রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে মিরপুর-১৩ নম্বরে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির আওতায় ছয়টি খাল সংস্কার কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়েছে। উদ্বোধনীতে ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তারা ভাসমান এস্কাভেটরে উঠে লাল গালিচায় (কার্পেট) হেঁটে খাল খননের কাজ উদ্বোধন করেন। এই খাল খনন উদ্বোধনের নিউজ, ছবি এবং ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সরেজমিন দেখা যায়, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির আওতাধীন ছয়টি খালের সংস্কারকাজ শুরুর জন্য মিরপুর-১৩ নম্বর সেকশনে রূপসী প্রো-অ্যাকটিভ ভিলেজ আবাসিক এলাকার বাউনিয়া খালসংলগ্ন রাস্তায় একটি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে ওই তিন উপদেষ্টাসহ অন্য কর্মকর্তারা বাউনিয়া খালের পাড়ে যান। এর আগেই খালে একটি ভাসমান খননযন্ত্র (ফ্লোটিং এস্কাভেটর) এনে রাখা হয়। খালের পাড় থেকে ওই ভাসমান খননযন্ত্রে যেতে অস্থায়ী একটি পথ তৈরি করা হয়। ওই পথে বিছানো ছিল লাল রঙের একটি কার্পেট। তিন উপদেষ্টাসহ অন্য কর্মকর্তারা ওই পথে হেঁটে খালে থাকা ভাসমান খননযন্ত্রের ওপরে যান। উপদেষ্টারা খননযন্ত্রে ওঠার পর যন্ত্রটি চালু করে খালের খননকাজের উদ্বোধন করা হয়। উপদেষ্টাদের নিয়ে খাল থেকে কয়েকবার যন্ত্রের সাহায্যে খনন করা মাটি পাড়ে ফেলা হয়। খননকাজ শুরু করে দেয়ার পর তিন উপদেষ্টাসহ অন্যরা খননযন্ত্র থেকে পাড়ে নেমে আসেন। এসময় তারা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। গণমাধ্যমকর্মী পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানকে একটি প্রশ্ন করেন। প্রশ্নটি ছিল, ‘আগে দেখতাম মেয়ররা এমন ধুমধাম করে উদ্বোধন করতেন। সেখানে হয়তো লালগালিচা থাকত না। কিন্তু আজকে দেখলাম আপনারা খালেই নামলেন লালগালিচার ওপর দিয়ে।’ এ বিষয়ে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ওই সাংবাদিককে হেসে উত্তর দিয়ে বলেন, ‘ওটা তো অবশ্য আমি দেখিনি। ওটা অবশ্য আমি খেয়াল করিনি, আপনি খেয়াল করেছেন?’
লাল গালিচায় নেমে খাল খনন উদ্বোধনের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। উঠেছে নানা প্রশ্ন। অনেকেই ছবিটি পোস্ট করে মন্তব্য ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। প্রশ্ন তুলেছেন, খাল খননের উদ্বোধন করতেও লাল গালিচা বিছানো কেন? কেউ আবার উদ্বোধনের ভিডিও পোস্ট করে করছেন হাস্যরস। বলছেন, এখানে লাল গালিচার কাজ কী? কবির হোসেন নামের একজন ফেসবুকে লেখেন, রুচির দুর্ভিক্ষ। যাদের জন্য লাল গালিচা পেতেছেন তাদের সম্মানের জায়গায় বরাবরই অসম্মান করলেন। লাল গালিচার বিষয়টি স্পষ্ট করতে ব্যাখ্যা দিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)। সংস্থাটি বলছে, খালে লাল গালিচা ও খাল সংস্কার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভাসমান এস্কাভেটরে নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য দেয়া হয়েছে। গতকাল রোববার ডিএনসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা মকবুল হোসাইন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, গতকাল ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) মিরপুরে বাউনিয়া খালের প্রান্তে খাল সংস্কার কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত উপদেষ্টাগণ ও অতিথিবৃন্দের বক্তব্য শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে সংস্কার কাজ উদ্বোধনের জন্য ভাসমান এস্কাভেটরে ওঠেন, যেখানে অপারেটর কার্যক্রম শুরু করেন।
অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয়, ভাসমান এস্কাভেটরে যেতে লাল কার্পেট বিছানোর কারণ কী? এ প্রসঙ্গে ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ স্পষ্টভাবে জানায় যে, যেখানে ভাসমান এস্কাভেটর রাখা হয়েছে তা কোনো স্থায়ী পন্টুনে স্থাপিত নয়, বরং একটি অস্থায়ী স্থানে রাখা হয়েছে। এছাড়া এস্কাভেটরে ওঠার রাস্তাটি অনেক ঢালু ও কাদা মাটির হওয়ায় এবং এস্কাভেটরের ফ্লোর পিচ্ছিল থাকায় অতিথিদের নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করার জন্য এবং চলাচল এলাকা দৃষ্টিগ্রাহ্য করতে একটি লাল রঙের কার্পেটসদৃশ ম্যাট ব্যবহার করা হয়েছে। ডিএনসিসি অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে লক্ষ্য করেছে গণমাধ্যমে এসেছে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথিবৃন্দ লাল গালিচায় হেঁটে খালে নামেন এবং ভাসমান এস্কাভেটরে উঠে কাজের সূচনা করেন। এটি কোনো আনুষ্ঠানিক লাল গালিচা নয়, বরং শুধু নিরাপত্তার স্বার্থে রাখা একটি ব্যবস্থা। এখানে কোনো ধরনের অপব্যয় বা অতিরিক্ত শ্রদ্ধা প্রদর্শনের উদ্দেশ্য নেই। যেহেতু ভাসমান এস্কাভেটরে ওঠানামার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা গুরুত্বপূর্ণ, তাই ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন সবসময় স্বচ্ছতা, নিরাপত্তা ও জনস্বার্থের বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করে এবং ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে।