গত কয়েকদিন ধরে দেশের বিভিন্ন এলাকার উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ। গরমের কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে উঠেছে। ঘরে বাইরে কোথাও স্বস্তি নেই। এর মধ্যে গতকাল রোববার দুপুরের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হয়েছে। তাতে কিছুটা হলেও স্বস্তি মিলেছে। তবে রাজধানী ঢাকায় এখনও বৃষ্টির দেখা মেলেনি।
জানা গেছে, গতকাল দুপুরের পর জামালপুর, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বৃষ্টি হয়েছে। ময়মনসিংহে কালবৈশাখি ঝড়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এদিকে, শনিবারের (১০ মে) তুলনায় গতকাল তাপমাত্রা কিছুটা কমেছে। গতকাল ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৯.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গায় রেকর্ড করা হয়েছে ৪১.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শনিবার চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয় চুয়াডাঙ্গায়। ঢাকায় রেকর্ড করা হয় ৪০.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা বছরের সর্বোচ্চ।
অন্যদিকে, সোমবার (১২ মে) কয়েকটি জায়গায় বৃষ্টিপাত হওয়ার পূর্বাভাস রয়েছে। যার প্রভাবে সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা ১-৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে। এ সময়ে চলমান তাপপ্রবাহ সারা দেশের কিছু কিছু জায়গায় থেকে প্রশমিত হতে পারে। তীব্র দাবদাহে অতিষ্ঠ রাজধানীবাসী। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, সূর্যের অবস্থানের কারণেই রাজধানীসহ সারা দেশে অধিক তাপমাত্রা বিরাজ করছে। তবে আগামীকাল মঙ্গলবার দেশজুড়ে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
গতকাল রোববার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে রাস্তায় মানুষের চলাচল তুলনামূলক কম। কাজের জন্য বাইরে বেরিয়েছেন, তাদের চোখেমুখে অস্বস্তি আর ক্লান্তির ছাপ।
রাজধানীতে চলছে তীব্র তাপদাহ। গত শনিবার ঢাকায় সর্বোচ্চ ৪০ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের পর রোববার ও সকাল থেকে তীব্র গরম অনুভূত হয়।
পথচারীরা জানান, হুট করেই গরম বেড়ে গেছে। এখন আর সহনীয় পর্যায়ে নেই। পেটের দায়ে ঘর ছেড়ে বের হতে হলেও বেশি সময় বাইরে থাকা যাচ্ছে। অল্প সময়ের মধ্যে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে লোকজন।
পথচারী সোহাগ জানান, তার কাজই বাইরে ঘুরে ঘুরে করতে হয়। এ তীব্র রোদে কাজ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে যাচ্ছে। বারবার পানি শূন্যতা অনুভব করছি।
এদিকে, একটু ছায়া পেলেই করছেন জিরিয়ে নেয়ার চেষ্টায় পথচারীরা কিংবা ভিড় করছেন ফুটপাতের পানীয়ের দোকানে।
আবহাওয়া অফিস বলছে, মঙ্গলবার দেশজুড়ে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এতেই কমবে গরমের তীব্রতা। এছাড়া সোমবার দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনার কথাও জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।
আবহাওয়াবিদ ড. মো. ওমর ফারুক বলেন, তীব্র তাপদাহ চলছে। সূর্য এখন বাংলাদেশের ওপর সরাসরি কিরণ দিচ্ছে। তাই বলা যায়, সূর্যের অবস্থানের কারণেই তাপমাত্রা বেশি। সোমবার দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া মঙ্গলবার থেকে সারা দেশে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। যা চলবে ২০ মে পর্যন্ত। তাপমাত্রা কমতে হলে বৃষ্টিপাত হতে হবে। কালবৈশাখি ঝড়েরও আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’ ২৪ থেকে ২৬ মের মধ্যে আঘাত হানতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’ ২৪ থেকে ২৬ মে’র মধ্যে স্থলভাগে আঘাত হানতে পারে। সম্ভাব্য আঘাতের এলাকা ভারতের ওড়িশা উপকূল থেকে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম উপকূল পর্যন্ত বিস্তৃত। তবে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের খুলনা বিভাগ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ উপকূল। মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহে সাগরে প্রতিকূল পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, ওই সময়ের মধ্যে একটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হতে পারে, এমনটা জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ।
তিনি বলেছেন, ঘূর্ণিঝড়টির সম্ভাব্য নাম ‘শক্তি’। এটি শ্রীলংকার প্রস্তাবিত নাম। গতকাল রোববার আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ তার ফেসবুক প্রোফাইলে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে এ তথ্য জানিয়েছেন। এখনো ঘূর্ণিঝড়টি তৈরি হয়নি। তবে বঙ্গোপসাগরে যে পরিবেশ তৈরি হচ্ছে, তা ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির জন্য অনুকূল বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ।
তিনি বলেন, পরিস্থিতি যেমন যাচ্ছে, এতে করে ঘূর্ণিঝড় তৈরি হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। তাই সবাইকে আগাম সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানানো হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গায় কয়েকদিন ধরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে রাজধানী ঢাকায়ও। শনিবার চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয় চুয়াডাঙ্গায়। ঢাকায় রেকর্ড করা হয় ৪০.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা বছরের সর্বোচ্চ।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গত সোমবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দুএক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো-বৃষ্টি-বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা ১-৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা ১-২ ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস পেতে পারে। এই সময়ে চলমান তাপপ্রবাহ কিছু কিছু জায়গায় প্রশমিত হতে পারে।
রোববারও চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তবে তা গত শনিবারের তুলনায় কিছুটা কম। ঢাকায়ও রোববার তাপমাত্রা কিছুটা কমেছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেসা এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, রোবাবর ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৯.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গায় রেকর্ড করা হয়েছে ৪১.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সোমবার তাপমাত্রা আরও কমবে জানিয়ে তিনি বলেন, কোথাও কোথাও গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হতে পারে। ঢাকায় বৃষ্টি না হলেও আকাশ মেঘলা থাকতে পারে।
ঢাকায় বৃষ্টি : গত কয়েকদিন ধরে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে রাজধানী ঢাকায়। ঘরে-বাইরে কোথাও স্বস্তি মিলছে না। তবে গতকাল রোববার রাত সাড়ে ৮টায় রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় বৃষ্টির খবর পাওয়া গেছে। এতে জনজীবনে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরেছে। এদিন, সন্ধ্যার পরই বিভিন্ন এলাকায় ঝড়ো বাতাস বয়ে যায়। বাতাসে ঠান্ডা অনুভূতি থাকায় তখন থেকেই স্বস্তি মিলতে থাকে। তবে বৃষ্টি শুরুর আগে বজ্রপাত হয়।