ঢাকা শনিবার, ২১ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

সুসংবাদ প্রতিদিন

বাঁশের চাটাইয়ে ৭০০ পরিবারের জীবিকা

বাঁশের চাটাইয়ে ৭০০ পরিবারের জীবিকা

বগুড়ার শেরপুর উপজেলার বিনোদপুর গ্রামের প্রায় ৭০০ পরিবার চার পুরুষ ধরে বাঁশের চাঁটাই তৈরি করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছে। বিনোদপুর গ্রামে বাঁশের তৈরি এসব চাঁটাই জেলার বিভিন্ন উপজেলা ছাড়াও ফরিদপুর, পাবনা, রাজ্বশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ্ব, নাটোর, নওগাঁ, জ্বয়পুরহাট, সিরাজ্বগঞ্জ্বসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলার পাইকাররা কিনে স্থানীয় হাট-বাজারে বিক্রি করেন।

চাঁটাই কন্সট্রাকশনের কাজে, ধানের গোলা তৈরিতে, কৃষিকাজে, মৃত ব্যক্তির কবর দেয়াসহ নানাবিধ কাজে ব্যবহার হয়। চাঁটাই তৈরির প্রধান উপকরণ তল্লা বাঁশ কেনা হয় শেরপুর উপজেলার ঘোলাগাড়ি, মির্জাপুর, চান্দাইকোনা এবং সিরাজ্বগঞ্জ্ব জেলার রায়গঞ্জ, উল্লাপাড়া, তাড়াশসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে।

সম্প্রতি জেলার শেরপুর উপজেলার বিনোদপুর গ্রামে সরজ্বমিনে দেখা যায়, ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের মির্জাপুর বাজার থেকে বাইপাস সড়কের প্রায় চার কিলোমিটার পূর্বে সুঘাট ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত বিনোদপুর গ্রাম। এই গ্রামে রাস্তার ধারে, বাড়ির আঙিনায়, বারান্দায়, গাছের নিচে বসে চাঁটাই তৈরির কাজ্ব করছেন নানা বয়সী মানুষ। এ গ্রামের ৭০০ পরিবার চাঁটাই তৈরির কাজের সঙ্গে জ্বড়িত। ছোটখাটো ক্ষেত-খামারের কাজে জ্বড়িত থাকলেও বছরের বেশির ভাগ সময় তারা চাঁটাই তৈরির কাজে ব্যস্ত থাকেন। সকাল থেকে রাত অবধি নারী-পুরুষ নির্বিশেষে পরিবারের ছোট বড় ছেলে-মেয়েদের এ কর্মযজ্ঞ চলতে থাকে সমান তালে।

তাদের মধ্যে অনেকে ডোল, মাছ ধরার বিভিন্নসামগ্রী, হোচা, ঝুড়ি, কুলা তৈরি করলেও অধিকাংশই বিভিন্ন মাপের নানা ডিজাইনের চাঁটাই তৈরি করেন। কারণ, ধানের গোলা তৈরি, মৃত ব্যক্তির লাশ দাফন, ভবন নির্মাণ, বিছানাসহ নানা কাজে চাঁটাইয়ের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বাড়ির পুরুষ সদস্যরা বাঁশ কিনে এনে কাটার কাজ্ব করেন। অন্যদিকে, বেতি তৈরি করাসহ চাঁটাই তৈরির কাজ্ব করেন এসব বাড়িতে বউ হয়ে আসা নারীরাও। একটি ভালো মানের (তল্লা বাঁশ) থেকে ২-৩ টি চাঁটাই বানানো যায়। একজ্বন শ্রমিক সারাদিনে ৩-৪টি চাঁটাই তৈরি করতে পারেন। এ গ্রাম থেকে দৈনিক আড়াই থেকে তিনহাজার চাঁটাই কিনে নিয়ে যান পাইকার ও ফড়িয়ারা। চাঁটাই তৈরি করে সংসার চালানো ষাটোর্ধ্ব আব্দুল রশিদ ৪০ বছর ধরে বাঁশশিল্পের অন্যতম চাঁটাই তৈরি করেই জীবিকা নির্বাহ করছেন। আব্দুল রশিদের মতই এই গ্রামের বাসিন্দারা বংশ পরম্পরায় এ কাজের সাথে জ্বড়িত। গ্রামের বাসিন্দারা জানান, সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো- এ চাঁটাই কিনতে পাইকাররা বাড়ি বাড়ি আসেন। উপজেলার সুঘাট ইউনিয়নের বিনোদপুর ছাড়াও আশপাশের তালপট্টি, কাশিয়াবালা, চকসাদী, মাঝিপাড়া, জোড়গাছা, কল্যাণী, সীমাবাড়ী, নাকুয়া গ্রামের প্রায় ৫ হাজার মানুষ এ পেশার সঙ্গে যুক্ত আছেন।

চাঁটাই কারিগর মালেক জানান, বর্তমানে বাঁশের দাম বেড়ে যাওয়ায় চাঁটাই তৈরিতে খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। অর্থের অভাবে তারা চাহিদা মাফিক বাঁশ কিনতে পারছেন না। এ সমস্যা নিরসনে প্রয়োজ্বন সরকারি ও বেসরকারি সহায়তা। বিনোদপুর গ্রামের বাঁশের চাঁটাই যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। স্থানীয় এক পাইকারি ব্যবসায়ী হাবিবুর বলেন, পাইকাররা বাড়ি বাড়ি ঘুরে ঘুরে চাটাই সংগ্রহ করেন। নগদ টাকা দিয়ে, কখনও অগ্রীম টাকা দিয়ে চাঁটাই নিয়ে আসেন তারা। এই গ্রাম থেকে প্রতিদিন তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার বা তার বেশি চাঁটাই সংগ্রহ করেন বিভিন্ন পাইকাররা। তারপর ভটভটি করে স্থানীয় মহাজ্বনের নিকট নিয়ে যান এবং চাটাইগুলো বিক্রি করেন।

উপজেলা সমাজ্বসেবা কর্মকর্তা জানান, বাঁশ ও বেত শিল্পসহ বিভিন্ন ধরনের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের ঐতিহ্য ধরে রাখা আমাদের দায়িত্ব। বাঁশ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সমাজ্বসেবা অধিদপ্তরের উদ্যোগে প্রান্তিক ক্ষুদ্র জ্বনগোষ্ঠীর জীবন মানোন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের মাধ্যমে বিভিন্ন গ্রামে কয়েক ধাপে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও সরকারের পক্ষ থেকে তাদের মাঝে নিয়মিত অনুদান ও আর্থিক সহায়তা প্রদান কর্মসূচি চালু আছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত