কার্বন নির্গমন, বৈশ্বিক উষ্ণতা ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ সূচকই বর্তমানে অজানা ও বিপজ্জনক সীমায় পৌঁছে গেছে। গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক বৈজ্ঞানিক প্রতিবেদনে ৬০ জনেরও বেশি শীর্ষ বিজ্ঞানী এই সতর্কবার্তা দিয়েছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো ও বন উজাড়ের কারণে ২০২৪ সালে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। বর্তমানে প্রতি বছর গড়ে ৫৩.৬ বিলিয়ন টন সমতুল্য কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গত হচ্ছে। অর্থাৎ প্রতি মিনিটে প্রায় এক লাখ টন। ২০২৩ সালে পৃথিবীর গড় পৃষ্ঠের তাপমাত্রা প্রথমবারের মতো প্রাক-শিল্প যুগের তুলনায় ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে। বৈজ্ঞানিকদের হিসাব অনুযায়ী, এই সীমার নিচে থাকার জন্য মানবজাতির হাতে যে কার্বন বাজেট ছিল, তা আগামী দুই বছরের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। পরিবেশবান্ধব জ্বালানির ব্যবহার বাড়লেও তা এখনও বৈশ্বিক জ্বালানি চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে জীবাশ্ম জ্বালানির বিকল্প হয়ে উঠতে পারেনি।
বর্তমানে পৃথিবীর মোট জ্বালানি ব্যবহারের ৮০ শতাংশই জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভর। লিড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিস্টলি সেন্টারের প্রধান গবেষক পিয়ার্স ফরস্টার বলেন, ‘এবারের আপডেট স্পষ্টভাবে দেখায়, আমরা প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ সূচকে ভুল পথে এগোচ্ছি।’
এদিকে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতার হারও উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। ২০১৯ সাল থেকে প্রতিবছর গড় পানির উচ্চতা বাড়ছে ৪.৩ মিমি হারে, যা ১৯০১ থেকে ২০১৮ সালের গড় হারের দ্বিগুণেরও বেশি। গত ১২৫ বছরে সমুদ্রের উচ্চতা বেড়েছে প্রায় ২৩ সেন্টিমিটার। পূর্ববর্তী গবেষণাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, ২০৫০ সালের মধ্যে আরও ২০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেলে বিশ্বের ১৩৬টি উপকূলীয় শহরে বছরে প্রায় ১ ট্রিলিয়ন ডলারের বন্যা ক্ষতি হতে পারে।
বিশ্বের শক্তির ভারসাম্য নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞানীরা। গত ২০ বছরে পৃথিবীর তথাকথিত শক্তি ভারসাম্যহীনতা দ্বিগুণ হয়েছে অর্থাৎ সৌরশক্তি যতটা গ্রহে প্রবেশ করছে, তার চেয়ে অনেক কম পরিমাণ তাপ মহাকাশে প্রতিফলিত হচ্ছে। এখন পর্যন্ত সমুদ্র এই তাপের ৯০ শতাংশ শোষণ করে চলেছে, তবে এভাবে কতদিন সমুদ্র এই ভার বহন করতে পারবে তা জানা নেই। ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের জলবায়ু বিশেষজ্ঞ জোয়েরি রোগেলজ জানান, আগামী তিন থেকে চার দশক উষ্ণতার সর্বোচ্চ শিখর হতে পারে। আমরা ইতোমধ্যেই সেই সংকটময় সময় পার করছি। এই গবেষণাটি মূলত আইপিসিসি-র অনুমোদিত পদ্ধতিতে পরিচালিত একটি অনানুষ্ঠানিক বৈজ্ঞানিক হালনাগাদ। এটি নভেম্বরের কপ-৩০ সম্মেলনের আগেই বিশ্বনেতাদের কাছে একটি জাগ্রতবার্তা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সাবেক আইপিসিসি সহ-সভাপতি ভ্যালেরি ম্যাসন-ডেলমোট বলেন, আমরা দ্রুত ১.৫ ডিগ্রি সীমা ছুঁয়ে ফেলব কিন্তু তারপর কী হবে, সেটি নির্ভর করছে আজ আমরা কী সিদ্ধান্ত নিই তার ওপর। যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা স্যার ডেভিড কিং বলেন, ‘এই রিপোর্ট স্পষ্ট করে দিচ্ছে আর দেরি করার কোনো সুযোগ নেই।’