দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে সাফল্যের সঙ্গে একের পর এক অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ যোদ্ধারা। হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসসাম ব্রিগেডস গত রোববার জানিয়েছে, গাজাসিটির আল-তুফফাহ এলাকায় তাদের যোদ্ধারা অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক রকেট ‘ইয়াসিন-হান্ড্রেড-ফাইভ’ দিয়ে ইসরায়েলের একটি মারকাভা-ফোর ট্যাঙ্ককে আঘাত করেছেন। একই এলাকায় আলাদা অভিযানে একটি অ্যান্টি-পার্সোনেল এক্সপ্লোসিভ ডিভাইসের বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন তারা। এতে নিশ্চিতভাবে বেশ কয়েকজন সেনা নিহত কিংবা আহত হন বলে জানিয়েছে আল-কাসসাম। পাশাপাশি, প্যালিস্টিনিয়ান ইসলামিক জিহাদের সামরিক শাখা আল-কুদস ব্রিগেডস জানিয়েছে, আল-তুফফার পূর্বে ইসরায়েলি সেনাদের দখলে থাকা একটি বাড়িতে অবস্থিত সামরিক ব্যারাকে একটি গাইডেড মিসাইল নিক্ষেপ করেছেন তাদের যোদ্ধারা। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম হায়োম জানিয়েছে, দিন দিন যুদ্ধের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে হতাহত সেনাদের সংখ্যা। এই প্রেক্ষাপটে রিজার্ভ বাহিনীর আরও সদস্য গাজায় মোতায়েনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। ইয়েদিয়োথ আহরোনোথের সামরিক বিশ্লেষক ইয়োভ জেইতুন জানিয়েছেন, কম্ব্যাট ট্রুপসের ভয়াবহ ঘাটতির মধ্যে ‘অর্ডার সেভেনটি সেভেন’ সক্রিয় করছে ইসরায়েল। এই নির্দেশনা অনুযায়ী, নিয়মিত সেনারা তাদের বাধ্যতামূলক দায়িত্ব সম্পন্ন হওয়ার পর আরও চার মাস রিজার্ভ ডিউটি পালন করবেন। জেইতুন উল্লেখ করেন, প্রায় ১০ হাজার সেনার ঘাটতির মধ্যে এই নির্দেশনাকে অস্থায়ী সমাধান হিসেবে দেখা হচ্ছে। তিনি জানান, নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত অথবা নতুন আইন প্রণয়ন না হওয়া পর্যন্ত এই আদেশ কার্যকর থাকবে। এদিকে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সাবেক অপারেশন্স প্রধান রিজার্ভ মেজর জেনারেল ইসরায়েল জিভ স্বীকার করেছেন, গাজার পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘আমরা একটি বিপজ্জনক ফাঁদে পড়েছি।’ একইসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, হামাস ইসরায়েলের তুলনায় বেশি বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে অভিযান পরিচালনা করছে।
ইসরায়েলি বিমানঘাঁটিতে আবার হাইপারসনিক হামলা : ইয়েমেনের হুথি আনসার-আল্লাহর নেতৃত্বাধীন সশস্ত্র বাহিনী গত রোববার জানিয়েছে, দক্ষিণ ইসরায়েলের নাকাব অঞ্চলে অবস্থিত নেভাতিম বিমানঘাঁটিতে আরও একটি সফল হামলা চালিয়েছেন তারা। এতে হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক মিসাইল ব্যবহার করা হয়। বাহিনীর মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারি এক টেলিভিশন বিবৃতিতে নিশ্চিত করেন, সশস্ত্র বাহিনীর মিসাইল ফোর্সের চালানো এই হামলার উদ্দেশ্য সাফল্যের সঙ্গে অর্জিত হয়েছে। এটি ছিল ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ইসরায়েলি সামরিক অবস্থানগুলোতে আনসার-আল্লাহর দ্বিতীয় আঘাত। শনিবারও ‘প্যালেস্টাইন-টু’ হাইপারসনিক মিসাইল ব্যবহার করে নেভাতিমে হামলা করেন তারা। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে ব্যর্থ করে মিসাইলটি অভীষ্ঠ লক্ষ্যে আঘাত হানে বলে জানিয়েছিলেন ইয়াহিয়া সারি। রোববার হামলার পর সারি জানান, নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি গণহত্যার জবাবে তাদের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের নতুন ভাইস প্রেসিডেন্ট নিয়ে বিতর্ক : ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের নতুন ভাইস প্রেসিডেন্ট নিয়োগ নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হয়েছে ফিলিস্তিনের বিভিন্ন প্রতিরোধ আন্দোলন ও রাজনৈতিক সংগঠনের মধ্যে। মাহমুদ আব্বাস সম্প্রতি ফাতাহর সিনিয়র নেতা হুসেইন আল-শেখকে প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন বা পিএলওর ডেপুটি চেয়ারম্যান এবং প্যালেস্টিনিয়ান অথরিটি বা পিএর ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেন। তার এই নিয়োগের তীব্র নিন্দা জানিয়ে রোববার বিবৃতি দিয়েছে হামাস। বিবৃতিতে একে ‘বিদেশি চাপের কাছে নতিস্বীকার’ এবং জাতীয় ঐক্য উপেক্ষা করে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের একচেটিয়া মনোভাব বলে আখ্যায়িত করা হয়। হামাস বলেছে, ‘আল-শেখের নিয়োগ ফিলিস্তিনের জাতীয় স্বার্থের জন্য নয়, বরং এটি রাজনৈতিক বিভাজন আরও গভীর করবে।’ বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এটি পিএলও এবং পিএর কিছু প্রভাবশালী নেতার গোঁড়ামি এবং ফিলিস্তিনের প্রতিষ্ঠানগুলোকে কার্যত অকার্যকর করে দেওয়ার নিরলস প্রচেষ্টারই অংশ।’ বিবৃতিতে হামাস সব ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীকে এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করার আহ্বান জানিয়ে বলেছে, কোনো বিদেশি হস্তক্ষেপ ছাড়াই পিএলওকে জাতীয় ও গণতান্ত্রিক ভিত্তিতে পুনর্গঠন করতে হবে। হামাসের মতে, ‘এই পরিস্থিতিতে ফিলিস্তিনি নেতৃত্বের উচিত ছিল, ইসরায়েলি আগ্রাসন ও গণহত্যা বন্ধে এবং দখলদারিত্ব ও বসতি স্থাপনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধে মনোনিবেশ করা।’ এর আগে, মাহমুদ আব্বাস গত বৃহস্পতিবার হুসেইন আল-শেখকে তার ডেপুটি হিসেবে নিয়োগ দেন। গত শনিবার পিএলও’র নির্বাহী কমিটি ও কেন্দ্রীয় পরিষদ তার এই সিদ্ধান্ত অনুমোদন করে। এর ফলে হুসেইন আল-শেখ এখন ফিলিস্তিনি সংস্থাটিতে আব্বাসের ঠিক পরের সর্বোচ্চ পদে অধিষ্ঠিত হলেন। তবে মূল প্রতিরোধ সংগঠনগুলোর মধ্যে বিশেষ করে হামাস ও ইসলামিক জিহাদ এই নিয়োগের কঠোর বিরোধিতা করছে। তারা আগেই পিএলও’র কেন্দ্রীয় পরিষদের বৈঠক বর্জন করেছিলেন। আগে থেকেই ইসরায়েলের প্রতি মাহমুদ আব্বাসের আপসমূলক নীতির বিরোধিতা করে আসছেন তারা।