ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ফেনীতে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বাড়ছে

ফেনীতে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বাড়ছে

ফেনীতে ঋতু পরিবর্তনে ঠান্ডাজনিত রোগে কাবু হচ্ছে শিশুরা। ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত রোগী ভর্তি থাকায় ২৫০ শয্যার ফেনী জেনারেল হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডের মেঝেতেও মিলছে না ঠাঁই। নিউমোনিয়া, জ্বর, সর্দিসহ শ্বাসতন্ত্রজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীরা ওয়ার্ডের বারিন্দাসহ আশপাশের মেঝেতে গাদাগাদি করে অবস্থান করে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছে।

এতে ধারণ ক্ষমতার পাঁচ গুণ বেশি রোগী ভর্তি হওয়ায় চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে চিকিৎসক ও সেবিকারা। বহিঃবিভাগে যেখানে সাধারণভাবে শিশু রোগীর সংখ্যা থাকত গড়ে ৩০০ কাছকাছি এখানে তা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। সদর উপজেলার ফাজিলপুর ইউনিয়নের উত্তর ফাজিলপুর গ্রাম থেকে ১৫ দিন বয়সি শিশু মরিয়ম জান্নাত কে নিয়ে তার মা মর্জিনা আক্তার গত বৃহস্পতিবার ভর্তি হয়েছেন হাসপাতালে। শিশু জন্মের পরপরই নিউমোনিয়াজনিত রোগে আক্রান্ত হলে চিকিৎসকের পরামর্শে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। বেড না পাওয়ায় ওয়ার্ডের মেঝেতে বিছানা বিছিয়ে শিশুটির চিকিৎসাসেবা নিতে হচ্ছে বলে তিনি জানেন।

একই অবস্থা সদর উপজেলার শর্শদি ইউনিয়ন থেকে আগত আব্রাহাম ইসলামের। সাড়ে তিন মাস বয়সি শিশু শ্বাসতন্ত্র জনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে গত বুধবার এই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। টানা তিন দিন ধরে হাসপাতালের মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিলেও বেডের দেখা মিলছে না। শিশুটির মা ফাতেমা আক্তার অভিযোগ করে বলেন, হাসপাতালে ভর্তি থাকলেও কোনো রকমের ওষুধ হাসপাতাল থেকে মিলছে না। সব কিছু বাহির থেকে কিনতে হচ্ছে। ফেনী জেলার পার্শ্ববর্তী কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার আলকরা গ্রাম থেকে চিকিৎসা নিতে এসেছেন পাঁচ মাস বয়সের শিশু মুনতাসির মাহমুদ। শিশু ওয়ার্ডের ভেতরে ও মেঝেতে জায়গা না পাওয়া হাসপাতালটির বারিন্দায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মাটিতে শুয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। সকালে একবার রাউন্ডে ডাক্তার দেখে গেলেও সারাদিন আর চিকিৎসকের দেখা মিলে না বলে অভিযোগ করেছেন মা রোকসানা আক্তার। চলতি মাসের ১০ নভেম্বর থেকে ৬ দিন ধরে চিকিৎসা নিচ্ছেন হাসপাতালে।

২৫০ শয্যা ফেনী জেনারেল হাসপাতালের পুরাতন ভবনের দ্বিতীয় তলায় শিশু ওয়ার্ডে নির্ধারিত ২৬টি বেড থাকলেও গতকাল দুপুর পর্যন্ত সেখানে ভর্তি ছিল ১২৫ জন শিশু। প্রতিদিন গড়ে ২৫ থেকে ৩০ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। জেলার ছয় উপজেলা ছাড়াও নোয়াখালীর সেনবাগ, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম, চট্টগ্রামের বারইয়ার হাট ও খাগড়াছড়ি রামগড় থেকে রোগীরা এ হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। ধারণক্ষমতার পাঁচ গুণ রোগের চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে চিকিৎসা ও সেবিকারা। শিশু ওয়ার্ডে বর্তমানে রোটেশনে ১০ জন নার্স কাজ করলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসাসেবা দিতে ব্যাহত হচ্ছে। হাসপাতালটিতে তিনজন শিশু কনসালটেন্ট নিয়মিত চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন।

সিনিয়র নার্স বনানী বিশ্বাস বলেন, ‘গত অক্টোবর থেকে ঠান্ডা জনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ওয়ার্ডে রোগী বাড়তে শুরু করলেও নভেম্বরে সেটি প্রকোট আকার ধারণ করেছে। অক্টোবর মাসে দৈনিক গড়ে ৮০ জন রোগী ভর্তি থাকলেও নভেম্বরে ১১০ থেকে ১২৫ এর মধ্যে উঠানামা করছে। শিশুদের যেন নিরাপদে রাখা এবং সঠিক চিকিৎসা দেওয়া যায়, এটা এখন বড় চ্যালেঞ্জ।’ শিশু ওয়ার্ডের ইনচার্জ সিনিয়র স্টাফ নার্স রওনক জাহান বলেন, রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে ১৬ থেকে ১৭ জন নার্স প্রয়োজন। সেখানে মাত্র ১০ জন দায়িত্ব পালন করছে। প্রতিটি রোগীর বিপরীতে একাধিক স্বজন থাকায় হাসপাতালের স্বাভাবিক কার্যক্রমের বিঘ্ন ঘটছে। হাসপাতাল থেকে যতটুকু বরাদ্দ আছে রোগীদের জন্য সেই পরিমাণ জিনিসপত্র রোগীদের দেওয়া হচ্ছে। পর্যাপ্ত ওষুধ পত্রাদি সংকট থাকায় রোগীদের বাহির থেকে জিনিসপত্র কিনতে হচ্ছে।

হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ মো. ইকবাল হোসেন সিরাজ বলেন, ‘স্বল্প জনবল দিয়েও ভর্তিরত সকল রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। মেঝেতে ও বারিন্দায় ভর্তিরত রোগীদের স্যালাইন ও পর্যাপ্ত চিকিৎসা দেওয়া শেষে কিছুটা উন্নতি হলে নেবুলাইজার ব্যবহারের নিয়ম শিখিয়ে বাড়িতে পাঠানো হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ঋতু পরিবর্তনের এ সময়ে বিশেষ সতর্কতা প্রয়োজন। বিগত কয়েকদিন দিনে রোদ ও রাতে ঠান্ডা পড়ছে। শিশুদের ঠান্ডা পানি ও ধুলাবালি থেকে দূরে রাখতে হবে। বাসি বা খোলা খাবার খাওয়ানো যাবে না, তাজা ও পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মহিউদ্দিন আহম্মেদ বলেন, রোগীর সংখ্যা অতিরিক্ত হওয়ায় আমরা স্বাভাবিকভাবেই হিমশিম খাচ্ছি। হাসপাতালেও জনবল সংকট রয়েছে, তারপরেও সবাই সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। যত দ্রুত সম্ভব রোগীদের কে সারিয়ে তুলে আমরা হাসপাতাল থেকে তাদের রিলিজ দেওয়ার চেষ্টা করছি। আর কিছুদিন পর আবহাওয়া কিছুটা স্বাভাবিক হলে রোগী কমে যাবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত