বরাবরের মতো গতকালও রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধির সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সংবিধানের ৪৯ নম্বর অনুচ্ছেদ সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করেছে রাজনৈতিক দলগুলো। রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপের নবম দিনের বৈঠক শেষে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ সাংবাদিকদের বলেন, সংলাপে বড় ধরনের অগ্রগতি হয়েছে। এজন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে ধন্যবাদ দিতে চাই। কারণ সংস্কারের বিষয়ে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ছাড় দিয়েছে। বিশেষ করে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শন সম্পর্কিত বিধান এবং বিচার বিভাগ বিকেন্দ্রীকরণ বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আলী রীয়াজ বলেন, ‘বিগত দিনে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষেত্রে ক্ষমতার ব্যাপক অপব্যবহার হয়েছে। তাই রাজনৈতিক দলগুলো সংবিধানের ৪৯ নম্বর অনুচ্ছেদ সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করেছে। এ বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে; যা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার মধ্য দিয়ে বাস্তবায়িত হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের স্থায়ী আসন রাজধানীতে থাকবে। পাশাপাশি প্রতিটি বিভাগে এক বা একাধিক স্থায়ী বেঞ্চ থাকবে। সে বিষয়েও ঐকমত্য হয়।’ ড. আলী রীয়াজ আরও জানান, সংবিধানের ৪৯ নম্বর অনুচ্ছেদ সংশোধন বিষয়ে যে ঐকমত্য হয়েছে তা হলো ‘কোনো আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ প্রদত্ত যেকোনো দণ্ডের ক্ষমা ও বিরাম মঞ্জুর এবং যেকোনো দণ্ড মওকুফ, স্থগিত বা হ্রাস করার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির থাকবে। আইনের দ্বারা নির্ধারিত মানদ-, নীতি ও পদ্ধতি অনুসরণক্রমে ওই ক্ষমতা প্রয়োগ করা হবে।
ঢাকার পাশাপাশি সব বিভাগীয় শহরে হাইকোর্টের এক বা একাধিক স্থায়ী বেঞ্চ করার বিষয়ে সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্য হয়েছে বলে জানান আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, ‘সংবিধানের ৪৯ নম্বর অনুচ্ছেদ সংশোধন বিষয়ে ঐকমত্য কমিশনের দেওয়া প্রস্তাবের আলোকে যে রাজনৈতিক ঐকমত্য তৈরি হয়েছে, তা ভবিষ্যতে সংবিধানে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে বাস্তবায়িত হবে। এতদিন ধরে এ ক্ষমতার যে অপব্যবহার হয়েছে তা বন্ধ হবে।’ বিচার বিভাগ বিকেন্দ্রীকরণ সম্পর্কিত বিষয়ে যে অগ্রগতি হয়েছে তা উল্লেখ করে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘রাজধানীতে সুপ্রিম কোর্টের স্থায়ী আসন থাকবে তবে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন নিয়ে প্রধান বিচারপতি সময়ে সময়ে যে সার্কিট বেঞ্চ প্রতিষ্ঠা করতে পারতেন তার পরিবর্তে রাজধানীতে সুপ্রিম কোর্টের স্থায়ী আসন থাকবে। প্রধান বিচারপতি কর্তৃক প্রতিটি বিভাগে এক বা একাধিক স্থায়ী বেঞ্চ থাকবে। অর্থাৎ হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ বিভাগীয় পর্যায়ে প্রতিষ্ঠার বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। এ বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে সংবিধানের ১০০ নম্বর অনুচ্ছেদের পরিবর্তন হবে।’ এ পর্যন্ত সংবিধানের ৭০ নম্বর অনুচ্ছেদ, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিত্ব, নির্বাচনি এলাকার সীমানা নির্ধারণ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমা-সম্পর্কিত বিধান এবং বিচার বিভাগ বিকেন্দ্রীকরণ বিষয়ে আলোচনা নিষ্পত্তি হয়েছে।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, সংস্কার নিয়ে গত ৫৩ বছরে আলোচনার সুযোগ হয়নি। সেই সুযোগ- অত্যন্ত কষ্টের মধ্য দিয়ে, অনেক রকম প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে, সংগ্রামের মধ্য দিয়ে, আত্মদানের মধ্য দিয়ে এখানে এসেছি। আলোচনার ইতিবাচক দিক আছে পরস্পরকে জানা বোঝার দিক থেকে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টিসহ ৩০টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়। সংলাপে কমিশনের পক্ষে আরও ছিলেন কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. বদিউল আলম মজুমদার এবং ড. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার। আগামী ৭ জুলাই আবার আলোচনা হবে বলে জানায় কমিশন।