অল্প সময়ে ভালো ফলন এবং বেশি লাভ হওয়ায় বগুড়ায় গাজর চাষে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, জেলার সদর, সোনাতলা, গাবতলী, সারিয়াকান্দি ও শিবগঞ্জ উপজেলায় কৃষকরা গাজর চাষাবাদে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন। গাজর উচ্চমূল্যের ফসল। বীজ বপনের আড়াই থেকে তিন মাসের মধ্যে ফসল উঠানো যায়। এক বিঘা জমিতে গাজর চাষ করে ফলন উঠানো পর্যন্ত কৃষকের খরচ হয় প্রায় ২৫ হাজার টাকা। ফসল উঠানোর সময় কৃষক এক বিঘা জমির গাজর বিক্রি করতে পারে ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা। ফলে এক বিঘা জমি থেকে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা লাভ হয় তাদের। এখন গাজর তোলায় ব্যস্ত সময় পার করছে চাষিরা। কেউ কেউ জমি থেকে সদ্য তোলা গাজর পানিতে পরিষ্কার করতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। খেতে এসব গাজর প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৭৫০ টাকায়। এসব গাজর রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিয়ে যান পাইকাররা। অল্প সময়ে ফলন বেশি হওয়ায় অধিক লাভবান হচ্ছে জেলার চাষিরা। এছাড়া, অন্য ফসলের চেয়ে তুলনামূলক কম খরচে দ্বিগুণ লাভ হওয়ায় জেলায় গাজর চাষে আগ্রহ বেড়েছে। গাবতলী উপজেলার কৃষক আবু জাফর জানায়, বিগত কয়েক বছর ধরে গাজর চাষাবাদ করছে। গাজর এমন একটি ফসল যার চাহিদা সব সময়ই থাকে। এ কারণে বিক্রি নিয়ে তেমন দুশ্চিন্তা থাকে না। আবার দামও ভালো পাওয়া যায়। এ বছর তিনি প্রায় দুই বিঘা জমিতে গাজর চাষাবাদ করেছেন। ফলন হয়েছে বিঘাপ্রতি ৭০ মণ হারে। প্রতি মণ গাজর গড়ে প্রায় ৬৫০ থেকে ৭৫০ টাকা দরে বিক্রি করেন তিনি। তবে শুরুর দিকে ৮০০ টাকা মণ বিক্রি করেছেন। প্রতি কেজি গাজর গড়ে ১৫ টাকায় বিক্রি করেও লাভ হচ্ছে তার। বিঘা প্রতি খরচ হয়েছিল ২৩ থেকে ২৫ হাজার টাকা। তিনি আরো জানায়, কোনো কোনো সময় ফলন উঠানোর আগেই ব্যাপারীদের কাছে জমিতেই গাজর বিক্রি করে দেন। এবার তিনি প্রায় ৯০ হাজার টাকার গাজর বিক্রি করেছেন। একই গ্রামের আরেক কৃষক আব্দুর রশীদ জানায়, এ বছর এক বিঘা জমিতে গাজর চাষ করেছেন। গাজর চাষে পরিশ্রম কম। তাদের গ্রামের আরো কৃষক গত কয়েক বছর ধরে গাজর চাষ করে লাভবান হয়েছে। তিনিও লাভের আশায় তার আবাদি জমিতে গাজর চাষ করেন এবং দামও ভালো পায়। আগামী বছর তিনি গাজর চাষে জমি বাড়াবে বলেও জানায়।
বগুড়ায় এ বছর ১৭৯ হেক্টর জমিতে গাজর চাষ হয়েছে। সেখানে চলতি বছর গাজর চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৬৯ হেক্টর। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০ হেক্টর বেশি জমিতে গাজর চাষ করা হয়েছে। দিন দিন এ জেলার কৃষকরা গাজর চাষাবাদে বেশ আগ্রহ দেখাচ্ছে। অক্টোবরের শেষের দিক থেকে ডিসেম্বর মাসের শুরুর দিক পর্যন্ত গাজর চাষের উপযুক্ত সময়। তিন মাস পর ফসল মাঠ থেকে উঠানোর উপযোগী হয়। তবে কেউ কেউ ৫০ থেকে ৫৫ দিনের মধ্যেও ফসল উঠায়। সারা বছরই গাজরের ভালো বাজার থাকে।