ঢাকা বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫, ১৫ শ্রাবণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

সুসংবাদ প্রতিদিন

কুষ্টিয়ায় লতিকচু চাষ করে লাভবান কৃষক

কুষ্টিয়ায় লতিকচু চাষ করে লাভবান কৃষক

বাজারে ভালো দাম এবং ফলন ভালো হওয়ায় কুষ্টিয়ার মিরপুরে লতিকচু চাষ করে লাভবান হচ্ছে কৃষকরা। নিচু পতিত জমিতে এসব লতি কচু চাষ করে বিঘাপ্রতি লাখ টাকার উপরে লাভ করছেন কৃষকরা। পুষ্টি গুণে সমৃদ্ধ এ লতিকচুর বাজারে দর সারা বছরই ছিল ৫০ টাকার ওপরে। সেইসঙ্গে কৃষকরা প্রতিনিয়ত ফসল বিক্রি করে টাকা প্রাপ্তির সুবিধায় চাষ করছেন এই লতিকচু। কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার কৃষক ইজাহার আলী। এ বছর তিনি এক বিঘা জমিতে চাষ করেছেন লতিকচু। কৃষি অফিসের পরামর্শ ও সহযোগিতায় চাষ করে বেশ লাভবান হয়েছেন তিনি। তার দেখাদেখি এলাকার আরো অনেকেই চাষ শুরু করেছেন লতিকচুর। গত শনিবার সকালে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার কচুবাড়িয়ার এলাকার মাঠে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কৃষক ইজাহার আলী তার জমি থেকে কচুর লতি সংগ্রহ করছেন। তার সঙ্গে আরও দুইজন শ্রমিকও লতি সংগ্রহ করছেন। ফলন ভালো হওয়ায় বেশ খুশি কৃষক ইজাহার আলী। ইজাহার আলী জানান, এই জমিতে একবার ধান হয়, আর বেশিরভাগ সময় জমিতে পানি বেধে পড়ে থাকার কারণে অন্য ফসল চাষ করা সম্ভব হয় না তাই এই লতিকচুর চাষ বেছে নিয়েছি। কৃষি অফিসের পরামর্শে আমি ‘যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্প’ থেকে লতিকচু চাষের উপরে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। সেখান থেকে ২০ শতক জমিতে লতিকচু চাষের জন্য আমাকে বীজ, সার ও পরিচর্যা বাবদ নগদ টাকা দেয়। সেটা দিয়ে আমি ৩৩ শতক (এক বিঘা) জমিতে এ লতিকচুর চাষ করি।

তিনি আরও জানান, এখন পর্যন্ত এই জমিতে আমার সব মিলিয়ে ৩০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। এবছর প্রচুর রোদণ্ডগরম পড়েছে। যার কারণে ২ মাস কোনো লতি বিক্রি করতে পারিনি। তারপরে বৃষ্টির পর আমি ৬০ হাজার টাকার লতি বিক্রি করেছি। এখনও আশা করছি ৫০-৬০হাজার টাকার লতিকচু পাবো। অন্য ফসলের তুলনায় অধিক লাভজনক উল্লেখ করে তিনি আরও জানান, ‘লতিকচু সপ্তাহে দুই দিন তুলে বাজারে বিক্রি করা যায়। যখন ইচ্ছা তখন ফসল তুলে বিক্রি করে নগদ টাকা পাওয়া যায়। যেকোনো ফসলের তুলনায় এটা চাষ করা লাভজনক। আগামীতে আমি আবারও লতিকচুর চাষ করবো।’ স্থানীয় শ্রমিক সিফাত আলী জানান, দৈনিক মজুরি হারে আমরা কাজ করি। সকাল থেকে বেলা ৯-১০টা পর্যন্ত লতি তুলে সেটা পরিষ্কার করে দেয়। বেলা ১২টার মধ্যে কাজ শেষ হয়। কাজও বেশ সহজ। আর লতিকচুর বাজারে খুব চাহিদা। অনেকেই জমি থেকেই কিনতে আসে।

কৃষক লিংকন হোসেন জানান, লতিকচু এবার সারা বছরই ৫০-৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে বাজারে। আর ধরেও বেশ ভালো। অন্য ফসলের তুলনায় লতিকচু চাষ বেশ লাভজনক বলে আমরা মনে করি। কৃষি অফিসের সহযোগিতা পেলে এলাকার অনেকেই এ লতিকচুর চাষে আগ্রহী হবেন। মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, লতিকচু অধিক পুষ্টিকর একটি সবজি। বাজারে এর চাহিদা বেশ ভালো। আমরা কৃষক পর্যায়ে লতিকচু চাষের পরামর্শ ও সহায়তা প্রদান করছি। সেইসঙ্গে আগামীতে এই লতিকচুর চাষ বেশি হবে বলে মনে করেন তিনি।

যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, যশোর অঞ্চলে ৩১টি উপজেলায় উচ্চমূল্যের সবজি লতিকচু চাষ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে কৃষকদের প্রশিক্ষণ, প্রদর্শনী এবং মাঠ দিবসের মাধ্যমে সহযোগিতা করছে প্রকল্পটি। যার মাধ্যমে লতিকচুর আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এরমধ্যে কুষ্টিয়া জেলার ৬টি উপজেলায় ৪৪টি প্রদর্শনী স্থাপন করা হয়েছে। এরমধ্যে কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় ৯টি, দৌলতপুরে ৯টি, ভেড়ামারায় ৪টি, মিরপুরে ৯টি, খোকসায় ৬টি এবং কুমারখালী উপজেলা ৭টি প্রদর্শনী স্থাপন করা হয়েছে লতিকচুর। যার মাধ্যমে ২৭ বিঘা জমিতে প্রদর্শনী আকারে চাষ করা হয়েছে। যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের মনিটরিং ও মূল্যায়ন কর্মকর্তা মো. মাসুম আব্দুল্লাহ জানান, ‘প্রকল্পের আওতায় লতিকচুর চাষ বৃদ্ধির জন্য আমরা কৃষকদের দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি উপকরণ সহায়তা প্রদান করছি। লতিকচু একটি উচ্চমূল্যের সবজি। যা চাষ করে কৃষকরা বেশ লাভবান হচ্ছেন।’

কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সুফি মো. রফিকুজ্জামান জানান, আমরা কৃষকের দোড়গোড়ায় কৃষি সেবা পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি আধুনিক চাষাবাদে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছি। সেই সঙ্গে লতিকচু যেহেতু একটি লাভজনক ফসল এজন্য আমরা কৃষকদের লতিকচু চাষে উদ্বুদ্ধ করছি।

এছাড়া কৃষকদের পাশে সার্বক্ষণিক কৃষি সেবা নিশ্চিত করছি। লতিকচু চাষ করে কুষ্টিয়ার অনেক কৃষক বেশ লাভবান হয়েছে। আগামীতে এ জেলায় লতিকচুসহ বিভিন্ন সবজির আবাদ আরও বৃদ্ধি পাবে।’

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত