শুধু একটা আবৃত্তি নয়- যেন সময়ের গায়ে শিহরণ বয়ে দেওয়া এক রেকর্ড! জনপ্রিয় আবৃত্তিশিল্পী রয়া চৌধুরী সম্প্রতি নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে শেয়ার করেছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ঐতিহাসিক বক্তৃতা ‘যদি আর বাঁশি না বাজে’, যা কবির সর্বশেষ অভিভাষণ হিসেবেই খ্যাত। আবৃত্তিটির অসামান্য আবেগ, গভীরতা আর স্বরভঙ্গিমায় মুগ্ধ হয়ে ইতিমধ্যেই পাঁচ লক্ষেরও বেশি দর্শক আবৃত্তিটিকে নিজেদের হৃদয়ে জড়িয়ে নিয়েছেন।
এই আবৃত্তি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় তোলপাড় পড়ে গিয়েছে।
নজরুলের ভক্তরা একে বলছেন ‘কালের কণ্ঠে কবির ফিরে আসা’, ‘রয়ার কণ্ঠে যেন বিদ্রোহীর আত্মা কথা বলছে’। রয়া নিজেও নিজের অনুভূতি চাপা রাখতে পারেননি। তিনি লিখেছেন- ‘সাধারণত কোনো কথ্য বক্তৃতার লিখিত রূপ বা এজাতীয় রচনাকে ‘অভিভাষণ’ বলা হয়। কিন্তু এতো সহজ ভাষায়, এতখানি আবেগ দিয়ে কেউ ভাষণ দিতে পারেন তা জানা ছিল না। ১৯৪১ সালের ৬ই এপ্রিল, মুসলিম ইন্সটিটিউট হলে ‘বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতি’র রজতজয়ন্তী অনুষ্ঠানে সভাপতির আসনে বসে নজরুল যে ভাষণ দিয়েছিলেন, সেটাই আজকের এই ‘যদি আর বাঁশি না বাজে’। দুরারোগ্য ব্যাধিতে বাকরুদ্ধ হয়ে যাবার আগে এটিই ছিল কবির শেষ বক্তৃতা। এই বক্তৃতা তার প্রেম, বিদ্রোহ, বেদনা, আত্মসমর্পণ সব কিছু একসঙ্গে ধরে রেখেছে। এ যেন কবির আত্মার অনুবাদ। যারা নজরুলকে সত্যিই বুঝতে চান, তাদের জন্য এর থেকে প্রামাণ্য কিছু হয় না। মাত্র ছয় মিনিটের এই বক্তৃতা আজও যেমন প্রাসঙ্গিক, তেমনই বিদ্রোহের মতো চিরতরুণ।’
সত্যিই, আজকের সময়ে দাঁড়িয়ে নজরুলের বলা এই কথাগুলি যতটা ব্যক্তিগত, ততটাই সার্বজনীন। ‘আমি প্রেম দিতে এসেছিলাম, প্রেম পেতে এসেছিলাম’ এই একটি বাক্যই যেন আমাদের সামষ্টিক চেতনা-এ গেঁথে যায়। রয়ার নিপুণ স্বর, সংযত আবেগ, এবং গভীর পাঠ তার এই পরিবেশনাটিকে করে তুলেছে কালজয়ী। ফেসবুকে এরইমধ্যে ভাইরাল হওয়া এই আবৃত্তিটি নজরুলপ্রেমীদের মধ্যে নতুন করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। নজরুলের জন্মদিনকে সামনে রেখে এমন একটি আবৃত্তি যেন বিদ্রোহী কবির প্রতি এক অভিনব শ্রদ্ধাঞ্জলি।
রয়া চৌধুরী আধুনিক বাংলা আবৃত্তি জগতের এক উজ্জ্বল ও সম্মানিত নাম। তার কণ্ঠে কবিতার পংক্তিগুলো শুধু উচ্চারিত হয় না, তারা যেন হৃদয়ের গহীন থেকে উঠে এসে শ্রোতার আত্মায় দোলা দেয়। আবৃত্তিকে তিনি কেবল শৈল্পিক অভিব্যক্তি নয়, আত্মার ভাষা হিসেবে তুলে ধরেছেন। জনপ্রিয় আবৃত্তিশিল্পী রয়া চৌধুরী সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সির ফ্র্যাঙ্কলিন টাউনশিপ থেকে ‘সার্টিফিকেট অব রেকগনিশন’ অর্জন করেছেন। তার আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক অবদানকে সম্মান জানিয়ে ফ্র্যাঙ্কলিন টাউনশিপের মেয়র ফিলিপ ক্রেমার এই বিশেষ সম্মাননা প্রদান করেন। এছাড়াও, রয়া চৌধুরী তার কণ্ঠনৈপুণ্য ও শিল্পসাধনার জন্য পেয়েছেন ভারতের ২১তম টেলি সিনে অ্যাওয়ার্ড, বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল ফেম অ্যাওয়ার্ড, বেস্ট রেসিটেশন আর্টিস্ট অ্যাওয়ার্ড, বাংলাদেশ অ্যাচিভারস অ্যাওয়ার্ড এবং চারদিকে সেলফ-রিলায়ান্ট অ্যাওয়ার্ডসহ একাধিক সম্মাননা।