ঢাকা মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

বিভাজন বাড়ছে, জুলাই সনদ নিয়ে অনিশ্চয়তা

বিভাজন বাড়ছে, জুলাই সনদ নিয়ে অনিশ্চয়তা

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগের পতনের পর ‘জুলাই সনদ’ ঘোষণা নিয়ে বরাবরের মতো কঠোর অবস্থানে শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। সরকার আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ ঘোষণা দেওয়ার কথা থাকলেও তা নিয়ে এখন অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরে জুলাই ঐক্যে ফাটল ধরেছে।

গতকাল রোববার রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কার্যালয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থান উদযাপনে মাসব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, সরকার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই আগামী ৩ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আমরা নিজেদের মতো ঘোষণা করব ও ইশতেহার পাঠ করব। কারণ আমরা মনে করি, জুলাইয়ের ঐতিহাসিক স্বীকৃতি প্রয়োজন। এতে জুলাইয়ের অন্যান্য অংশীজনদেরও আহ্বান জানানো হবে। অন্য কেউ না চাইলেও তা হবে।

নাহিদ ইসলাম বলেন, ১ জুলাইয়ের কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকেই ফ্যাসিস্টের পতনের অধ্যায় শুরু হয়। এ এক বছরে আমাদের অনেক প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তি রয়েছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থান পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। তাই জুলাই শহিদদের স্মরণ করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। আর আহতদের প্রতিও আমাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকার ইতিহাস সংরক্ষণে কতটুকু দায়িত্ব পালন করছে, সেটি সরকারকেই স্পষ্ট করতে হবে। আর সরকারের পক্ষ থেকে জুলাই সনদের কথা বলা হয়েছে। আশা করি, সরকার তা ৫ আগস্টের মধ্যেই দেবে।

রাষ্ট্র সংস্কারের বিভিন্ন বিষয়ে একমত হয়ে জুলাই সনদ তৈরির লক্ষ্যে গতকাল দ্বিতীয় দফায় সপ্তম দিনের মতো দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ। এছাড়া, কমিশনের সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. মো. আইয়ুব মিয়া ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় অংশগ্রহণ করে- বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টিসহ ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা। আলোচনার শুরুতে সূচনা বক্তব্য দেওয়ার সময় কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ বলেন, কমিশন আপনাদের প্রতিপক্ষ নয়। আমরা রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য সরকারের অর্পিত গুরুত্বপূর্ণ একটি দায়িত্ব পালন করছি মাত্র।

গতকাল রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় অধিবেশনের বৈঠক শেষে দেশের স্বার্থে সংস্কার আলোচনার অগ্রগতি প্রয়োজন বলে উল্লেখ করে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ভাইস-চেয়ারম্যান অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, বলেন, আমরা কেউ পূর্বের অবস্থায় ফিরে যেতে চাই না। তাই দেশের স্বার্থে আপনারা বিষয়টি বিবেচনা করুন। যে অঙ্গীকার নিয়ে আমরা গত জুলাইয়ে ঐক্যবদ্ধ ছিলাম, তার কতটা অর্জিত হয়েছে? আমরা কি শুধু নিজের ও দলের স্বার্থ চাইব, নাকি দেশের স্বার্থও দেখব? আমরা আশা করি, বেশিরভাগ বিষয়ে রাজনৈতিকদলগুলোকে একমতে নিয়ে আসতে পারব। কমিশন হতে আগামী ২ জুলাই পরবর্তী আলোচনার দিন ধার্য করা হয়েছে। তবে, বৈঠকের সপ্তম দিনের উদ্বোধনী অধিবেশনে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, গত সাত দিনের বৈঠকে বিভিন্ন বিষয়ে কিছু অগ্রগতি হলেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি এখনও হয়নি। বহুল প্রত্যাশিত ‘জুলাই সনদ’ কবে নাগাদ হতে পারে, তা নিয়েও অনিশ্চয়তা প্রকাশ করেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ।

তিনি বলেন, গত সপ্তাহে আমরা কিছু ক্ষেত্রে অগ্রগতি অর্জন করেছি। কিন্তু সত্যি বলতে, আমরা যে ধরনের অগ্রগতি প্রত্যাশা করেছিলাম, সেখান থেকে এখনও কিছুটা পিছিয়ে আছি। অধ্যাপক আলী রীয়াজ জোর দিয়ে বলেন, এই অগ্রগতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ আমরা কেউই যেখানে ছিলাম সেখানে ফিরে যেতে চাই না। এটি শুধু আগামীকাল বা পরশুর বিষয় নয়, এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব রয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য ছিল ফ্যাসিবাদী শাসন থেকে নিজেদের মুক্ত করা। এর জন্য, আমাদের ফ্যাসিবাদকে সক্ষম করে এমন ব্যবস্থায় কাঠামোগত পরিবর্তন আনতে হবে। সেই সংকল্প নিয়ে আমরা একত্রিত হয়েছিলাম সবকিছু বাদ দিয়ে। আপনাদের কর্মীরাও তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন, নির্যাতন সহ্য করেছেন। সেই সংগ্রামের শক্তির ওপর আমরা আজ এখানে দাঁড়িয়ে আছি। আলী রীয়াজ রাজনৈতিক দলগুলোকে স্মরণ করিয়ে দেন, ঐকমত্য কমিশন কারো প্রতিপক্ষ নয়। এটা আপনাদেরই একটি অংশ। কমিশন কেবল একটি দায়িত্ব পালন করছে।

মূল প্রস্তাবগুলো সম্পর্কে তিনি বলেন, কমিশন প্রাথমিকভাবে ৭০ অনুচ্ছেদে সংস্কারের প্রস্তাব করেছিল। সেই ধারণাগুলো সংলাপের মাধ্যমে সংশোধন করা হয়েছে। সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কাঠামোতেও একই রকম অগ্রগতি হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সংসদের উচ্চকক্ষের বিষয়ে, আমাদের দুটি প্রস্তাব ছিল- একটিতে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত ১০৫ সদস্যের প্রস্তাব করা হয়েছিল। আপনারা এর বিরোধিতা করেছিলেন এবং সেটা ঠিক আছে। আমরা এর সংশোধন করেছি এবং ১০০ সদস্যের উচ্চকক্ষ গঠনের বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছি। তিনি উল্লেখ করেন, সাংবিধানিক সংস্কার কমিশনে পূর্বে প্রস্তাবিত মৌলিক নীতিমালা নিয়েও আলোচনা এগিয়েছে, আরও সংলাপের পরিকল্পনা রয়েছে। জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই সনদ চূড়ান্ত করার গুরুত্বের ওপর জোর দেন আলী রীয়াজ। তিনি সতর্ক করে বলেন, যেকোনো সাংবিধানিক সংশোধনী জনগণের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া উচিত এবং সেখানে স্বৈরাচারী প্রবণতাকে উৎসাহিত করা উচিত না।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত