ঢাকা ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৮ মাঘ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

টাস্কফোর্সের সুপারিশ

বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা কমানো জরুরি

বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা কমানো জরুরি

দেশে খারাপ মানের সরকারি-বেসরকারি কিছু বিশ্ববিদ্যালয় একীভূত করা উচিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা কমিয়ে শিক্ষার মান বাড়াতে হবে। তাতে আন্তর্জাতিক র‍্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভালো অবস্থান নিশ্চিত হবে। পাশাপাশি সীমিত বাজেটের সঠিক ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা সহজ হবে। অন্তর্বর্তী সরকারকে এমন সুপারিশ করেছে ‘বৈষম্যহীন টেকসই উন্নয়নের জন্য অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণ ও প্রয়োজনীয় সম্পদ আহরণবিষয়ক টাস্কফোর্স’। গত ৩০ জানুয়ারি এ প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দিয়েছেন সদস্যরা।

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তথ্যমতে, দেশে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১৭০টি। যার মধ্যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ৫৫টি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ১১৫টি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অর্ধেকেরও বেশি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে। দেড় দশকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ৮৭টি। যার মধ্যে ২৬টি পাবলিক ও ৬১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। দেড় দশকে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অধিকাংশেরই পর্যাপ্ত শিক্ষক, নিজস্ব ক্যাম্পাস, আবাসন ও ল্যাবসহ প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নেই। নিয়মানুযায়ী, উচ্চশিক্ষা পর্যায়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর আদর্শ অনুপাত বিবেচনায় প্রতি ২০ জন শিক্ষার্থীর জন্য অন্তত একজন শিক্ষক থাকার কথা। কিন্তু দেশে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর আদর্শ অনুপাত বজায় নেই ৬৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ে। এর মধ্যে ১৮টি পাবলিক ও ৪৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। টাস্কফোর্সের শিক্ষাবিষয়ক সুপারিশগুলো তৈরির দায়িত্বে থাকা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, দেশে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় নিম্নমান সম্পন্ন। প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা ও মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতের উদ্দেশে একীভূত করার সুপারিশ করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, একীভূত করার মানে এটা নয় যে, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাবে। তাদের ক্যাম্পাস আগের জায়গায়ই থাকবে। তবে তারা একই নামে পরিচালিত হবে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্ষেত্রে সরকার একীভূতকরণের উদ্যোগ নিতে পারে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্ষেত্রে ন্যূনতম মানদ- নির্ধারণ করে দিতে পারে, যা তাদের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অর্জন করতে হবে। যদি কোনো বিশ্ববিদ্যালয় মানদ- পূরণে ব্যর্থ হয়, তখন তাদের একীভূতকরণের পদক্ষেপ নিতে হবে।’ ইউজিসির নীতিমালা অনুযায়ী- বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের প্রতিটি প্রোগ্রামে ন্যূনতম একজন অধ্যাপক বা সহযোগী অধ্যাপক থাকা বাধ্যতামূলক। যদিও দেশের ১৩টি পাবলিক ও ৬০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এ শর্ত পূরণ করতে পারছে না। এমনকি কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় চলছে কোনো অধ্যাপক বা সহযোগী অধ্যাপক ছাড়াই। ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়কে অবশ্যই মানসম্মত হতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল বা কিন্ডারগার্টেনের মতো হলে রাষ্ট্র লাভবান হবে না। দেশে গত ১৫ বছরে রাজনৈতিক বিবেচনায় অনেক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এগুলোর বেশির ভাগের অবস্থাই ভালো নয়। তিনি বলেন, ২৬টি নতুন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ২১টিই চলছে ভাড়া বা অস্থায়ী ক্যাম্পাসে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিভিন্ন সংকট সমাধানে আমরা চেষ্টা করছি। তবে কিছু বিশ্ববিদ্যালয় এমন অবস্থায় আছে, যেগুলোর সংকট সমাধান সম্ভব নয়। যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যা একেবারেই সমাধান সম্ভব নয়, সেগুলোর বিষয়ে বিকল্প চিন্তা করা জরুরি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত