বাঙালি রসনায় ডালের কদর যুগ যুগ ধরে। আর দেশীয় ডালের রয়েছে হরেক রকম জাত। এর মধ্যে মাষকলাই ডাল অত্যন্ত সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর। ডাল ফসলের মধ্যে মাষকলাইয়ের স্থান চতুর্থ। দেশে মোট উৎপাদিত ডালের ৯ থেকে ১১ শতাংশ আসে মাষকলাই থেকে। এটি শক্ত ও খরাসহিষ্ণু ফসল, যা উচ্চ তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে। ডাল হিসেবে ছাড়াও এটি কাঁচাগাছ অবস্থায় পশুখাদ্য ও সবুজ সার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এতে রয়েছে একাধিক পুষ্টিগুণ। ডালটি যেমন আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় তেমনি স্বাস্থ্য ভালো রাখে। পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞানীদের মতে, প্রতি ১০০ গ্রাম আহার উপযোগী মাষকলাইয়ের ডালে রয়েছে ক্যালরি ৩৪১ মি.গ্রাম, পটাসিয়াম ৯৮৩ মি.গ্রাম, প্রোটিন ২৫ মি. গ্রাম, সোডিয়াম ৩৮ মি. গ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৩৮ মি.গ্রাম এবং আয়রন ৭.৫৭ মি.গ্রাম। সরেজমিনে গিয়ে শিবগঞ্জ উপজেলার দেউলী ইউনিয়নের কৃষ্ণপুরে দেখা যায়, কৃষক জমির উদ্দিন তার জমিতে মাষকলাইয়ের পরিচর্য্যা করছে। কৃষক সাইফুল করিম জানান, মাষকলাই সবচেষে কম খরচার ফসল, এতে তেমন কোন পরিশ্রম নেই। রাস্তার ধারে ঘাসের মাঝে অথবা জমিতে বীজ বুনে দিলেই হয়ে যায় আর কিছু করতে হয় না। কীটনাশক বা সারের কোন দরকার হয় না এ ফসলে। এবারের মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ভালো ফলনের আশা করছেন তারা। কম খরচ ও অল্প পরিশ্রমে লাভ বেশি হওয়ায় দিন দিন মাসকলাই চাষে আগ্রহী হচ্ছেন কৃষকরা। বিঘাপ্রতি মাত্র দেড় থেকে দুই হাজার টাকা খরচ করে ৭ থেকে ৮ মণ হারে ফলন আশা করছেন কৃষকরা। মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে খরচ বাদ দিয়ে চাষিদের লাভ হচ্ছে বিঘাপ্রতি ৩০-৩৫ হাজার টাকা। কৃষি বিপ্লব শস্য ভান্ডার শিবগঞ্জ। এই এলাকার মাটি খুবই উর্বর, সব ফসল সব আবহাওয়ায় মানিয়ে নেয়। এই উপজেলায় মাসকলাই, মশুর, বুট, খেসারি, মুগ, ধনিয়া, কালোজিরা, রসুন, পেঁয়াজ, বাদাম, ভুট্টা চায়ের প্রচলন আগে থেকেই আছে। আগের চেয়ে এখন চাষাবাদ অনেক উন্নত এবং উচ্চ ফলনশীল ফসল হচ্ছে চরে। কৃষি বিভাগের পরামর্শের পাশাপাশি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আধুনিক ও উচ্চ ফলনশীল জাতের মাষকলাই চাষের প্রতি কৃষককে দক্ষ করে গড়ে তোলা হচ্ছে।