ঢাকা শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

রোহিঙ্গাদের সাগরে ফেলা নিয়ে শুনলেন না ভারতের আদালত

রোহিঙ্গাদের সাগরে ফেলা নিয়ে শুনলেন না ভারতের আদালত

ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে বসবাসকারী ৪৩ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে জবরদস্তি মিয়ানমারের কাছে সমুদ্রে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার সংক্রান্ত হাইকমিশনের অফিস (ওএইচসিএইচআর) ১৫ মে এক বিজ্ঞপ্তিতে এমন তথ্য জানিয়েছে। এ নিয়ে ভারতের সুপ্রিমকোর্টে একটি আবেদন করা হয়েছে। তবে ভারতের সুপ্রিমকোর্ট এই আবেদনকে বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে করছেন না। এ সংক্রান্ত এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিস্ময় প্রকাশ করে ভারতের সর্বোচ্চ আদালত নানা প্রশ্ন উত্থাপন করে বলেছেন, আবেদন মেনে অন্তর্বর্তী নির্দেশ দেওয়া সম্ভব নয়। বিচারপতি সূর্যকান্ত ও বিচারপতি এন কোটিশ্বর সিং জরুরি শুনানির আবেদন নাকচ করে গতকাল শুক্রবার বলেছেন, সুপ্রিমকোর্টের যে বেঞ্চ রোহিঙ্গা সংক্রান্ত মামলা শুনছে এবং যার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য হয়েছে ৩১ জুলাই, সেখানেই এই আবেদন করতে হবে। বিচারপতি সুর্যকান্ত ও বিচারপতি এন কোটিশ্বর সিং বলেন, আবেদন ভাসা-ভাসা। তার সমর্থনে কোনো যুক্তিগ্রাহ্য তথ্যপ্রমাণও নেই। যে ধরনের অভিযোগ করা হয়েছে, তার সমর্থনে গ্রহণযোগ্য কোনো তথ্য প্রমাণও দাখিল করা হয়নি। আবেদনকারীর উদ্দেশে বিচারপতিরা বলেন, দেশ যখন এক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তখনই আপনারা এই ধরনের বিষয়ের অবতারণা করছেন। রোহিঙ্গাদের জবরদস্তি বিতাড়ন এবং মাঝ সমুদ্রে তাদের নামিয়ে দেওয়ার অভিযোগে জরুরি ভিত্তিতে এই রিট আবেদন শোনার আরজি জানিয়েছিলেন প্রবীণ মানবাধিকার আইনজীবী কলিন গনসালভেস। তিনি আদালতকে জানান, জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছে। জবাবে বিচারপতিরা বলেন, আবেদনে যেসব ফোনকলের কথা বলা হয়েছে, সেগুলো যাচাই করাই হয়নি। এর আগে এমন ঘটনাও আদালতের নজরে এসেছে যে, ঝাড়খন্ডের জামতাড়া থেকে ফোন করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডার নম্বর ব্যবহার করে। এখানে কি যাচাই করা হয়েছে যে, ওইসব ফোনকল মিয়ানমার থেকেই করা হয়েছে? সর্বোচ্চ আদালতের বিচারপতিরা আবেদনকারীর উদ্দেশে বলেন, অভিযোগগুলো স্রেফ অভিযোগ হয়েই রয়েছে। উপযুক্ত প্রমাণ ছাড়া এ ক্ষেত্রে আগের বৃহত্তর বেঞ্চের দেওয়া রায় নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারি না। তারা বলেন, উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে এই আবেদন চমৎকার ভাষায় রচিত এক গল্পগাঁথা ছাড়া আর কিছু নয়। সলিসিটর জেনারেল ও অ্যাটর্নি জেনারেলকে এই আবেদনের কপি পেশের নির্দেশ দিয়ে ডিভিশন বেঞ্চ জানান, ৩১ জুলাই এই আবেদন তিন সদস্যের বৃহত্তর বেঞ্চে শোনা হবে। ওএইচসিএইচআরের বিজ্ঞপ্তির উল্লেখ করে গত শুক্রবার সুপ্রিমকোর্টে দাখিল করা এই আবেদনে বলা হয়, নয়াদিল্লিতে শরণার্থী হিসেবে বাস করা ৪৩ জন রোহিঙ্গাকে বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহের কথা বলে গত ৬ মে এক স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তারপর ৮ মে তাদের আন্দামানে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে নৌবাহিনীর জাহাজে তাদের মিয়ানমারের আন্তর্জাতিক জলসীমানায় নিয়ে গিয়ে লাইফ জ্যাকেট পরিয়ে জবরদস্তি সমুদ্রে নামিয়ে দেওয়া হয়। আবেদনে বলা হয়, এর আগে শরণার্থীদের জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তারা মিয়ানমার না ইন্দোনেশিয়া কোথায় যেতে চান। এই রোহিঙ্গারা জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরএ নিবন্ধিত ছিলেন। তারা ইন্দোনেশিয়ায় যেতে চাইলেও ১২ ঘণ্টা সমুদ্র সাঁতরে পাড়ে ওঠার পর তারা বোঝেন, যে অঞ্চলে তারা পৌঁছেছেন, তা মিয়ানমারের তানিনথারি এলাকা। আবেদনে বলা হয়, ইউএনএইচসিআর ১৫ মে এই বিষয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছিল। তারা বিষয়টি তদন্ত করছে। তা শুনে বিচারপতি সূর্যকান্ত সেই তদন্ত প্রতিবেদন পেশ করার নির্দেশ দিয়ে বলেন, এসব মানুষ দেশের বাইরে থেকে ভারতের সার্বভৌমত্ব চ্যালেঞ্জ করতে পারেন না। আইনজীবী গনসালভেস রোহিঙ্গা বিতাড়নে স্থগিতাদেশ চেয়ে অন্তর্বর্তী নির্দেশ দিতে অনুরোধ করলে ডিভিশন বেঞ্চ তা অস্বীকার করেন। ভারত সরকার ১৯৫১ সালের শরণার্থী কনভেনশন বা ১৯৬৭ সালের প্রটোকল সই করেনি। ওএইচসিএইচআরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত সপ্তাহে ভারতীয় নৌবাহিনীর একটি জাহাজ থেকে আন্দামান সাগরে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নামিয়ে দেওয়ার বিশ্বাসযোগ্য প্রতিবেদন সামনে আসার পর জাতিসংঘের একজন বিশেষজ্ঞ এ ঘটনাকে ‘অমানবিক ও অগ্রহণযোগ্য’ উল্লেখ করে তদন্ত শুরু করেছেন। একই সঙ্গে তিনি ভারত সরকারকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রতি নিষ্ঠুর ও প্রাণঘাতী আচরণ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন, বিশেষ করে তাদের মিয়ানমারের বিপজ্জনক অবস্থায় ফেরত পাঠানোর বিষয়ে। মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতিবিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ র‍্যাপোর্টিয়ার টম অ্যান্ড্রুজ বলেন, ‘রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নৌবাহিনীর জাহাজ থেকে সমুদ্রে ফেলে দেওয়া হয়েছে- এই ধারণা একেবারেই ভয়াবহ ও অগ্রহণযোগ্য। আমি এসব ঘটনার বিষয়ে আরও তথ্য ও সাক্ষ্য সংগ্রহ করছি এবং ভারত সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি, এসব ঘটনার পূর্ণ বিবরণ প্রকাশ করুন।’ অ্যান্ড্রুজ বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিরুদ্ধে যেসব অমানবিক কাজ হয়েছে, ভারত সরকারকে অবশ্যই তাৎক্ষণিক ও স্পষ্টভাবে এর নিন্দা জানাতে হবে। জাতিসংঘের বিশেষ র‍্যাপোর্টিয়ার আরও বলেন, ভারতকে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফেরত পাঠানো পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে এবং আন্তর্জাতিক দায়বদ্ধতার যেসব স্পষ্ট লঙ্ঘন ঘটেছে, তার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত