ঢাকা শনিবার, ২১ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

উত্তরাঞ্চলে শীতের দাপট

বাড়ছে শিশু রোগীর সংখ্যা

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলের মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে
বাড়ছে শিশু রোগীর সংখ্যা

উত্তরের জেলাগুলোতে শীতের দাপটে কাবু হয়ে পড়েছে জনপদ। ঘন কুয়াশার সঙ্গে বইছে হিমেল বাতাস। রংপুর অঞ্চলে জেঁকে বসেছে শীত ভোর ও সন্ধ্যার পরপরই ঘন কুয়াশার চাদরে ঢেকে যাচ্ছে জনজীবন। এমন বৈরী আবহাওয়ায় ঠান্ডাজনিত কারণে বেড়েছে নানা রোগের প্রকোপ। বিশেষ করে কোল্ড ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, সর্দি-জ্বর, অ্যাজমা, শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে বাড়ছে শিশু রোগীর সংখ্যা।

গতকাল শনিবার সকাল ৬টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৬ শতাংশ এবং গত ২৪ ঘণ্টায় বাতাসের গড় গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৩ কিলোমিটার। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলের মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এ অঞ্চলের জেলায় সকাল ৬টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে- পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া ৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি, নীলফামারির সৈয়দপুরে ১১ দশমিক ০ ডিগ্রি, রংপুরে ১১ দশমিক ৬ ডিগ্রি, নীলফামারী ডিমলায় ১২ দশমিক ২ ডিগ্রি, কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ১১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, দিনাজপুরের তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি, ঠাকুরগাঁ ১০ দশমিক ১ ডিগ্রি, লালমনিরহাট ১১ দশমিক ৮ ডিগ্রি ও গাইবান্ধায় ১১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।

রংপুর বিভাগের দিনাজপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আরও তিন-চার দিন এই অঞ্চলে তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অফিস। রংপুর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ মোস্তাফিজার রহমান বলেন, ঘন কুয়াশা ও বাতাসের আর্দ্রতা বৃদ্ধির কারণে উত্তরের জেলাগুলোতে মধ্যরাত থেকে ঠান্ডা আর ঘন কুয়াশা বেড়েছে। এছাড়া, দিনের বেশির ভাগ সময় সূর্যের দেখা মিলছে না।

রংপুর মেডিক্যাল কলেজ (রমেক) হাসপাতাল ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে রোগীদের বেশিরভাগ শিশু, যারা ডায়রিয়া আক্রান্ত। শীতজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে চরম উৎকণ্ঠায় অভিভাবকরা।

রমেক হাসপাতালের তৃতীয় তলার ৯ ও ১০ নম্বর শিশু ওয়ার্ডে শতাধিক শিশু ভর্তি রয়েছে। কোল্ড ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, সর্দি-জ্বর, অ্যাজমা, শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত। বিশেষ করে কোল্ড ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশুর সংখ্যাই বেশি। এদিকে মেডিক্যালের বহির্বিভাগে অন্যান্য দিনের তুলনায় বেশি ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু। বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে অভিভাবকরা সন্তানদের নিয়ে আসছেন হাসপাতালের চিকিৎসককে দেখাতে।

নিউমোনিয়া আক্রান্ত এক শিশুর অভিভাবক রহিমা বেগম জানান, তার সন্তান নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। এখন ভালো অবস্থায়। দুদিন আগে খুবই খারাপ অবস্থা ছিল। ৬ মাস বয়সী শিশু ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছে। তবে চিকিৎসা সেবা ভালো হচ্ছে।

এদিকে রংপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও গাইবান্ধায় শীতের দাপট বাড়ছে। এইসব জেলাগুলোতে শীতের কারণে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। নগরজুড়ে গরম কাপড় বেচা কেনা বাড়ছে ফুটপাতসহ হাটবাজারে। মেডিক্যালের পাশাপাশি উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতেও বাড়ছে শিশু রোগীর সংখ্যা। এসব রোগীর মধ্যে শীতজনিত রোগে আক্রান্তরাই রয়েছেন। গত কয়েকদিনে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট গঙ্গাচড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ৫০ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি। বদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও একই চিত্র। সেখানেও ভর্তি রোগীর মধ্যে শীতজনিত রোগে আক্রান্তই বেশি। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু মো. আলেমুল বাসার বলেন, শীতের কারণে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তবে বেশিরভাগই বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সেখানে ঠান্ডা বেড়ে যাওয়ায় শীতজনিত রোগের কারণে গত তিন দিনে প্রায় ২০০ রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এরমধ্যে নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, পেটব্যথা, জন্ডিস, সর্দি-জ্বরসহ শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে শিশু ও বয়স্করা আসছেন। শীতজনিত রোগীর চিকিৎসা দিতে বহির্বিভাগে নেবুলাইজার মেশিনসহ স্যালাইন ও জিংক রাখা হয়েছে। জটিল মনে হলে মেডিক্যালে ভর্তির পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

বদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডা. শাকির মুবাশ্বির বলেন, এখন শিশু ও বয়স্ক রোগীর সংখ্যাই বেশি। তবে বেশিরভাগ রোগী আউটডোরে চিকিৎসা নিচ্ছেন। খুবই জটিল মনে হলে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

রমেক হাসপাতালের শিশু বিভাগের রেজিস্টার ডা. আ ন ম তানভীর চৌধুরী বলেন, শিশু রোগীর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে, তবে নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্টসহ অন্যান্য রোগে আক্রান্ত শিশুরা সবসময় চিকিৎসা নিলেও এবারে কোল্ড ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশুরা বেশি ভর্তি হচ্ছে। এজন্য অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। শিশুদের খাবার গ্রহণের সময় হাত ভালোভাবে ধৌত করা এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা জরুরি। শিশুদের গরম পানি সবসময় খাওয়ানো উচিত।

রংপুরের সিভিল সার্জন ডা. মোস্তফা জামান চৌধুরী জানান, শীতজনিত রোগবালাই বিশেষ করে নিউমোনিয়া, কোল্ড ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট ও জ্বর ছড়িয়ে পড়ছে। এসব রোগ থেকে শিশুকে রক্ষা করতে গরম কাপড় পরানো জরুরি। মায়েদের খেয়াল রাখতে হবে, কোনোভাবেই যেন বাচ্চাদের শীত না লাগে। তবে, বেশি অসুস্থ মনে হলে হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

রংপুর জেলা প্রশাসক রবিউল ফয়সাল বলেন, জেলা ও উপজেলাগুলোতে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হচ্ছে। রংপুরের ৮ উপজেলায় ৫ হাজারের ওপরে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। এ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। শীতের প্রকোপ বাড়ায় এ কার্যক্রম আরও জোরদার করা হবে। তিনি আর ও বলেন শীতের সময়টাতে এমন রোগব্যাধী বাড়ছে। আতঙ্কিত না হয়ে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। তবে শীতের সময় গরম কাপড় ব্যবহার করারও পরামর্শ দেন তিনি।

রমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আশিকুর রহমান বলেন, চিকিৎসক সংকট তারপরেও সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। আর প্রতিদিন হাসপাতালে ১৯০০ থেকে ২ হাজার রোগীকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। অতিদ্রুত এ সংকট দূর করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তবে এ সময় বেশি পড়া রোগীরা আসছেন হাসপাতালে। জনগণের প্রতি আহ্বান আগুন পোহানো থেকে বিরত থাকার আর গরম কাপড় পরিধান করার।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত