অর্ধশতাব্দী পর পৃথিবীতে ফিরেছে সোভিয়েত মহাকাশযান ‘কসমস-৪৮২’এর ধ্বংসাবশেষ। তবে সেটি সত্যিই পৃথিবীর মাটিতে এসে পড়েছে, নাকি আকাশেই পুড়ে গেছে- তা এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি কোনো আন্তর্জাতিক মহাকাশ সংস্থা। এমনকি এটি কোন দিক দিয়ে বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করেছে তাও শনাক্ত করা যায়নি। ১৯৭২ সালে শুক্র গ্রহের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের কসমস-৪৮২। কিন্তু উৎক্ষেপণের পরপরই প্রযুক্তিগত গোলযোগে সেটি কক্ষপথ ছেড়ে বের হতে পারেনি। মহাকাশযানটি ভেঙে যায় চারটি ভাগে, আর সেই ভাঙা অংশগুলো ৫৩ বছর ধরে পৃথিবীর চারপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছিল।
সম্প্রতি ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা জানায়, এই চারটি টুকরোর মধ্যে একটি সম্ভবত ‘ল্যান্ডার’ অংশটি- গত শনিবার সকাল ৬টা ১৬ মিনিটে জিএমটি (বাংলাদেশ সময় ৭টা ১৬ মিনিট) পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ঢুকে পড়ে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পৃথিবীর ৭০ শতাংশই যেহেতু সমুদ্র দিয়ে ঢাকা, তাই কসমস-৪৮২ সেটি যদি পৃথিবীতেও এসে থাকে, তবুও মানুষের ক্ষতির সম্ভাবনা খুব কম। ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার বিশ্লেষক স্টেইন লেমেন্স এ বিষয়ে একটু রসিকতার সুরেই বলেন, ‘এই টুকরো মহাকাশ ধ্বংসাবশেষের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার চেয়ে লটারি জেতার সম্ভাবনাই বেশি।’
কসমস-৪৮২ এর ল্যান্ডারটি বানানো হয়েছিল শুক্র গ্রহের ভয়াবহ তাপ ও চাপ সহ্য করার উপযোগী করে। ফলে এতে ছিল শক্তিশালী তাপরোধক ঢাল এবং এমন কাঠামো যা ভয়ংকর পরিবেশেও অক্ষত থাকতে পারে। সে কারণেই বিশেষজ্ঞদের ধারণা, বায়ুমণ্ডলের ভেতর দিয়ে ঢোকার সময় এটি পুরোপুরি পুড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে আরেকটি বিষয় হলো- ল্যান্ডারটিতে যে প্যারাস্যুট থাকার কথা ছিল, সেটা মহাকাশে ৫০ বছরের বেশি সময় থাকার ফলে কাজ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ফলে এটি যদি মাটিতে এসে থাকে, তাহলে তা পড়েছে সম্পূর্ণ গতিতে- কোনো নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই। লেমেন্স জানান, মহাকাশের তৈরি বড় যন্ত্রপাতির পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ঢোকা এখন প্রায় নিয়মিত ঘটনা। ছোটখাটো বস্তু প্রতিদিনই ঢুকে পড়ে, আর বড়গুলো সপ্তাহে একবারের মতো। কিন্তু প্রায় সবই পুড়ে যায় আকাশেই। তিনি মনে করিয়ে দেন, ২০২২ সালে চীনের লং মার্চ ৫বি রকেট ভারত মহাসাগরের উপর দিয়ে পৃথিবীতে প্রবেশ করেছিল, আর ২০১৮ সালে তিয়াংগং-১ স্পেস স্টেশন প্রায় পুরোপুরি পুড়ে গিয়েছিল প্রশান্ত মহাসাগরের আকাশে। এই মুহূর্তে কসমস-৪৮২ এর বাকি অংশগুলো কোথায় আছে, কীভাবে চলছে তা নজরে রাখছে আন্তর্জাতিক মহাকাশ সংস্থাগুলো। সবশেষে লেমেন্স বলেন, ভবিষ্যতের মহাকাশযান এমনভাবে বানানো উচিত যেন তারা নিজেরাই কক্ষপথ থেকে সরে গিয়ে নিরাপদ ও নিয়ন্ত্রিতভাবে পৃথিবীতে নামতে পারে। এতে পুনঃপ্রবেশের স্থান ও সময় আগে থেকেই জানা যাবে, ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি কমবে।