ঢাকা শনিবার, ২১ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

সুসংবাদ প্রতিদিন

ফুলছড়ির হাটে মাসে বিক্রি হয় ২০ কোটি টাকার লাল মরিচ

কৃষিতে ঘুরছে অর্থনীতির চাকা
ফুলছড়ির হাটে মাসে বিক্রি হয় ২০ কোটি টাকার লাল মরিচ

ব্রহ্মপুত্র নদের কোলঘেঁষে, গাইবান্ধা জেলার পুরাতন ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদের পাশেই লাল টুকটুকে মরিচে সাজানো দৃষ্টি নন্দন বিশাল মরিচের হাট। শনিবার ও মঙ্গলবার হাট, আগের রাত থেকেই চরের মরিচ চাষিরা হাটে আসতে শুরু করে মরিচের বহর নিয়ে। নৌকা এবং ঘোড়ার গাড়িতে করে ফুলছড়ি উপজেলার টেংরাকান্দি, মোল্লারচর, খোলাবাড়ি, ফজলুপুর, এরেন্ডবাড়ি, উড়িয়া, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চরাঞ্চল এবং জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জের বকশিগঞ্জের কয়েকটি চর থেকে মরিচ বিক্রি করতে আসেন কৃষক ও পাইকাররা। এরপর শুরু হয় বেচাকেনার হাঁকডাক।

বেলা বাড়ার সঙ্গে বেড়ে যায় ক্রেতা-বিক্রেতার ছোটাছুটি ও ব্যস্ততা। সেখান থেকে বস্তাবোঝাই হয়ে তা উঠে ট্রাক ও ভটভটির ওপর। চলে যায় দেশের বিভিন্ন জেলায়। গাইবান্ধা জেলার সব চরে মরিচের ব্যাপক চাষ হলেও ফুলছড়ি উপজেলার চরে মরিচের চাষ অনেক বেশি। নদীর ওপারের দেওয়ানগঞ্জ জামালপুরের চরের নদী পথে যোগাযোগ ভালো হওয়ায় দেশের বৃহত্তর লাল শুকনো মরিচের হাট গাইবান্ধার ফুলছড়ি হাট। গজারিয়া ইউনিয়নে ব্রহ্মপুত্র সংলগ্ন হাটে বিভিন্ন চর থেকে প্রচুর মরিচ আসে। এই অঞ্চলে ফুলছড়ি হাট মরিচের বাজার হিসেবে বেশ প্রসিদ্ধ। প্রতি হাটে ২ কোটি টাকার মরিচ কেনাবেচা হয়। লাল রঙের মরিচে রঙিন হয়ে ওঠে এই হাট। গাইবান্ধা সদর, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চরাঞ্চল এবং জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জের কয়েকটি চর থেকে কৃষকরা মরিচ বিক্রি করতে আসেন। গাইবান্ধার লাল মরিচ বা শুকনো মরিচের কদর রয়েছে দেশব্যাপী। ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও যমুনা নদীবেষ্টিত জেলার চার উপজেলার চর-দ্বীপচরের শত শত বিঘা জমিতে মরিচের ব্যাপক ফলন হয়ে থাকে। সাধারণত বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পরই চরের পলি মাটিতে বীজ ছিটিয়ে দুই-তিনবার নিড়ানি দিলেই বিনা সারে বিস্তর ফলন হয় মরিচের। মাটির গুণাগুণ ও আবহাওয়ার কারণে চরাঞ্চলের মরিচের রং সুন্দর ও আকার বড় হয়। এ কারণে বগুড়া, নওগাঁ, রংপুরসহ বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা ফুলছড়ি হাটে মরিচ কিনতে আসেন। তবে বেশি মরিচ কেনেন ভোগ্যপণ্য উৎপাদনকারী কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা। জেলা প্রতিনিধি জানান প্রতিহাটে প্রায় ২ হাজার মণের বেশি শুকনো মরিচ বিক্রি হয়। প্রান্তিক কৃষকরা জানান, প্রতি মণ মরিচ ৯০০০ টাকা থেকে ৯৮০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে যা গত বছরের চেয়ে ৪-৫ হাজার টাকা কম। তারা আরও জানান এবারে বিঘাপ্রতি ১০-১২ মণ মরিচ (শুকানোর পর) উৎপাদন করতে পেরেছেন। এই হাটে আসা বগুড়া, দিনাজপুর, নওগাঁ, সান্তাহার থেকে আসা কয়েকজন পাইকার অভিযোগ করেন এই হাটে নিরাপত্তা ব্যবস্থা যথেষ্ট নয়, ওয়াশ রুম সমস্যা, রাতে এসে আবাসিক ব্যবস্থা না থাকায় তাদের থাকতে সমস্যায় পড়তে হয়। এ সমস্যাগুলো সমাধান করলে গাইবান্ধার ফুলছড়ি এই ঐতিহ্যবাহী মরিচের এই হাটে আরও দেশের দূর-দূরান্ত থেকে পাইকাররা আসতে উৎসাহিত হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত