জামায়াতে ইসলামীর জন্য পুরনো প্রতীক ‘দাঁড়িপাল্লা’ পুনরায় বরাদ্দ দিয়েছে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন (ইসি)। একই সঙ্গে দলটিকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে নিবন্ধন। দীর্ঘ আইনি লড়াই ও নিবন্ধন জটিলতার পর প্রতীক বরাদ্দের মধ্যদিয়ে দলটি এবার নতুন করে সক্রিয় রাজনীতিতে ফিরেছে। গতকাল মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে জামায়াতকে দাঁড়িপাল্লা প্রতীক ফিরিয়ে দেয় নির্বাচন কমিশন।
প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, যেহেতু রিপ্রেজেন্টেশন অব দ্য পিপল অর্ডার, ১৯৭২ এর আওতায় রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনের জন্য এ আদেশের আর্টিকেল ৯০বি এর শর্তানুযায়ী বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নামীয় দল কর্তৃক নিবন্ধনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নামীয় দলকে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের ৫ নভেম্বর ২০০৮/২১ কার্তিক ১৪১৫ তারিখের নিকস/প্র-৩/রাদ/৫(৪৪)/২০০৮/১১৪১ সংখ্যক প্রজ্ঞাপনমূলে নিবন্ধন দেওয়া হয়েছিল (নিবন্ধন নম্বর-০১৪, তারিখ : ৪ নভেম্বর ২০০৮); এবং যেহেতু, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে দায়েরকৃত রিট পিটিশন নম্বর-৬৩০ অব ২০০৯ এর প্রদত্ত রায়ের সূত্রে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের ১৩ কার্তিক ১৪২৫/২৮ অক্টোবর ২০১৮ তারিখের প্রজ্ঞাপনমূলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করা হয়।
‘যেহেতু, সিভিল আপিল নং ১৩৯ অব ২০১৩ উইথ সিভিল পিটিশন ফর লিভ টু আপিল নং ৩১১২ অব ২০১৩ এ আপিল বিভাগ কর্তৃক হাইকোর্ট বিভাগে দায়েরকৃত রিট পিটিশন নম্বর-৬৩০ অব ২০০৯ এর প্রদত্ত রায় বাতিলপূর্বক দলটির নিবন্ধন পুনর্বহালের আদেশ দিয়েছে; সেহেতু, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সিভিল আপিল নং ১৩৯ অব ২০১৩ উইথ সিভিল পিটিশন ফর লিভ টু আপিল নং ৩১১২ অব ২০১৩ এর প্রদত্ত রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নামীয় দলের নিবন্ধন বাতিলের বিষয়ে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক প্রকাশিত ২৮ অক্টোবর ২০১৮ তারিখের প্রজ্ঞাপনটি এতদ্বারা বাতিলক্রমে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন দলীয় প্রতীকসহ পুনর্বহাল করা হলো।’
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিলের যে রায় হাইকোর্ট দিয়েছিলেন, এক যুগ পর গত ১ জুন তা বাতিল করে দেন আপিল বিভাগ। সর্বোচ্চ আদালত বলেছে, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে এখন নির্বাচন কমিশন জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ও প্রতীকের বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে।
আদালতের আদেশের পর জামায়াতের নিবন্ধন ও দাঁড়িপাল্লা প্রতীক ফেরত দেওয়ার বিষয়ে কোরবানির ঈদের আগে ৪ জুন কমিশন সভায় সিদ্ধান্ত নেয় নির্বাচন কমিশন। সভা শেষে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেছিলেন, নির্বাচন কমিশন নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে জামায়াতে ইসলামী দলীয় নিবন্ধন ও প্রতীক ফেরত পাবে। তবে দলীয় প্রতীকটি ফেরতের ক্ষেত্রে দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষ করতে সময় লাগবে। এর তিন সপ্তাহের মাথায় প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করল ইসি সচিবালয়।
বর্তমানে নিবন্ধিত দল রয়েছে ৫০টি। প্রতীকসহ নিবন্ধন সনদ নেওয়ার জন্য জামায়াতে ইসলামীর এক প্রতিনিধিদলের কমিশনে যাওয়ার কথা রয়েছে। বর্তমানে ইসির সংরক্ষিত তালিকায় জামায়াতের দাঁড়িপাল্লা প্রতীক নেই। সেক্ষেত্রে প্রতীকটি বিধিমালায় সংশোধন এনে যুক্ত করতে হবে।
জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ বলেন, বিধিমালা সংশোধনের কাজ চলছে। দাঁড়িপাল্লা প্রতীক সেখানে যুক্ত হবে। আরও নতুন প্রতীক যুক্ত করে সংশোধনী জারি করা হবে শিগগির।
বর্তমানে সংসদের জন্য ৬৯টি দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রতীক রয়েছে। ইসি সচিবালয় থেকে নতুন কিছু প্রতীকসহ সব মিলিয়ে ১১৫টি প্রস্তাব রয়েছে। কমিশন পযালোচনা করে শিগগির প্রতীক চূড়ান্ত করা হবে।
এদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠকে বসছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। আজ বুধবার নির্বাচন কমিশন ভবনে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
সিইসির একান্ত সচিব মো. আশরাফুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বুধবার বেলা ১১টায় জামায়াতের একটি প্রতিনিধি দলকে বৈঠকের জন্য সময় দিয়েছেন সিইসি। কী নিয়ে আলোচনা হতে পারে আসন্ন এই বৈঠকে? এ বিষয়ে ইসির এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন সনদ ও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হতে পারে।