ঢাকা ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১ ফাল্গুন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

দেশে প্রতি লাখে ক্যান্সারে আক্রান্ত ১০৬ জন

দেশে প্রতি লাখে ক্যান্সারে আক্রান্ত ১০৬ জন

বাংলাদেশে জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যান্সারের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বৃহত্তর গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)। এতে দেখা গেছে, দেশে প্রতি লাখে ১০৬ জন মানুষ ক্যান্সার আক্রান্ত। আর ৩৮ ধরনের ক্যান্সারের মধ্যে স্তন, মুখ, পাকস্থলী, শ্বাসনালী এবং জরায়ু মুখের ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা বেশি। গতকাল শনিবার সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের কনফারেন্স রুমে ‘বাংলাদেশে ক্যান্সার বোঝা: জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যান্সার রেজিস্ট্রি’ শীর্ষক এক গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। অনুষ্ঠানে ফলাফল উপস্থাপন করেন গবেষণাটির প্রধান গবেষক পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. খালেকুজ্জামান।

তিনি বলেন, ক্যান্সার বিশ্বে মৃত্যুর প্রধান কারণগুলোর একটি। বাংলাদেশে জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যান্সার রেজিস্ট্রি বা নিবন্ধন (পিবিসিআর) না থাকায় প্রতিবেশী দেশগুলোর তথ্য ব্যবহার করে ক্যান্সারের পরিস্থিতি অনুমান করতে হয়। এর ফলে বাংলাদেশে ক্যান্সারের সঠিক পরিস্থিতি জানার ব্যাপারে সীমাবদ্ধতা আছে। তাই জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যান্সার রেজিস্ট্রি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বা বাংলাদেশি জনগোষ্ঠীর মধ্যে একটি জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যান্সার নিবন্ধন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ক্যান্সারের পরিস্থিতি নির্ণয় করা জরুরি হয়ে পড়েছিল। এজন্যই এ গবেষণা পরিচালনা করা হয়। গবেষণার বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে তিনি জানান, কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলায় ২০২৩ সালের জুলাই মাস থেকে এ গবেষণাটি পরিচালিত হয়ে আসছে। দুই লাখ মানুষের ওপর এই গবেষণা পরিচালনা করা হয়। গবেষণায় প্রতিটি বাড়িতে বিশেষভাবে তৈরি করা ইন্টারনেটভিত্তিক ক্যান্সার নিবন্ধন সফটওয়্যার করে সাক্ষাৎকার গ্রহণের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।

এক বছর পূর্তিতে একই পরিবারের ফলোআপ পরিদর্শন ২০২৪ সালের জুলাই মাসে শুরু হয়েছে। বাংলাদেশে ৩৮ ধরনের ক্যান্সারের রোগী পাওয়া গেছে জানিয়ে ড. খালেকুজ্জামান বলেন, প্রতি লাখে ১০৬ জন ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। ৯৩ শতাংশ রোগীর বয়স ১৮ থেকে ৭৫ বছর। ক্যান্সার রোগীদের মধ্যে ২.৪ শতাংশ শিশুরা রয়েছে। ৫.১ শতাংশ রোগীর বয়স ৭৫ বছরের বেশি। নারীদের ৫টি প্রধান ক্যান্সার হলো- স্তন, মুখ, পাকস্থলী, শ্বাসনালী এবং জরায়ু মুখের ক্যান্সার। পুরুষদের ৫টি প্রধান ক্যান্সার হল শ্বাসনালী, পাকস্থলী, ফুসফুস, মুখ ও খাদ্যনালীর ক্যান্সার। গবেষণা ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা) অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, নিত্যনতুন জ্ঞান তৈরিতে গবেষণার বিকল্প নাই। বিএসএমএমইউ থেকে সেই গবেষণায় পরিচালনা করা উচিত যা রোগীদের কল্যাণে কাজে আসে। যে সব গবেষণা দেশের মানুষের, দেশের রোগীদের উপকার হবে সেক্ষেত্রে সরকারের সহায়তা অব্যাহত থাকবে। বিএসএমএমইউর উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম বলেন, গণআকাঙ্ক্ষা পূরণ করে এমন গবেষণার জন্য ফান্ডের কোনো সমস্যা হবে না। বিএসএমএমইউর উদ্যোগে পরিচালিত বাংলাদেশে জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যান্সার রেজিস্ট্রি থেকে যে পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে তা দেশের মানুষের ক্যান্সার প্রতিরোধ, প্রতিকার ও ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসায় বিরাট ভূমিকা রাখবে। একইসঙ্গে এই পরিসংখ্যান বাংলাদেশে ক্যান্সার নিয়ে গবেষণার বহুমুখী দ্বার উন্মোচন করেছে। অনুষ্ঠানে বর্তমান জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যান্সার রেজিস্ট্রি স্থায়ী করার জন্য এই জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যান্সার নিবন্ধনটি সচল রাখতে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা, গবেষকদের বর্তমান রেজিস্ট্রি ব্যবহার করে ভবিষ্যতে ক্যান্সার গবেষণা পরিচালনা করতে উৎসাহিত করার সুপারিশ করা হয়। এ গবেষণায় অর্থায়ন করে এনসিডিসি, ডিজিএইচএস এবং বিএসএমএমইউ।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত