ঢাকা-টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে মহাসড়কে এবার প্রবাসীর মাইক্রোবাস আটকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এ সময় গোড়াই হাইওয়ে থানার রেকার চালকের সহকারী তুহিন মিয়া গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। ডাকাত দলের সদস্যরা ওই প্রবাসী ও তাদের স্বজনদের কাছ থেকে নগদ টাকা, মোবাইল ফোন ও মালামাল নিয়ে গেছে। গোড়াই হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জসিম উদ্দিন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
গত শুক্রবার দিনগত রাত ৩টার দিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কের উপজেলার পুষ্টকামুরী চরপাড়া বাইপাস এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। গুলিবিদ্ধ তুহিন মিয়া মির্জাপুরের গোড়াই হাইওয়ে থানার রেকার চালকের সহকারী পদে কর্মরত। তিনি বর্তমানে কুমুদিনী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ডাকাত দলের লুটের শিকার ওই নারী প্রবাসী বগুড়ার সারিয়াকান্দি এলাকার বাসিন্দা।
মাইক্রোবাসের যাত্রী সুমাইয়া আক্তার জানান, তার ননদ বিউটি আক্তার জর্ডান প্রবাসী। তিনি শুক্রবার জর্ডান থেকে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন। রাতে তারা টঙ্গী এলাকা থেকে একটি মাইক্রোবাস ভাড়া করে বগুড়ায় যাচ্ছিলেন। মাইক্রোবাসে তার ননদ বিউটি, শম্পা, শ্বশুর আব্দুল হামিদ ও তাদের শিশুসন্তান ছিল। রাত আড়াইটার দিকে মাইক্রোবাসটি মহাসড়কের পুষ্টকামুরী চরপাড়া পৌঁছালে পেছন দিক থেকে আসা আরেকটি হাইয়েস মাইক্রোবাস তাদের মাইক্রোবাসটির গতিরোধ করে। সে সময় ৭ থেকে ৮ জনের একটি ডাকাত দল অস্ত্রের মুখে সবাইকে জিম্মি করে ফেলে। তাদের কাছে পিস্তল, পুলিশের ওয়াকি-টকি, পুলিশের হ্যান্টকাফ, বন্দুক, চাপাতি, ছুরি, লাঠি ও দা ছিল। সবাইকে জিম্মি করে ৫-৬টি মেবাইল ফোন, নগদ ৭০ হাজার টাকাসহ তাদের মালামাল লুট করে। চিৎকার করলে গুলি করার হুমকি দেয় ডাকাতরা। মহাসড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় টহল পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশের একদল সদস্য ঘটনা দেখে ডাকাতদের ধাওয়া করলে ডাকাতরা গুলি ছোড়ে। গুলিতে হাইওয়ে থানার রেকার চালকের সহকারী তুহিন মিয়া গুলিবিদ্ধ হন। পরে ডাকাত দলের সদস্যরা পালিয়ে যায়।
এদিকে, ডাকাতির খবর ছড়িয়ে পড়লে রাতে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রবাসী ও তার স্বজনদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। গুলিবিদ্ধ তুহিনকে কুমুদিনী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় ডাকাত দলের ব্যবহৃত একটি হাইয়েস ও প্রবাসীকে বহন করা মাইক্রোবাস এবং ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন অস্ত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ। গুলিবিদ্ধ তুহিন মিয়া জানান, দুর্ঘটনার খবর শুনে রেকারচালক ও পুলিশের কনস্টেবল আমিনুল ইসলামের সঙ্গে তিনি ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের নাটিয়াপাড়া এলাকার দিকে যাচ্ছিলেন। পথে পোস্টকামুরী চরপাড়া এলাকার মহাসড়কের ওপর আড়াআড়িভাবে দুটি মাইক্রোবাস দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন। এ সময় তারা রেকার থামিয়ে মাইক্রোবাসের চালকের কাছে গিয়ে তাদের সমস্যার বিষয়ে জানতে চান। তখন একজন জানান, তাদের কোনও সমস্যা নেই। পরে তুহিন সেখান থেকে চলে আসার সময় হঠাৎ একজনের হাতে পিস্তল দেখতে পান। এতে তার সন্দেহ হলে তিনি ডাকাত দলের মাইক্রোবাসের চাবি নিয়ে নেন। একই সঙ্গে পিস্তল বহনকারী ব্যক্তিকে ধরতে যান। এ সময় ওই ডাকাত তুহিনের বাঁ হাতে গুলি করে পালিয়ে যান। কুমুদিনী হাসপাতালের উপ-পরিচালক অনিমেষ ভৌমিক জানান, তুহিনের বাঁ কবজিতে গুলি লেগেছে। তার হাতে অস্ত্রোপচারসহ সব ধরনের চিকিৎসা সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। গোড়াই হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জসিম উদ্দিন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ঘটনার বিষয়ে মির্জাপুর থানায় মামলা করা হবে। মির্জাপুর থানার ওসি মোহাম্মদ রাসেদুল ইসলাম বলেন, ‘ডাকাতির ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ডাকাত দলের ফেলে যাওয়া একটি হাইয়েস মাইক্রোবাস ও প্রবাসীকে বহন করা মাইক্রোবাসটি উদ্ধার করা হয়েছে। গুলিবিদ্ধ একজনকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।’
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার দিনগত রাত ৩টার দিকে এই মহাসড়কের মির্জাপুরে ট্রাকের চালক ও হেলপারের হাঁত-পা বেঁধে ট্রাকসহ ৬০ ড্রাম পামওয়েল তেল ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে।