ঢাকা শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫, ৮ চৈত্র ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

রহমতের সুবিশাল শামিয়ানা

রহমতের সুবিশাল শামিয়ানা

দর্শনের একটি গল্প। জীবন ও জগতের জটিল রহস্য সহজভাবে বুঝানোর জন্য এই গল্পের অবতারনা। মাছদের ঝাঁকে হঠাৎ এক তরুণ মাছ প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল, জীবনভর শুনে আসছি, পানির অপর নাম জীবন। পানির অস্তিত্বের উপর টিকে আছে মাছের অস্তিত্ব। কিন্তু কোনো দিন দেখা পেলাম না পানির। পানির সাক্ষাৎ পেলেই নাকি মাছের জীবন সার্থক হবে। ভাইয়েরা বন্ধুরা! আসুন আমরা পানির অস্তিত্ব আবিষ্কার করার শপথ নেই। মাছদের মাঝে বিরাট সাড়া তুলল, জীবন ও অস্তিত্বের নতুন দার্শনিক জিজ্ঞাসা। সবার এক কথা, শুনেছি অমুক মহাসাগরে একটি মাছ আছে, জ্ঞানে অভিজ্ঞতায় সবার গুরু। একমাত্র তিনিই দিতে পারবেন এই জিজ্ঞাসার জবাব। বাতলে দিতে পারবেন, পানির ঠিকানা কোথায়। একদল মাছ রওনা দিল জীবনের রহস্য সন্ধানে সেই প্রাজ্ঞ জ্ঞানবৃদ্ধ মাছের দর্শনলাভের উদ্দেশ্যে। যাবার পথে নানা বিপদের কবলে অনেক মাছ হারিয়ে গেল। অবশেষে কিছু ভাগ্যবান মাছ জ্ঞানগুরু মাছের সাক্ষাৎ লাভে ধন্য হলো। গুরুজি আগন্তুক মাছদের আর্জি শুনে হাসল। আর তাদের কাছে একটিমাত্র প্রশ্ন করল, সেই প্রশ্নে খুলে গেল মাছদের জীবন জগতের অনন্ত রহস্যের জট। জানতে চাইল, আচ্ছা বল তো, পানি ছাড়া আছে কী? তোমরা যেখানে বিচরণ করছ, যা নিয়ে বেঁচে আছ, তার নাম কী বল তো। এ কথা শুনেই মাছদের দিব্যচক্ষু খুলে গেল। হ্যাঁ, চারপাশে অথৈ পানির মাঝেই তো আমাদের জীবন, বিচরণ ও বসবাস।

হ্যাঁ, আল্লাহর রহমতের সাগরেই সমগ্র জগৎ ভাসমান। গোলার্ধের কোথাও যদি সূর্যাস্ত না যায়, সেখানকার লোকেরা বুঝতে পারবে না, দিন কী বা আলোর কী পরিচয়। কারণ, আলো চিনতে হলে অন্ধকার থাকতে হবে। আল্লাহর অবিরত রহমতের মাহাত্ম্য বুঝানোর জন্য আল্লাহ মাঝে মাঝে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করেন, যা তার কহর ও গজবের মতো দেখায়। বস্তুত গভীর দৃষ্টিতে তাকালে এই গজবের মধ্যেও রমহতলুক্কায়িত।

শিশু সন্তান ঘুমিয়ে আছে অঘোর নিদ্রায়, দোলনায়। এদিকে দুধের প্রচণ্ড চাপে মায়ের স্তন টনটন করে, তখন মা গিয়ে ঘুমন্ত শিশুকে খোঁচা দেয়। শিশু কেঁদে ওঠে। মওলানা রুমি বলেন, মায়ের এই খোঁচা শত্রুতার বশে নয়, বরং গভীর মমতার ছোঁয়া। শিশুকে স্তন্য দানের কৌশল। আল্লাহতায়ালাও মানুষকে মাঝেমধ্যে কষ্টের মধ্যে ফেলে কাঁদান। আসলে বান্দাকে কষ্ট দেয়া আল্লাহর উদ্দেশ্য নয়, বরং আপন রহমতের ভাগীদার বানানোর কৌশল এই অনাদর। মূলত জীবন নদীতে নিত্য প্রবাহমান আল্লাহর রহমতের স্রোতধারা।

পবিত্র রমজানের শুরুতে সেই রহমতের ধারা পৃথিবীর জমিনে অবিরত প্রবাহিত হচ্ছে। উত্তরীয় হিমপ্রবাহ শুরু হলে শীতের পদধ্বনী আমরা শুনতে পাই। আবার যখন দক্ষিণা মলয় সুবাস প্রবাহিত হয় বসন্তের জীবন জাগার জয়গানে মেতে উঠে প্রকৃতি। অনুরূপ রমজানে কোরআনের বসন্তেও জেগেছে মুসলিম উম্মাহ কোরআনের ছায়ায়, ঈমানের চেতনায়।

হাদিস শরিফে বর্ণিত, আল্লাহর ১০০টি রহমত আছে। সেই ১০০-এর মধ্যে ৯৯টি নিজের কাছে রেখে দিয়েছেন। একটি রহমত প্রেরণ করেছেন পৃথিবীতে, সৃষ্টিরাজির মাঝে। সেই রহমতের পরশে জীবজন্তুর মায়েরা সন্তানদের ভালোবাসে। পশুপাখিদের মিতালি আছে। মানুষে মানুষে প্রীতির বন্ধন প্রতিষ্ঠিত। রহমত ও দয়ার আবহে গোটা সৃষ্টি পরস্পরের আকর্ষণে বিবর্তনরত, আকাশ মণ্ডলি ঘুর্ণনরত। আল্লাহর অনুগত ও অবাধ্য সবার জীবন প্রবাহ টিকিয়ে রেখেছে এই একটি রহমতের ছোঁয়া। মৃত্যুর পর পরকালে সংরক্ষিত ৯৯টি রহমত পাবে একমাত্র ইমানদাররা। এখন চিন্তা করুন, আল্লাহর রহমতের শামিয়ানা কত বিশাল। সেই সুবিশাল শামিয়ানায় ছায়া পাওয়া সবার কপালে জুটে না, প্রয়োজন নানা রকম সাধনা। এই সাধনার একটি হলো, রমজানে রোজা কৃচ্ছ্রতা ও আল্লাহর রহমতে সিক্ত হওয়ার প্রবল প্রেরণা।

পালনবাদীরা একটি প্রশ্ন করে, আল্লাহ তো তার রহমতের ছায়ায় ভালো মন্দ, মুমিন কাফের সবাইকে আচ্ছাদিত রেখেছেন। তোমরা মতলবীরা কেন মাঝখানে ভেদরেখা তৈরি কর। প্রশ্নটির উত্তর পেতে যেতে হবে গভীরে। বিসমিল্লাহির রহমানির রহিমে দুটি শব্দ রহমান রহীমেলুকিয়ে আছে আল্লাহর রহমত, এই প্রশ্নের জবাব। দুটি শব্দ কি পরিষ্কার-পরিচ্ছনতার মতো দুটি পরিপূরক শব্দ, নাকি আলাদা তাৎপর্য নিহিত দুয়ের মাঝখানে। তত্ত্বজ্ঞানী মুফাসসিররা বলেছেন, রহমান, দয়াবান তিনি, যার রহমত ও অনুগ্রহ জগতের সর্বত্র ভালো মন্দ, কাফের মুশরিক সবার জন্য অবারিত। আকাশ কাফেরদের মাথায় যেভাবে ছাঁয়া বিস্তার করে মুমিনদের মাথায়ও সেভাবে ছায়াপাত করে। বাতাস, আলো, চাঁদের জ্যোসনা সবার জন্য সমান। কিন্তু রহীমের মধ্যে যে রহমত ও দয়ার পরশ তা কেবল ঈমানদাররাই লাভ করতে পারে। রহমানের অনুগ্রহ ও রহমত দুনিয়ার জীবনে সব মানুষের জন্য সমানভাবে অবারিত। কিন্তু পরকালে আল্লাহর নাফরমান পাপাচারী মুশরিকরা রহীমিয়্যত আইকনেলুক্কায়িত আল্লাহর দয়া হতে বঞ্চিত হবে, পাবে শুধু ঈমানদার ও নেককাররা।

খাস জমি। সরকার ঘোষণা করল, এখানে বসতি স্থাপন করার অনুমতি আছে, তবে সরকারের অনুমতি নিতে হবে, নিয়ম মেনে কর দিতে হবে, রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করতে হবে। বৈধ কাগজপত্র তৈরি করতে হবে।

বেয়াড়া মাস্তানরা সরকারি নিয়ম মানল না, জমির অনুমতি বা কাগজপত্র নেয়ার পরোয়া করল না।

অনেকেই রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করে নামমাত্র খরচে বৈধ কাগজপত্র তৈরি করল। নতুন সরকার ক্ষমতায় এসে খাসজমি উদ্ধারের অভিযান শুরু করল, তখন যাদের জমির বৈধ কাগজপত্র আছে তারা জমি ও বাড়ির দখল পেল আর যাদের কাগজপত্র নেই তারা অবৈধ দখলদার চিহ্নিত হয়ে সব হারাল, জেল জরিমানার সম্মুখীন হল। পরকালেও মুমিন ও কাফেরের বিচার হবে এই নীতিতে। মুমিনদের জমি ও দখল বহাল থাকবে জান্নাতে। আর কাফের মুশরিক নাফরমানরা অবৈধ দখলদার সাব্যস্ত হয়ে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। আশা করি, পালনবাদি তাত্ত্বিকরা জবাব পেয়ে গেছেন। আসুন আমরা আল্লাহর অপার রহমতের পরশ পাওয়ার সাধনা করি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত