প্রশ্ন : সংক্ষেপে আপনার জন্ম ও বেড়ে ওঠা সম্পর্কে জানতে চাই।
উত্তর : সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর সৈয়দপুর শাহারপাড়ায় আমার জন্ম। সিলেট শহরেই বেড়ে ওঠা। স্থানীয় ব্লু বার্ড হাইস্কুলে মাধ্যমিক সম্পন্ন করি। উচ্চশিক্ষার উদ্দেশে যাই আমেরিকা। ২০১০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব জর্জিয়া থেকে ব্যবস্থাপনা শিক্ষায় স্নাতক এবং ২০১৩ সালে এমবিএ করি। পরবর্তীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পেস ইউনিভার্সিটি থেকে আইন শিক্ষায় জুরিস ডক্টর সম্পন্ন হয়।
প্রশ্ন : কর্মজীবনে কখন কীভাবে পা রাখেন?
উত্তর : ২০১১ সালের কথা। বিশ্বনন্দিত প্রতিষ্ঠান আমেরিকার আইবিএমএ সিনিয়র ম্যানেজার হিসেবে কাজ শুরু করি। ২০২১ সাল পর্যন্ত টানা ১০ বছর ক্যারিয়ার গড়ি সেখানে। এর পাশাপাশি নিউইয়র্কে পিজি কারস এলএলসি নামে একটি প্রতিষ্ঠান করি। এখনও প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করছি।
প্রশ্ন : মানবসেবায় কবে কীভাবে আত্মনিয়োগ করেন?
উত্তর : মা-মাটির টানে আমি দেশে ফিরি। এলাকার মানুষের দুরাবস্থা দেখে যার পর না ব্যথিত হই। ব্যাপকভাবে মানবসেবা ও রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হই। করোনাকালীন লকডাউনে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিই। ২০২২ সালের প্রলয়ংকারী বন্যায় প্রায় তিন কোটি টাকার ত্রাণ ও পুনর্বাসনসামগ্রী জনগণকে দেয়ার সুযোগ হয়। শতাধিক মসজিদণ্ডমাদ্রাসা নির্মাণ ও সংস্কার করি। পাঁচটির বেশি স্কুল ও রাস্তাঘাটের উন্নয়নে আর্থিক সহায়তা দিয়ে সংস্কারমূলক কার্যক্রম করি। জগন্নাথপুরের সৈয়দপুর-শাহারপাড়ার একটি অঞ্চলে ২ কিলোমিটার বিদ্যুৎ সংযোগ নিশ্চিত করি। নির্বাচনী এলাকায় বড় পরিসরে ৮-১০ জন এমবিবিএস ডাক্তার এনে ১০টি মেডিকেল ক্যাম্প পরিচালনা করি। দেড় হাজারের বেশি রোগীর বিনামূল্যে চিকিৎসা নিশ্চিত করি। পাঁচ শতাধিক বেকার যুবককে ক্ষুদ্র আর্থিক সহায়তা ও কারিগরি ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে কর্মসংস্থান এবং স্বাবলম্বী করি। সুবিধাবঞ্চিত সহস্রাধিক পরিবারের বাসগৃহ সংস্কার ও নির্মাণে সহায়তা করি। সম্প্রতি শান্তিগঞ্জ অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের প্রতিটি পরিবারে আর্থিক সহায়তা দিয়েছি। ২০২৪ সালের ঘূর্ণিঝড়ে শান্তিগঞ্জের পাগলা অঞ্চলে ২০০ পরিবারকে এবং একটি মাদ্রাসায় পুনর্বাসনের লক্ষে নির্মাণসামগ্রী কেনার জন্য নগদ টাকা দিই। ২০২৪ সালে শান্তিগঞ্জ বাজারে জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম শান্তিগঞ্জ এবং যুব উন্নয়নের লক্ষে ‘সৈয়দ তালহা আলম কারিগরি শিক্ষাকেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠা করেছি।
প্রশ্ন : রাজনীতির মাঠে আপনার জোরদার ভূমিকা কখন কীভাবে?
উত্তর : বিএনপি নেতৃত্বাধীন ফ্যাসিবাদ সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলন ও ডামি ভোটবিরোধী আন্দোলন, ভারতীয় পণ্য বয়কট আন্দোলন এবং ছাত্র জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে স্বশরীরে সক্রিয় অংশ নিয়েছি। ২০২২ সালের নভেম্বরে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির সাবেক নির্বাচিত চেয়ারম্যান, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান এবং আওয়ামী লীগ সভাপতির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে প্রায় ২১ হাজার ভোট পেয়ে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করি। যা আওয়ামী লীগের প্রকাশিত ভোটার চেয়ে মাত্র একহাজার ভোট কম ছিল। ২০২৩ সালের কারচুপিমূলক উপনির্বাচনে আবারও প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হই। জগন্নাথপুরের ২০২২ ও ২০২৩ সালে উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে জগন্নাথপুরে ‘জনতার চেয়ারম্যান’ নামে পরিচিতি লাভ করি।
প্রশ্ন : আপনাকে ঘিরে জনগণের সমর্থন বা আশাবাদ কেমন?
উত্তর : আমাকে ঘিরে শান্তিগঞ্জ জমিয়তের নেতাকর্মীসহ শুভাকাঙ্ক্ষী ও সমর্থকরা বেশ উচ্ছ্বসিত। আমার নেতৃত্বগুণ ও মানবিক ব্যবহারে সবার মন জয় করেছি। এরই মধ্যে এ আসনে তরুণদের গুডবুকে আমার নাম জায়গা করে নিয়েছে। আমাকে নিয়ে তারা স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছে। তাদের মধ্যে যেন একটা নব উচ্ছ্বাস বিরাজ করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রতিটা ইউনিয়নে সভা-সমাবেশ করে ভোটারদের কাচে যাচ্ছি। কর্মী-সমর্থকরাও চালিয়ে যাচ্ছে প্রচার-প্রচারণা। আশা করি, হাতে হাত রেখে এগিয়ে যাব আমরা। আমি সুনামগঞ্জ-৩ আসনের জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করতে চাই। এ আসনের মানুষের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সংস্কৃতি, মানবসম্পদ উন্নয়ন, কারিগরি দক্ষতা বাড়াতে আমার অগ্রাধিকার থাকবে। সবাই যদি আমাকে সুযোগ দেন, তাহলে এ আসনের যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ সকল ক্ষেত্রে উন্নয়নে অনেক বেশি কাজ করতে চাই।
আমি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভালো একটি চাকরিতে ছিলাম; কিন্তু দেশের টানে দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে দেশে ফিরেছি। দেশের মানুষ আমাকে ভালোবেসে উপজেলার চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করার প্লাটফর্ম দিয়েছিল, কিন্তু ফ্যাসিবাদের ছোবলে তা আমার হাতছাড়া হয়েছে। যুগপৎ আন্দোলন এবং ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফসল হিসেবে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে দলমতের ঊর্ধ্বে সুনামগঞ্জবাসী আমাকে তাদের প্রতিনিধি হওয়ার সুযোগ দেবেন বলে আশাবাদী। আমার দল জমিয়ত ২০০১ সাল থেকে বিএনপি জোটে আছে। ২০০১ থেকে প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনে এ আসন জমিয়তের প্রার্থীকে দেয়া হয়। আমার আশা ও বিশ্বাস, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এর ব্যত্যয় ঘটবে না।
প্রশ্ন : আগামী পরিকল্পনা কী?
উত্তর : আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এমপি প্রার্থী হিসেবে ইসলাম ও মানুষের সেবা করতে চাই। কারণ, সুখে-দুঃখে গণমানুষের পাশে থাকা আমার স্বপ্ন-সাধনা। সুনামগঞ্জ-৩ আসনের রাস্তাঘাট, বাস সার্ভিসসহ যাতায়াত ব্যবস্থার টেকসই উন্নয়ন, তরুণ প্রজন্মকে বিভিন্ন কারিগরি শিক্ষা এবং ইংরেজি ভাষা শিক্ষার মাধ্যমে বিশ্বমানের কর্মদক্ষ করা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার গুণগত উন্নয়ন এবং ওয়ার্ডভিত্তিক কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সংস্কার ও আধুনিকায়ন, কৃষিজীবীদের পানির চাহিদা পূরণ ও দীর্ঘমেয়াদি বাঁধ নির্মাণ, মৎসজীবীদের সরকারি সহায়তার মাধ্যমে মাছ উৎপাদন বাড়ানো, বিদেশি গরু লালন-পালনে আগ্রহী করা, নারীশিক্ষা ও নারীদের কারিগরি শিক্ষার প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ঘরে বসে সংসারে সহায়তার সুযোগ করে দেয়া এবং দরগাপাশা-কলকলিয়া এলাকায় বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা আমার প্রধান লক্ষ্য।