ঢাকা রোববার, ২২ জুন ২০২৫, ৮ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ইসি থেকে এনআইডি সেবা সরালে আন্দোলন

ইসি থেকে এনআইডি সেবা সরালে আন্দোলন

জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সংক্রান্ত সেবা কার্যক্রম নির্বাচন কমিশনের অধীনে রাখতে আন্দোলনে যেতে পারেন এনআইডি অনুবিভাগের কর্মকর্তারা। নিজেদের দবি জানাতে গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনের দপ্তরের সামনে জড়ো হয়ে প্রতিবাদ জানায় নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

এনআইডি অনুবিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, এনআইডি সেবা নির্বাচন কমিশন থেকে সরিয়ে নেওয়ার যে পরিকল্পনা হচ্ছে তা রুখে দিতে আমাদের এ পদক্ষেপ। এতে যদি কাজ না হয় আমরা প্রথমে অর্ধবেলা কর্ম বিরতিতে যাব, এরপর পূর্ণ দিবস। তাতেও না হলে সারা দেশে নির্বাচন কমিশনের সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেব।

জানা যায়, জন্মনিবন্ধন, এনআইডি ও পাসপোর্ট সেবা নিয়ে দুর্ভোগ-জটিলতা নিরসনে স্বতন্ত্র কমিশন প্রতিষ্ঠায় ‘সিভিল রেজিস্ট্রেশন (কমিশন), ২০২৫’ নামে একটি অধ্যাদেশ করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এ নিয়ে স্থানীয় সরকার, সুরক্ষা সেবা বিভাগ, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগসহ সংশ্লিষ্টদের মতামতও গ্রহণ করছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। অতিরিক্ত সচিব পর্যায়ের এ বৈঠকে ইসি সচিবালয়ের প্রতিনিধিও উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া আইনের খসড়া পরীক্ষা-নিরীক্ষাপূর্বক মতামত প্রদান সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির প্রথম সভা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে নেয়ার জন্য আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যে আইন করা হয়েছিল, ক্ষমতার পালাবদলে আবার তা বাতিল চেয়ে চিঠি দেয় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়। তাদের দাবি অনুযায়ী আইনটি বাতিল হলে এনআইডি সেবা বরাবরের মতোই নির্বাচন কমিশনের হাতে থাকবে। এ প্রস্তাব অনুমোদনের পর সরকারকে এখন অধ্যাদেশ জারি করে আইনটি বাতিল ও আগের আইন বহাল করতে হবে।

এ ধারাবাহিকতায় সবশেষ গত ১৬ জানুয়ারি প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিন বলেছিলেন, জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা নিজেদের কাছে রাখতে নির্বাচন কমিশনের পাঠানো প্রস্তাব অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ। এটা সবচেয়ে দ্রুততম সময়ে উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

এরই মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনও ‘জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন সংস্থা’ নামে একটি স্বতন্ত্র স্বাধীন সংবিধিবদ্ধ সংস্থা গঠন করার বিষয়ে সুপারিশ করেছে সরকারের কাছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ?‘জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন (রহিতকরণ) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া প্রণয়ন সময়োপযোগী। তবে, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন এবং জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত কার্যক্রম নির্বাচন কমিশনের আওতাধীন না রেখে সম্পূর্ণ স্বাধীন, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিচালনা করা সমীচীন। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিকের জন্মনিবন্ধন সনদ, জন্মনিবন্ধন সনদের ভিত্তিতে এনআইডি এবং এনআইডির ভিত্তিতে পাসপোর্ট প্রাপ্তির প্রক্রিয়ায় অনাবশ্যক জটিলতা এবং জনদুর্ভোগ পরিহার করা আবশ্যক। এই উদ্দেশ্যে লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ এবং নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে প্রস্তাবিত অধ্যাদেশ পরিমার্জন করে উপস্থাপন করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে সিভিল রেজিস্ট্রেশনের পদ্ধতি ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো সুসংহত করতে একটি সংবিধিবদ্ধ, স্বাধীন কমিশন প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে আইন সংশোধন সমীচীন উল্লেখ করে সিভিল রেজিস্ট্রেশন (কমিশন), ২০২৫’ এর খসড়া নিয়ে মতামত নেওয়া হচ্ছে।

এদিকে বৃহস্পতিবার সিইসি এএমএম নাসির উদ্দিন বলেছেন, বারবার ইসি থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) কার্যক্রম সরকারের অধীন করার প্রক্রিয়া নেয়ার বিষয়টির পেছনে ‘কমিউনিকেশন গ্যাপ’ রয়েছে। আমাদের লিখিত মতামত পাওয়ার পর নিশ্চয় গ্যাপ থাকবে না আশা করি।

এনআইডি চলে গেলে ভোটার তালিকায় সমস্যা হবে কি-না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, হবে। এনআইডিটা ভোটার তালিকার বাই প্রোডাক্ট। এটা তো আগে ছিল না। আগে ভোটার কার্ড ছিল। আস্তে আস্তে যখন ডেভেলপ হলো তখন না এটা হলো- ১৭ বছর ধরে এখানে শ্রম, ঘাম দিয়েছে এখানকার লোকজন। এরাই তো ডেভেলপ করে এই পর্যন্ত এনেছেন। নিজেদের কাজের অতিরিক্ত কাজ হিসেবে এটা করেছেন। এটা তো একটা নেটওয়ার্ক সারা দেশে ডেভেলপ হয়েছে, এক্সপার্ট ডেভেলপ হয়েছে।

সিইসি বলেন, সার্বিক এই বিষয়গুলো নিশ্চয় সরকার বিবেচনায় নেবে বলে আমি বিশ্বাস করি। কমিউনিকেশনের একটা গ্যাপ থাকতে পারে হয়তো। আমাদের লিখিত মতামত পাওয়ার পর নিশ্চয় গ্যাপ থাকবে না। সরকার তো অনেক ওপরের ব্যাপার। আমরা সাংবিধানিক বডি। আইন যদি সরকার পরিবর্তন করে ফেলে আমাদের আইন মানতে হয়। কিন্তু আইন বানানোর প্রক্রিয়ার মধ্যে আমরা আমাদের মতামত জোরালোভাবে তুলে ধরবো। যেখানে যেখানে মতামত দেয়ার দরকার, দেব। আমাদের পুরো কমিশন এটা চায়।

সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়ে জোরালো পদক্ষেপ না নিলে কর্মবিরতিতে যাবেন কর্মকর্তারা, তাদের কী বলবেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, তাদের উদ্দেশ্যে বলব, আমি চূড়ান্ত সিদ্ধান্তগ্রহণকারী নই এটা বুঝতে হবে। আমি নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধিত্ব করি। আমি ইসির পক্ষে কথা বলতে পারি, ইসির পক্ষে সরকারের কাছে অবস্থান তৈরি করতে পারি। এই টুকু আমি জোরালোভাবেই করব।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, এনআইডি কার্যক্রম নির্বাচন কমিশন থেকে সরিয়ে নেয়া সরকারি সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে বলে আমি শুনিনি। আলাপ আলোচনা হয়েছে- কীভাবে হতে পারে সে আলোচনা হয়েছে। আমরা লিখিতভাবে সরকারকে জানাব, যে এটা ইসির অধীনে থাকা উচিত। জরুরিভিত্তিতে জানাব সরকারকে। আমরা জানলাম যখন আমাদের মিটিংয়ে ডাকা হয়েছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে তো জানি না, এখন কীভাবে বলব।

উপদেষ্টা পরিষদে সিদ্ধান্ত হয়েছে এটা থাকবে না, কোনো দুরভিসন্ধি আছে কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোনো দুরভিসন্ধি আছে কি না, আমি জানি না- সরকার হয়তো মনে করছে একটা জায়গা থেকে সার্ভিসটা দেবে। নির্বাচন কমিশনের অধীনেই সেটা হবে এমনটা শুনেছিলাম আমি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত