আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি ছাড়া জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের সংহতি ধরে রাখা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিভিন্ন ধর্মের বিশেষজ্ঞরা। গতকাল সকালে পর্যটন ভবনে কমিটি ফর অলটারনেটিভ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের (সিএডিএফ) আয়োজনে ‘সামাজিক সংহতি: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন তারা।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, সাম্প্রতিক সম্প্রীতির সব চাইতে বড় বাধা হলো অন্য ধর্মের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধাবোধ ও সহনশীলতার অভাব। ইতিহাসে মানুষ একত্র হয়েছে কিন্তু একে অন্যকে যখন সমান ভাবেনি, সমমর্যাদার মনে করেনি তখনই সমাজ ব্যর্থ হয়েছে। তারা আরও বলেন, সত্যিকারের একজন ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি, কখনওই অন্যের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে না। দুঃখজনকভাবে ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়কালেও সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায় বিভিন্নভাবে নিগৃহীত হচ্ছে। মব সৃষ্টি করে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের নিগৃহীত করার সংবাদ প্রকাশ পেয়েছে। ধর্মীয় বক্তারা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার প্রক্রিয়াতেও তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়নি। সংখ্যালঘুদের দীর্ঘদিনের দাবিসমূহ যেমন: অর্পিত সম্পত্তি, সংসদের সংরক্ষিত আসন ইত্যাদি বিষয়ে নতুন-পুরাতন রাজনৈতিক দলগুলোর কোনো সুস্পষ্ট অবস্থান দেখা যাচ্ছে না। ফিলিস্তিনে চলমান নির্বিচার হত্যাযজ্ঞের নিন্দা জানিয়ে তারা বলেন, যে কোনো ধর্মীয় সম্প্রদায়ের প্রতি নিপীড়ন অন্য ধর্মের সমাজকেও আক্রান্ত করে। বিচ্ছিন্নভাবে কোনো সমাজ শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারে না। অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজের জন্য অন্য ধর্মের আচার, উৎসব ও প্রথার প্রতি উদারতা প্রদর্শন করা জরুরি।
বক্তারা বলেন, নিজেদের ভেতরে ঐক্য না থাকলে দেশে-বিদেশের কুচক্রী মহল আমাদের দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে ফেলতে পারে। জাতীয় মুক্তি আর ত্যাগের অর্জনকে ধরে রাখতে জাতীয় ঐক্য বজায় রাখা এবং সামাজিক সংহতিকে সুদৃঢ়করণের কোনো বিকল্প নেই। এটি বর্তমানের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ, এখানে ধর্মীয় ঐক্য বিনষ্ট করা আর বিভেদ হানাহানি সৃষ্টির সব প্রচেষ্টা অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি প্রতীয়মান হচ্ছে। তারা বলেন, ৩৬ জুলাইয়ের বিপ্লব আমাদের জাতীয় জীবনের সামাজিক সংহতির এক অনন্য উদাহরণ। নতুন করে বাংলাদেশকে পৃথিবীর সামনে উপস্থাপন করেছে। দেশের তরুণ প্রজন্ম এর নেতৃত্ব দিলেও সব ধর্মের মানুষ ওইদিনগুলোতে একত্রিত হয়ে তাদের অকুণ্ঠ সমর্থন ও সংহতি প্রদর্শন করেছিল। আজও তারা একটি নতুন বাংলাদেশ গঠনের জন্য সোচ্চার রয়েছে। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা তপন চৌধুরী, হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মামুনুল হক, আর্চ বিশপ ক্যাথলিক বিজয় এন ডিক্রুজ, হিন্দু মহাজোটের গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক, বাংলাদেশ বুড্ডিস্ট ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ভিক্ষু সুনন্দ প্রিয় মহাথেরো প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া সভায় বিভিন্ন ধর্মের ধর্মীয় প্রধান, রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যম, জুলাই যোদ্ধা, ছাত্র ও তরুণ প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার প্রায় ২০০ জন দেশি-বিদেশি অতিথি উপস্থিত ছিলেন।