একটি ভালো বই হাজারো বন্ধুর সমান-এ উপলব্ধি থেকেই প্রতি বছর ২৩ এপ্রিল পালিত হয় বিশ্ব বই ও কপিরাইট দিবস। বই শুধু জ্ঞানের উৎসই নয়, এটি মানসিক শান্তি, সৃজনশীলতা ও আত্মোন্নয়নেরও সহায়ক। আজকের ডিজিটাল যুগেও বইয়ের গুরুত্ব কমেনি; বরং এর উপকারিতা আরও বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। চলুন জেনে নিই নিয়মিত বই পড়ার কয়েকটি গুণের কথা। লিখেছেন আনিসুল ইসলাম নাঈম।
মস্তিষ্কের সক্রিয়তা ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি : বই পড়া মস্তিষ্কের জন্য এক ধরনের ব্যায়াম। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত পড়ালেখা করলে মস্তিষ্কের কোষগুলোর মধ্যে নতুন সংযোগ তৈরি হয়, যা স্মৃতিশক্তি ও বিশ্লেষণী ক্ষমতা বাড়ায়। আলঝেইমার ও ডিমেনশিয়ার মতো রোগের ঝুঁকিও কমে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, ‘বই হল মানুষের সর্বশ্রেষ্ঠ বন্ধু, যে কখনও প্রতারণা করে না।’ ‘একটি ভালো বই হৃদয়ের জানালা খুলে দেয়, নতুন আলো ঢুকতে দেয়।’
ভাষাগত দক্ষতা ও যোগাযোগের উন্নতি : বই পড়ার মাধ্যমে শব্দভাণ্ডার সমৃদ্ধ হয়, বাক্য গঠনের দক্ষতা বাড়ে এবং প্রকাশভঙ্গি পরিশীলিত হয়। এটি শিশু থেকে বৃদ্ধ সবার জন্য সমান উপকারী। যারা নিয়মিত বই পড়েন, তাদের কথোপকথন ও লেখালেখির দক্ষতা অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি হয়। কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন, ‘বই মানুষের মনের ক্ষুধা মেটায়, জ্ঞানের প্রদীপ জ্বালায়। যে জাতি বই পড়ে না, সে জাতি অন্ধকারে হাঁটে।’
মানসিক চাপ ও অবসাদ দূরীকরণ : বই পড়া এক ধরনের ধ্যান। মনোবিজ্ঞানীদের মতে, মাত্র ৬ মিনিট বই পড়লে মানসিক চাপ প্রায় ৬৮ শতাংশ কমে যায়। গল্প বা কবিতার মধ্যে হারিয়ে গেলে উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তা দূর হয়, যা মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়ক। কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত বলেছেন, ‘বই ছাড়া জীবন পথহারা পথিকের মতো অন্ধকারে ঠিকানা খোঁজে।’
জ্ঞানের পরিধি ও সৃজনশীলতা বৃদ্ধি : বই আমাদের অজানা বিশ্বের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। ইতিহাস, বিজ্ঞান, দর্শন, সাহিত্য- বিভিন্ন বিষয়ের বই পড়ে আমরা নতুন ধারণা পাই, যা চিন্তার দিগন্তকে প্রসারিত করে। সৃজনশীল কাজে অনুপ্রেরণা দিতেও বইয়ের ভূমিকা অপরিসীম। কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘বই পড়া মানে নতুন চোখে পৃথিবী দেখা।’