়া এনে এ বাগান গড়ে তোলেন। রফিকুল ইসলাম কালা মিয়া জানান, এ বাগান গড়ে তোলার পিছনে এ পর্যন্ত খরচ করেছেন ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এখনও তিনি বিদেশি বিভিন্ন ফলের চারা সংগ্রহের জন্য চেষ্টা করছেন। অনেক সময় তিনি অনলাইনের মাধ্যমেও দেশে বিদেশি ফলের ছাড়া সংগ্রহ করে বাগান করছেন। ৭০ শতাংশ জমির ওপর গড়ে ওঠা এক নয়নাভিরাম ফল বাগান। এটি কোনো সাধারণ বাগান নয়, এটি যেন কৃষক রফিকুল ইসলাম কালা মিয়ার স্বপ্ন আর পরিশ্রমের জীবন্ত প্রতিচ্ছবি।

বাগানের শুরু থেকে দুই থেকে তিন বছর পর্যন্ত গাছে কোন ফুল বা ফল আসেনি। তিন থেকে চার বছর পর বিভিন্ন গাছের ফুল ও ফল আসা শুরু করে। এখন তার বাগানে গেলে দেখা যায় ,বিভিন্ন গাছে ফুল ও ফল ধরে আছে, যা দেখলে মন জুড়িয়ে যায়। দেশি-বিদেশি ফলের সমাহার এবং সেইসঙ্গে নানা রঙের ফুলের বিপুল সমাবেশ এই বাগানকে দিয়েছে এক অন্যন্য মাত্রা।

ফলের বৈচিত্র্যে মুগ্ধতা রফিকুল ইসলাম কালা মিয়ার এই বাগানটি যেন ফলপ্রেমীদের জন্য এক স্বর্গ। দেশি ফলের মধ্যে আম, কাঁঠাল, পেঁপে, বিভিন্ন জাতের কলা, জাম, লিচু তো আছেই; এর পাশাপাশি রয়েছে থাই পেয়ারা, মাল্টা, ড্রাগন ফল, বিদেশি লেবু, অ্যাভোকাডো, রাম্বুটান, ভিয়েতনামী নারিকেলসহ নানা ধরনের বিদেশি ফল। কৃষক কালা মিয়া শুধু গতানুগতিক চাষেই সন্তুষ্ট থাকেননি, তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন নতুন নতুন ফলের জাত নিয়ে। সুদূর চীন, থাইল্যান্ড বা মালয়েশিয়ার ফলও এখন শোভা পাচ্ছে তার বাগানে। সম্পূর্ণ জৈব পদ্ধতিতে চাষ করার কারণে তার ফলগুলোর স্বাদ ও গুণগত মানও থাকে অসাধারণ। স্থানীয় বাজারে তো বটেই, দূর-দূরান্ত থেকেও মানুষ আসে এই বাগানের ফল কিনতে। কালা মিয়া বলেন, আমার বাগানের মালটা মিষ্টি আমি স্থানীয় বাজারে এগুলো ১০০ টাকা কেজি বিক্রি করি। অনেকে এসে আমার বাড়ি থেকে বাগানের ফল কিনে নিয়ে যায়। কেউ কেউ আবার আমার ফল গাছের কলম কেনার জন্য ও আসে। ফুলের শোভা ও সুবাস বাগানকে শুধু ফল উৎপাদনে সীমাবদ্ধ না রেখে কালা মিয়া এটিকে এক মনোরম উদ্যানে পরিণত করেছেন। ফলের গাছগুলোর ফাঁকে ফাঁকে আর বাগানের চারপাশে তিনি সাজিয়েছেন দেশি-বিদেশি ফুলের মেলা।

পুরো বাগান জুড়ে ফুল ও ফলের সুবাস এক শান্তিদায়ক আবহ তৈরি করে। সকালে কিংবা বিকালে এই বাগানের ভেতর দিয়ে হাঁটলে মন জুড়িয়ে যায়। ফুলের এই সমাহার মৌমাছি ও প্রজাপতিদেরও প্রিয় ঠিকানা, যা পরাগায়নের মাধ্যমে ফলনেও সহায়তা করে। কৃষিতে এক নতুন প্রেরণা কালা মিয়ার এই উদ্যোগ কেবল তার ব্যক্তিগত সাফল্য নয়, এটি স্থানীয় কৃষকদের জন্যও এক অনুপ্রেরণার উৎস। সনাতন পদ্ধতির বাইরে বেরিয়ে এসে কীভাবে আধুনিক এবং বৈচিত্র্যময় কৃষি কাজ করা যায়, তা তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন। অনেকে তার বাগান দেখতে আসেন, জানতে চান চাষাবাদের কৌশল। কালা মিয়াও সানন্দে তার অভিজ্ঞতা অন্যদের সঙ্গে ভাগ করে নেন। তিনি প্রমাণ করেছেন, সামান্য জমিতেও পরিকল্পনা ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে দারুণ কিছু করা সম্ভব। তার এই ৭০ শতাংশ জমির বাগানটি এখন এলাকার একটি মডেল বাগান হিসেবে পরিচিত। অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা ও পরিবেশের প্রতি অঙ্গীকার এই ফল ও ফুলের বাগান কালা মিয়াকে এনে দিয়েছে অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা। ফলের ভালো ফলন ও ফুলের বাণিজ্যিক মূল্য তার পরিবারকে সচ্ছলতা দিয়েছে। তবে অর্থের চেয়েও বড় হলো, পরিবেশের প্রতি তার অঙ্গীকার। রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার কমিয়ে তিনি প্রকৃতিবান্ধব উপায়ে চাষ করছেন, যা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এই বাগান স্থানীয় জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণেও একটি ছোট পদক্ষেপ। চান্দিনার আওড়াল গ্রামের কালা মিয়ার ৭০ শতাংশ জমির এই ফল বাগানটি যেন এক জীবন্ত পাঠশালা। এটি শুধু ফল বা ফুল উৎপাদন করে না, বরং দেখিয়ে দেয় প্রকৃতিকে ভালোবেসে, নিজের শ্রম ও মেধা দিয়ে কিভাবে একটি স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়া যায়। কঠোর পরিশ্রম আর সৃজনশীলতা যে জীবনের গতিপথ বদলে দিতে পারে, তার এক উজ্জ্বল উদাহরণ এই কালা মিয়ার ফল বাগান।

কালা মিয়া জানান, আমি যদি কৃষি কর্মকর্তাদের সাহায্য সহযোগিতা পেতাম তাহলে হয়তো আমার ফলের বাগান আর ও সুন্দর করে গড়ে তুলতে পারতাম। এ ব্যাপারে চান্দিনা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোর্শেদ আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমি ইউনিয়ন কৃষি কর্মকর্তা কে বলব বাগানটি দেখে বাগানের মালিককে সঠিক পরামর্শ দেওয়ার জন্য বলব।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত