আপসহীন ইরানি জাতির জয়গাথার মধ্য দিয়ে ১২ দিনের শ্বাসরুদ্ধকর ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের আপাত অবসান হয়েছে। ইসরায়েল এবং মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিগুলোতে ইরানের দুঃসাহসিক হামলার পর যুদ্ধবিরতিতে আসতে বাধ্য হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতিতে ইরানকে সম্মত করাতে মধ্যস্থতা করেন কাতারের প্রধানমন্ত্রী। ইরানি সংবাদমাধ্যমগুলো বলেছে, যুদ্ধবিরতির জন্য ইরানের কাছে আকুতি জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র। রয়টার্স জানিয়েছে, কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুর রহমান আল থানির সঙ্গে ইরানের কর্মকর্তাদের ফোনালাপের মাধ্যমেই তেহরানের সম্মতি আদায় করা হয়। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, যুদ্ধবিরতির বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কাতারের আমিরের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, ইসরায়েল যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। এরপর তিনি তেহরানকে রাজি করাতে দোহার সহযোগিতা চান।
কাতারে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের আল-উদেইদ বিমানঘাঁটিতে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এই কূটনৈতিক উদ্যোগ শুরু হয়। ইরানের প্রেস টিভি গতকাল মঙ্গলবার সকালে বলেছে, যুদ্ধবিরতি শুরু হয়েছে। ইসরায়েলের চ্যানেল টুয়েলভ ও ওয়াইনেট সংবাদ চ্যানেলও বলেছে, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, ‘ যুদ্ধবিরতি এখন কার্যকর হয়েছে। দয়া করে, কেউ এটা লঙ্ঘন করবেন না।’ ট্রাম্পের আহ্বানের পরও হামলা-পাল্টাহামলা হয়েছে। যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পরও পরিস্থিতি নাজুক বলে উল্লেখ করেছে সংবাদমাধ্যমগুলো।
সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর : ইরানের ‘শক্তিশালী’ সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি। গতকাল মঙ্গলবার ভোরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে তিনি বলেন, ইসলামী প্রজাতন্ত্রের বিরুদ্ধে আগ্রাসনের জন্য ইহুদিবাদী শাসনব্যবস্থাকে ‘শাস্তি’ দেওয়ার জন্য সামরিক অভিযান ‘শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত’ অব্যাহত ছিল, যা স্থানীয় ইরান সময় ভোর ৪টায় শেষ হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘সব ইরানির সঙ্গে আমি আমাদের সাহসী সশস্ত্র বাহিনীকে ধন্যবাদ জানাই, যারা তাদের প্রিয় দেশকে তাদের শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত রক্ষা করতে প্রস্তুত এবং শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত শত্রুর যেকোনো আক্রমণের জবাব দিয়েছে।’
যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করায় নেতানিয়াহুর ওপর ‘বিরক্ত’ ট্রাম্প : ইরানে হামলা চালিয়ে ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ওপর ‘অত্যন্ত বিরক্ত’। সম্ভবত তিনি মনে করছেন, নেতানিয়াহু ‘বিশ্বাসভঙ্গ’ করছেন। আলজাজিরার যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি ফিল লাভেল এ কথা বলেছেন। ইউরোপে ন্যাটো সম্মেলনে যোগ দিতে রওনা হওয়ার আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প জানান, যুদ্ধবিরতির শর্ত ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তা লঙ্ঘন করায় তিনি ইসরায়েল ও ইরান- দুই পক্ষের প্রতিই ক্ষুব্ধ। আলজাজিরার প্রতিনিধি লাভেল বলেন, ট্রাম্প ইসরায়েল ও ইরান- উভয়ের ওপরই ক্ষুব্ধ ছিলেন। তবে তার অতিরিক্ত রাগটা যে ইসরায়েলের দিকে ছিল, তা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল। তিনি আরও বলেন, ‘ট্রাম্প স্পষ্টতই বেশ বিরক্ত এবং সম্ভবত নেতানিয়াহু বিশ্বাসভঙ্গ করেছেন, এমন বোধ করছেন।’ তাছাড়া, ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যালে এক স্ট্যাটাসে ইরানে বোমা ফেলতে ইসরায়েলকে নিষেধ করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘ইসরায়েল, ওই বোমাগুলো ফেলো না। তুমি যদি এটা করো, তা হবে (যুদ্ধবিরতির) বড় ধরনের লঙ্ঘন। পাইলটদের এখনই ঘরে ফেরাও!’
যুদ্ধবিরতি কার্যকরের ঘোষণা দেন ট্রাম্প : এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানান, ইসরায়েল ও ইরান একটি ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক যুদ্ধবিরতিতে’ সম্মত হয়েছে। নিজের মালিকাধীন সামাজিকমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, আগামী ‘প্রায় ছয় ঘণ্টার মধ্যে’ এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে, উভয় দেশ তাদের চলমান সামরিক অভিযান ধীরে ধীরে গুটিয়ে নেবে। তিনি আরও জানান, প্রথম ১২ ঘণ্টা ইরান যুদ্ধবিরতি পালন করবে এবং পরবর্তী ১২ ঘণ্টা তা অনুসরণ করবে ইসরায়েল। ২৪ ঘণ্টা পূর্ণ হলে এই ১২ দিনের যুদ্ধকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘সমাপ্ত’ ঘোষণা করা হবে। তিনি এই সংঘাতকে ‘১২ দিনের যুদ্ধ’ বলে আখ্যা দিয়ে লেখেন, ‘এটি এমন একটি যুদ্ধ, যা বছরের পর বছর ধরে চলতে পারত এবং গোটা মধ্যপ্রাচ্যকে ধ্বংস করে দিতে পারত; কিন্তু তা হয়নি; আর কখনও হবে না।’ ট্রাম্প পোস্টে বলেন, ‘আমি ইসরায়েল ও ইরান- উভয় দেশের ধৈর্য, সাহস ও বুদ্ধিমত্তার প্রশংসা করছি, যাদের দৃঢ় সিদ্ধান্ত এই যুদ্ধের অবসান ঘটিয়েছে।’
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত ৭ : যুদ্ধবিরতি নিয়ে পক্ষগুলোর মধ্যে সম্মতির খবর পাওয়া গেলেও হামলা-পাল্টাহামলা হয়েছে। টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলের বিরসেবা শহরে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় সাতজন নিহত হয়েছেন। এর আগে আলজাজিরার খবরে ওই সাতজনের গুরুতর আহত হওয়ার তথ্য প্রচার করা হয়েছিল। ইসরায়েলের জরুরি পরিষেবা মাগেন ডেভিড অ্যাডমের বরাত দিয়ে সিএনএন-ও সাতজন আহত হওয়ার খবর জানিয়েছিল। সংবাদমাধ্যমটি বলেছে, বিরসেবায় একটি আবাসিক ভবনে হামলা হয়েছে। অনেক জায়গা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। সেখানে ব্যাপকভিত্তিতে উদ্ধার তৎপরতা চলছে। ইসরায়েল জানিয়েছে, বিরসেবায় আঘাত হানা ক্ষেপণাস্ত্র ইরান থেকে নিক্ষেপ করা হয়েছে। তবে, যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর ইসরায়েলে হামলার কথা অস্বীকার করেছে ইরান।
ইসরায়েলের কয়েকটি শহর ধ্বংসস্তূপ : ইরান গতকাল মঙ্গলবার ভোরে এক ঝাঁক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী বা আইডিএফ। সকালে তাদের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘কিছুক্ষণ আগে, আইডিএফ ইরান থেকে ইসরায়েলের ভূখণ্ডের দিকে নিক্ষেপ করা ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে। ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাত হানার আশঙ্কায় সতর্কতামূলক সাইরেন বাজানো হয়। বাসিন্দাদের পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত আশপাশের সুরক্ষিত এলাকায় আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে। টাইমস অব ইসরায়েলের খবরে বলা হয়, হামলার আশঙ্কায় দেশটির উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় সাইরেন বেজেছে। ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে কয়েকটি ভবন মাটির সঙ্গে মিশে গেছে বলে জানায় জরুরি পরিষেবা মেগান ডেভিড সার্ভিস। আলজাজিরা জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ ইরানের রাজধানী তেহরানে ‘তীব্র হামলার’ নির্দেশ দিয়েছেন। এদিকে ইরান বলেছে, ইসরায়েল যদি ইরানে হামলা করে, তাহলে কঠোর জবাব দিতে নিরাপত্তা বাহিনী পুরোপুরি প্রস্তুত।
তেহরানে ইসরায়েলের হামলা, বিজ্ঞানী নিহত : ইসরায়েলও ইরানের রাজধানী তেহরানের বিভিন্ন জায়গায় স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার ভোরের দিকে হামলা চালিয়েছে। হামলায় সাদিক সাবের নামে দেশটির আরেকজন পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত হন বলে জানিয়েছে আলজাজিরা। হামলার বেশকিছু ছবি যাচাই করে সিএনএন বলছে, তেহরানের মধ্যাঞ্চলের আকাশে কালো ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে। তেহরানের উপকণ্ঠে মেহরান আর ডিস্ট্রিক্ট ৬ এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদ জায়গায় সরে যেতে নির্দেশনা দিয়েছিল ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। এর পরই তেহরানে হামলার খবর পাওয়া গেল। এ ছাড়া ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী তেহরানের ডিস্ট্রিক্ট ৭ এলাকার বাসিন্দাদেরও সরে যাওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে।
কাতারে মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানের হামলা, শ্বাসরুদ্ধকর রাত : এর আগে সোমবার রাতে কাতারে অবস্থিত মার্কিন সামরিক ঘাঁটিগুলো লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। কাতারের রাজধানী দোহার আকাশে একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। আল-উদেইদ ঘাঁটির দিকে লক্ষ্য করে বেশকিছু ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়। শনিবার দিনগত রাতে ইরানের তিন পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা করে যুক্তরাষ্ট্র। ইরানের পক্ষ থেকে আগেই জানানো হয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্র যদি সরাসরি হামলা চালায়, তবে তার জবাব কঠিন হবে। আল-উদেইদে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কথা আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেছে ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা আইআরজিসি। দেশটির তাসনিম নিউজের বরাতে আল-জাজিরা জানিয়েছে, ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন হামলার প্রতিশোধ নিতে এ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে আইআরজিসি।
ইরাকে তিন সামরিক ঘাঁটি আক্রান্ত : সোমবার দিবাগত রাতে ইরাকে অবস্থিত তিনটি সামরিক ঘাঁটিতেও হামলা হয়েছে। একজন সামরিক কর্মকর্তার বরাতে ইরাকের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম আইএনএর খবরে বলা হয়, রাজধানী বাগদাদের উত্তরে তাজি সামরিক ঘাঁটিতে অজ্ঞাত ড্রোনের হামলা হয়েছে। বাগদাদ থেকে কুর্দিস্তান টোয়েন্টিফোর চ্যানেলের সংবাদদাতা ইরাকে বালাদ সামরিক ঘাঁটিতে হামলার খবর জানান। বাগদাদ থেকে ১০০ কিলোমিটার উত্তরে দেশটির সালাহউদ্দিন প্রদেশে এ সামরিক ঘাঁটির অবস্থান। হামলা হয়েছে ইরাকের ইমাম আলি সামরিক ঘাঁটিতেও। বাগদাদভিত্তিক আল-সুমাইরা টিভি নেটওয়ার্কের খবর, এই সামরিক ঘাঁটির রাডার লক্ষ্য করে হামলা হয়েছে। তবে হামলার পেছনে কে জড়িত, এটা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ইরাকের নাসিরিয়া প্রদেশের রাজধানীর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ইমাম আলি সামরিক ঘাঁটির অবস্থান।
আল-উদেইদে হামলায় পাঁচ আরব দেশের নিন্দা : আল-উদেইদ বিমান ঘাঁটিতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার নিন্দা জানিয়েছে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরাক, বাহরাইন ও লেবানন। পৃথক বিবৃতিতে তারা এই হামলাকে আন্তর্জাতিক আইন ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার বিরুদ্ধে হুমকি হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, ‘এই হামলা আন্তর্জাতিক আইন এবং পারস্পরিক সুশীল সম্পর্কের নীতিমালার সরাসরি লঙ্ঘন। এটি কোনো পরিস্থিতিতেই যৌক্তিক হতে পারে না।’ আরব আমিরাতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, ‘এই হামলা কাতারের সার্বভৌমত্ব ও আকাশসীমার লঙ্ঘন এবং জাতিসংঘ সনদ ও আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।’ ইরাকের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কাতারের ঘাঁটিতে হামলার পর তারা এ অঞ্চলজুড়ে ‘বিপজ্জনক ও দ্রুতগতির উত্তেজনার’ বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। বাহরাইন এক বিবৃতিতে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছে, ‘এটি কাতারের সার্বভৌমত্ব ও আকাশসীমার লঙ্ঘন এবং আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ সনদের সুস্পষ্ট বিরোধী।’ লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নাওয়াফ সালাম এক বিবৃতিতে বলেন, ‘ভ্রাতৃপ্রতিম রাষ্ট্র কাতারের ওপর চালানো এই আগ্রাসনে আমি সর্বোচ্চ মাত্রায় নিন্দা জানাচ্ছি এবং কাতারের সরকার ও জনগণের সঙ্গে লেবাননের একাত্মতা প্রকাশ করছি।’
কাতারি ভাইদের বিরুদ্ধে এই হামলা নয়- ইরান : আল-উদেইদ মার্কিন ঘাঁটিতে প্রতিশোধমূলক হামলা ভ্রাতৃপ্রতিম দেশ কাতারের বিরুদ্ধে নয় বলে জানিয়েছে ইরানের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা পরিষদ। ইরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ জানিয়েছে, আল-উদেইদ বিমান ঘাঁটিতে চালানো ক্ষেপণাস্ত্র হামলা কাতারের আবাসিক এলাকা থেকে দূরে পরিচালিত হয়েছে। পরিষদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এই পদক্ষেপ বন্ধুত্বপূর্ণ ও ভ্রাতৃপ্রতিম দেশ কাতার এবং এর সম্মানিত জনগণের জন্য কোনো হুমকি নয়। ইরান কাতারের সঙ্গে উষ্ণ ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক বজায় রাখতে এবং তা চালিয়ে যেতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ কাতার এই হামলাকে তাদের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন হিসেবে নিন্দা জানিয়েছে।
জয়ের আবহে যুদ্ধের ইতি টানল ইরান : ১২ দিনের যুদ্ধে ইসরায়েলে লাগাতার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। এসব হামলায় চতুর্থ প্রজন্মের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ব্যবহৃত হয়। এই হামলাকে ‘অকল্পনীয় ভয়াবহ’ বলে উল্লেখ করেছেন খোদ ইসরায়েলি সামরিক বিশ্লেষকরা। তেলআবিবসহ ইসরায়েলের বহু এলাকা লন্ডভন্ড হয়ে যায়। ইসরায়েলের অধিবাসীরা বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছেন মাটির নিচে অবস্থিত বাঙ্কারে। ইসরায়েল ৫০ জনেরও কম নাগরিকের প্রাণহানির কথা স্বীকার করলেও স্বাধীন গণমাধ্যমগুলো এর বহুগুণ বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন বলে ধারণা দিয়েছে। ইরানি হামলায় পুরোপুরি অচল হয়ে পড়ে ইসরায়েল। পুরো বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে অবৈধ দেশটি। বিভিন্ন দেশের সরকার তাদের নাগরিকদের ইসরায়েল থেকে সরিয়ে নেওয়ার জরুরি পদক্ষেপ নেয়।
যে কারণে ট্রাম্প যুদ্ধবিরতিতে বাধ্য হন : ইসরায়েল এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে মার্কিন নাগরিকদের চরম নিরাপত্তাহীনতার মুখে ইরানের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে আসতে বাধ্য হন ডোনাল্ড ট্রাম্প। একইভাবে ‘কল্পনাতীত’ হামলার মুখে যুদ্ধবিরতির পথ বেছে নেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
যুদ্ধবিরতির আগের দিন বিশ্বব্যাপী মার্কিন নাগরিকদের জন্য সতর্কবার্তা জারি করে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর। সোমবার প্রায় ২৫০ জন মার্কিন নাগরিক ও তাদের পরিবারের নিকটতম সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় ইসরায়েল ছেড়েছেন। সিএনএনের সাংবাদিক জেনিফার হ্যান্সলারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত শনিবার থেকে মোট সাতটি ফ্লাইট পরিচালনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
এসব ফ্লাইট গ্রিস, ইতালি ও সাইপ্রাসে অবতরণ করে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা এই দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের অংশীদারত্বের জন্য কৃতজ্ঞ, যারা ফ্লাইটগুলো গ্রহণ করেছে।’